

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে রাইলি রুশোর সেঞ্চুরি আর কুইন্টন ডি ককের ফিফটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে সৌম্য সরকারের ব্যাটে দারুণ শুরু পেয়েও মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি টাইগার ব্যাটিং লাইন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১০১ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১০৪ রানের বড় জয়ে গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করল টেম্বা বাভুমার দল।
২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুর ওভারেই শান্ত-সৌম্যর দাপট; রাবাদা খরচ করেন ১৭! ওভারের শেষ দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকান সৌম্য! ওয়েইন পারনেলের করা পরের ওভার থেকে আসে ৯ রান। আনরিখ নরকিয়া এসেই বিদায় করেন ভয়ংকর সৌম্যকে (১৫)। নরকিয়ার এই ওভারেই গতি বুঝতে না পেরে শান্ত (৯) হয়েছেন বোল্ড।
প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান খরচায় ২ উইকেট দখলে নেওয়া নরকিয়া নিজের দ্বিতীয় ওভারে সাকিবকে (১) বিদায় করেন লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে। রাবাদার বাউন্সে কুপোকাত আফিফ হোসেন, সহজ ক্যাচ তুলে ফেরার আগে পাঁচ বলে করেন কেবল এক। ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান তুলে প্রথম পাওয়ার-প্লে শেষ করে বাংলাদেশ।
এরপর লিটন দাসকে সঙ্গ দিতে উইকেটে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ১১ রান করতেই তাব্রাইজ শামসির বলে ক্যাচ তুলেন মিরাজ। ডাক হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দুই রানের বেশি পাননি নুরুল হাসান সোহান। শামসির বলে ফাইন লেগে তুলেন সহজ ক্যাচ। আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে উইকেটের আসা-যাওয়া দেখেন লিটন দাস।
কিন্তু লিটনকেও বেশি পথ এগোতে দেননি শামসি। সর্বোচ্চ ৩৪ রানের ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। দলীয় ৮৫ রানে অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদ কোন রান করার আগেই হয়েছেন রান-আউট। মুস্তাফিজ শামসিকে ৬ হাঁকালে দলীয় ১০০ রানের গণ্ডি টপকায়। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ অল-আউট হয়ে যায় ১০১ রানে।
বল হাতে আনরিখ নরকিয়া ১০ রান খরচায় তুলে নেন ৪ উইকেট। আর তাব্রাইজ ঝুলিতে ৩ উইকেট।
এর আগে টস হেরে বোলিং করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুর ওভারেই পায় সাফল্য। ফের তাসকিন আহমেদের চমক! প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে (২) ক্যাচ বানান উইকেটকিপার সোহানের হাতে। মাত্র দুই রান খরচায় ওভার শেষ করেন তাসকিন। কিন্তু তাসকিন নিজের পরের ওভারে এসে খরচ করেন ২১ রান।
ম্যাচ শুরুর আগে বৃষ্টি চোখ রাঙালেও খেলা শুরু হয় ঠিক সময়েই। তবে ৫.৩ ওভার খেলার পর সিডনিতে বাগড়া বাধিয়েছে বৃষ্টি। ক্ষণিক বিরতির পর ফের শুরু হয় ম্যাচ। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৬৩ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা। রাইলি রুশো আর কুইন্টন ডি ককের ঝড় থামেনি। এরমাঝে দুই দফা রিভিউ নিয়ে নষ্ট করে বাংলাদেশ।
৩০ বলে ফিফটি হাঁকান রাইলি রুশো। দশ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৯১/১। নিজের করা প্রথম ওভারে এক নো বল করে সাকিব দেন ২১ রান! ব্যক্তিগত ৮৮ রানে তাসকিনের বলে রুশোর ক্যাচ ছাড়েন হাসান মাহমুদ।
১৫তম ওভারে আফিফ এসে ব্রেকথ্রু এনে দেন বাংলাদেশকে। ভাঙে রুশো-ককের ১৬৮ রানের জুটি। ৩৮ বলে ৬৩ রানের ইনিংসে বিদায় নেন কক। এরপর সাকিব নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্রথম বলেই ফেরান ট্রিস্টান স্টাবসকে (৭)। রীতিমতো ঝড় তুলে ৫২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রুশো। শেষপর্যন্ত রুশোকে ১০৯ রানে থামান সাকিব। ৫৬ বল খেলে ৮ ছক্কা ও ৭ চারে সাজান এই ইনিংস।
ইনিংসের শেষ ওভারে এইডেন মার্করামকে (১০) তুলে নেন হাসান মাহমুদ। ৫ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হয় ২০৫ রানে।
উইকেটশূন্য থাকলেও এদিন বল হাতে কম রান খরচ করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারের কোটায় রান দেন মোট ২৫। ৩৩ রান খরচায় সর্বোচ্চ ২ উইকেট সাকিবের ঝুলিতে। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন তাসকিন, আফিফ ও হাসান মাহমুদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
দক্ষিণ আফ্রিকাঃ ২০৫/৫ (২০ ওভার) বাভুমা ২, কক ৬৩, রুশো ১০৯, স্টাবস ৭, মার্করাম ১০, মিলার ২*; তাসকিন ১/৪৬, আফিফ ১/১১, সাকিব ২/৩৩, হাসান ১/৩৬
বাংলাদেশঃ ১০১/১০ (১৬,৩ ওভার) শান্ত ৯, সৌম্য ১৫, লিটন ৩৪, সাকিব ১, আফিফ ১, মিরাজ ১১, মোসাদ্দেক ০, সোহান ২, তাসকিন ১০*, হাসান ০, মুস্তাফিজ ৯*; নরকিয়া ৪/১০, রাবাদা ১/২৪, শামসি ৩/২০, মহারাজ ১/২৪
ফলাফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরাঃ রাইলি রুশো (দক্ষিণ আফ্রিকা)।