

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি বেশ গুরুত্বপূর্ণই ছিল। বলে কয়ে হারানো দলটা হঠাৎই বদলে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের সামনেই পড়ে টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত এই চ্যালেঞ্জ রূপ নিয়েছে দারুণ উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে। নাটকীয়তায় মোড়ানো চাপ সামলে অবশ্য ৩ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। আর এতে টিকে থাকলো সেমিফাইনালের স্বপ্ন।
ব্রিজবেনের গ্যাবায় টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত সাকিব আল হাসানের। শান্তর ৫৫ বলে ৭১ রানে বাংলাদেশ পেলো ৭ উইকেটে ১৫০ রানের সংগ্রহ। আফিফ হোসেন করেন ১৯ বলে ২৯। জবাবে ৬৯ রানে ৫ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিল শন উইলিয়ামস ও রায়ান বার্ল।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি, বৃথা গেল উইলিয়ামসের ৬৪ রানের ইনিংস। ৮ উইকেটে ১৪৭ রানে থামতে হয় তাদের। বাংলাদেশকে জেতানোর পথে বল হাতে বড় অবদান তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তাসকিন-মুস্তাফিজের সামনে শুরুতেই বিপাকে জিম্বাবুয়ে। দুই ওপেনার ওয়েস্লে মাধেভেরে (৪) ও ক্রেইগ আরভিন (৮) দুজনকেই ফেরান তাসকিন।
পরে উইকেট শিকারে যোগ দেন মুস্তাফিজও। তার করা ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারে শিকার দুই উইকেটে। মিল্টন শুম্বার (৮) সাথে জিম্বাবুয়ের মূল ভরসা সিকান্দার রাজাকে কোন রান করার আগেই সাঝঘরের পথ দেখান। ৩৫ রানে ৪ উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের।
এরপর ৩৪ রানের জুটি শন উইলিয়ামস ও রেগিস চাকাভার। আরেক দফা আক্রমণে এসে চাকাভাকে (১৯ বলে ১৫) ফিরিয়ে এই জুটিও ভাঙেন তাসকিন।
তবুও জিম্বাবুয়ের আশার আলো হয়েছিলেন উইলিয়ামস ও রায়ান বার্ল। শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৫৬ রান। শেষ ৩ ওভারে যা দাঁড়ায় ৪০।
হাসান মাহমুদের করা ১৮তম ওভারে উইলিয়ামস ছুঁয়েছেন ৩৭ বলে ফিফটি। পূর্ণ হয় বার্লের সাথে জুটির ফিফটিও। শেষ ২ ওভারের সমীকরণ ২৬!
১৯তম ওভারের প্রথম ৩ বলে আসে ৭ রান। চতুর্থ বলে সাকিবের সরাসরি থ্রোতে রান আউট উইলিয়ামস। ৪২ বলে ৮ চারে নামের পাশে ৬৪ রান এই বাঁহাতির।
শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণ আর মেলাতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। মাঝে ছক্কা হাঁকিয়ে রোমাঞ্চ বাড়িয়েছেন এনগারাভা। যা আরও বাড়ে শেষ বলে মোসাদ্দেক নো দিলে। তবে এতেও লাভ হয়নি, জিম্বাবুয়েকে হারতে হয়েছে ৩ রানে। বার্ল অপরাজিত ২৫ বলে ২৭ রানে।
৪ ওভারে ১৯ রান খরচায় ৩ উইকেট ম্যাচসেরা তাসকিনের। ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট মুস্তাফিজের।
আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে টাইগারদের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম জানিয়েছেন শান্তর সাথে সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটিতে তিনি সন্তুষ্ট। তবে আজ জুটি টিকেনি ২ ওভারও।
ইনিংসের প্রথম ওভারের চার মেরে শুরু শান্তর। ব্লেসিং মুজারাবানির করা পরের ওভারও শুরু চারে। কিন্তু ঐ ওভারেই রানের খাতা খোলার আগে ফেরেন সৌম্য (২ বলে ০)।
১০ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর শান্ত ও লিটন দাসের ব্যাটে পথ খুঁজে নিতে পারতো বাংলাদেশ। তবে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই মুজারাবানি ফেরান লিটনকে (১২ বলে ১৪)।
স্কুপ খেলতে চেয়ে টাইমিং গড়মিলে ক্যাচ দেন শর্ট থার্ডম্যানে। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৩২।
সেখান থেকে সাকিবকে নিয়ে দলকে টেনে নেন শান্ত। ১০ ওভার শেষে রান ২ উইকেটে ৬৩।
সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে রান তোলার গতি। ১২তম ওভারেই পূর্ণ হয় জুটির ফিফটি (৩৭ বলে)। তবে শান্তকে রেখে শন উইলিয়ামসের করা পরের ওভারেই ফেরেন সাকিব (২০ বলে ২৩)।
তবে এক পাশ আগলে রেখে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন শান্ত। যে পথে বল খেলেছেন ৪৫ টি।
ব্র্যাড ইভানসের করা ১৬তম ওভারে শান্তর ব্যাটেই আসে ইনিংসের প্রথম ছক্কা। ঐ ওভারে তার ব্যাটে আরও ২ চার।
রাজার শিকার হয়ে অবশ্য ফিরেছেন পরের ওভারে। ততক্ষণে নামের পাশে ৫৫ বলে ৭ চার ১ ছক্কায় ৭১ রান। ফিফটির পর ২১ রান করেছেন মাত্র ১০ বলে।
শেষদিকে জীবন পেয়ে দলের সংগ্রহ বাড়াতে ভূমিকা আফিফের ১৯ বলে ২৯ রানের। বেশ এলোমেলো আর বাজে ফিল্ডিং করেছে এ দিন জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ দুইটি করে উইকেট এনগারাভা ও মুজারাবানির।