রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সে সোহেলী দেখালেন এভাবেও ফিরে আসা যায়

রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সে সোহেলী দেখালেন এভাবেও ফিরে আসা যায়
Vinkmag ad

বয়স ৩৪ পেরিয়েছে। এই বয়সে পুরুষদের ক্রিকেটেই পান থেকে চুন খসার মতো সামান্য পারফরম্যান্স খারাপ হলে টিপ্পনি কাটা হয়। বাতিলের খাতায় ফেলা হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। অথচ এই বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন বাংলাদেশ নারী দলের সোহেলী আক্তার। ৮ বছরের বেশি সময়ের বিরতি দিয়ে আবার দেশের জার্সি গায়ে চাপালেন। দেশের কোনো নারী ক্রিকেটারের এর চেয়ে বড় বিরতি দিয়ে ফেরার নজির নেই।

২০১৪ সালের ১ এপ্রিল সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিই হতে পারতো এই অফ স্পিনারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে ৮ বছর পর ঠিকই ফিরলেন জাতীয় দলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নাটকীয়ভাবে দলের অংশ হলেন।

গত জুলাইয়ে ২৮ ক্রিকেটার নিয়ে শুরু হওয়া জাতীয় দলের ক্যাম্পে ছিলেন। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল স্কোয়াডে জায়গা হয়নি। তবে ছিলেন স্ট্যান্ড বাই হিসেবে। টুর্নামেন্ট শুরুর দিন দুয়েগ আগে পেসার জাহানারা আলম ও ব্যাটার ফারজানা হক পিংকি চোট ও করোনার কারণে ছিটকে গেলে সুযোগ পান সোহেলী।

প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১ ওভার করার সুযোগ পেয়েছেন, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই দেখালেন ঝলক। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ৭ রান খরচায় নিলেন ৪ উইকেট। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে বাংলাদেশ নারী দলের কোনো বোলারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। এই সুবাধে স্কটিশদের ৭৭ রানে গুটিয়ে ৬ উইকেটের জয়ে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত টাইগ্রেসদের।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by cricket97 (@cricket97bd)

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ‘ক্রিকেট৯৭’ এর সাথে আলাপে সোহেলী জানালেন তার ফিরে আসার গল্প। হতাশায় একটা সময় খেলা ছেড়ে হতে চেয়েছেন কোচ। তবে কাছের বন্ধু, পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণায় খেলা চালিয়ে গেছেন। তাদের দেওয়া বিশ্বাসের ফল পেয়ে এই নারী ক্রিকেটার বলছেন ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করে দুঃসময়কে পেছনে ফেলতে চান।

সোহেলী জানান, ‘৮ বছর পর দলে ফিরে এসেছি এটা অনেক আনন্দের। চ্যালেঞ্জ ছিল, চাপ ছিল দলে ভালো কিছু করে অবদান রাখার, নিজের জায়গা ধরে রাখার। ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করে পেছনে ফেলতে চাই আমার দুঃসময়গুলোকে। ৭ বছরের প্রতিটি দিন আমার জন্য অনেক বেশি কষ্টের ছিল। যখন দেখতাম আমি যাদের সাথে খেলেছি তারা খেলতে বাইরে যাচ্ছে, ট্যুর করছে, ভালো খেলছে আর আমি বাসায়…এরপরও নিজের উপর ভরসা রেখে আমি অনুশীলন চালিয়ে গেছি যেন যখনই সুযোগ পাই নিজের সেরাটা দিয়ে কাজে লাগাতে পারি।’

‘যখন এভাবে ৩-৪ বছর পার হয়ে গেছে ভেবেছি আর বোধহয় জাতীয় দলে খেলা হবে না। তখন মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলি কোচিং পেশায় চলে যাবো। ঐ সময় আমার সাথে খেলেছে অনেক সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড়, আমার পরিবারের সদস্যরা, কাছে বন্ধুরা মিলে বুঝিয়েছে।’

‘তারা বলতো দেখ এখনো ফিটনেস আছে, তুমি খেলাটা চালিয়ে যাও, আল্লাহ চাইলে তুমি আবারও জাতীয় দলে ফিরতে পার। এমনও অনেক খেলোয়াড় আছে যারা ঘরোয়া লিগে খেলছে অনেক দিন ধরে, জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পায় না। তাই বলে তারা কিন্তু কেলা ছেড়ে দেয় নাই। এখনো আশায় আছে, যদি কখনো সুযোগ পায়। তাহলে তুমি কেন হাল ছেড়ে দিচ্ছ? এ জিনিসটা আমার কাছে অনেক বেশি অনুপ্রেরণার ছিল।’

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল স্কোয়াডে না থাকলেও দলের সাথে যুক্ত হয়ে দারুণ পরিবেশই পেয়েছেন সোহেলী। তার মতে টিম ম্যানেজমেন্ট এমন আচরণ করেছে যেন শুরু থেকেই দলের অংশ এই ক্রিকেটার। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিও ইতিবাচকভাবে উৎসাহী করেছেন প্রত্যাবর্তন রাঙানো এই টাইগ্রেসকে।

‘শুরুতে মূল স্কোয়াডে ছিলাম না, একটু মন খারাপ ছিল তবে এটাও সত্য অনেকদিন পর একটা লাইন পেয়েছি আবার নিজেকে মেলে ধরার। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে কখনোই এমন কিছু মনে হয়নাই যে আমি পরে যোগ দিয়েছি দলে। মনে হয়েছে আমি শুরু থেকেই দলে আছি।’

‘অধিনায়ক সবসময় ইতিবাচক কথা বলেছে যা আমার কাছে আরও বেশি উৎসাহের কারণ ছিল। আমার কোচ ও অধিনায়ক যেভাবে চায় সেভাবেই আমি নিজের অবদান রাখতে চাই দলে।’

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

ছন্দহীন শান্তর যত অভিমান স্টাম্পের উপর

Read Next

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

Total
1
Share