

শারজাহতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেট ও দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটে হেরে ২ ম্যাচেই এশিয়া কাপ মিশন শেষ হল বাংলাদেশের। আফগানদের বিপক্ষে হারলেও রোমাঞ্চকর ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কা।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অলিখিত নকআউট ম্যাচে টসে হেরে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ।
সাব্বির রহমানের সঙ্গে ওপেনিং করতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আগের দিন খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, বেশি রান নয়, ইন্টেন্ট টি-টোয়েন্টি সুলভ দেখলেই খুশি তিনি।
সাব্বির-মিরাজ জুটিতে ১৯ রান আসলেও ইন্টেন্ট ছিল স্পষ্ট। নিজের খেলা প্রথম ডেলিভারিতে দিলশান মাদুশঙ্কার বলে প্যাডল সুইপ করে বাউন্ডারি আদায় করে নেন সাব্বির। অবশ্য অভিষিক্ত আসিথা ফার্নান্দোর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরা সাব্বিরের (৫) স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৩.৩৩।
সাব্বির ফেরার পর রান প্যাডেলে পা দেন মিরাজ। সাব্বির আউট হবার সময় মিরাজের রান ছিল ১১ বলে ১০।
মাহিশ থিকশানার বলে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে শুরু। পরে আসিথা ফার্নান্দোর বলে স্কুপ করে হাঁকান ছক্কা। সেই ওভার থেকে বাই চার সহ রান আসে ১৮। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশ সাব্বিরের উইকেট হারিয়ে তোলে ৫৫ রান।
ক্যারিয়ার সেরা ৩৮ রানের ইনিংস খেলে ৭ম ওভারের ৫ম বলে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলিতে চালিয়ে খেলতে লাইন মিস করে বোল্ড হন। ২৬ বলে ২ টি করে চার ও ছক্কায় ৩৮ রান করেন মিরাজ।
মিরাজ আউট হবার পরের ওভারে ফেরেন মুশফিকুর রহিমও। ৫ বল খেলে কোন বাউন্ডারি ছাড়া ৪ রান করেন তিনি।
প্রথম ১৩ বলে ১১ রান করা সাকিব পরে রান বাড়ান। মাহিশ থিকশানাকে ড্রাইভ করে প্রথম বাউন্ডারি আদায় করেন। পরের ওভারে চামিরা করুনারত্নেকে স্কুপ করে মারেন টানা দুই বাউন্ডারি। যদিও থিকশানার ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে বোলদ হন। ২২ বলে ৩ চারে করেন ২৪ রান।
৮৭ রানে ৪ উইকেট হারাবার পর আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জুটি থেকে আসে ৫৭ রান।
বাংলাদেশের ইনিংসের সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ শট স্কুপে দৃষ্টিনন্দন কিছু বাউন্ডারি আদায় করা আফিফ করেন ২২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান। ধীরে শুরু করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফেরেন ২২ বলে ১ টি করে চার ও ছয়ে ২৭ রান।
শেষদিকে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ৯ বলে অপরাজিত ২৪ রানের ক্যামিওতে বাংলাদেশ থামে ৭ উইকেটে ১৮৩ রান করে। ৯ম ব্যাটার হিসাবে নামা তাসকিন আহমেদ ১ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১১ রান করে।
হারারেতে ওয়ানডে অভিষেকে নিজের করা দ্বিতীয় ওভারে টানা দুই বলে ফিরিয়েছিলেন ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজাকে। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে অবশ্য ২য় ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি ইবাদত হোসেনকে।
প্রথম ওভারের ৩য় বলে পাথুম নিসাঙ্কাকে মুস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান। ইবাদতের গতিতেই পরাস্ত হন নিসাঙ্কা (২০), বলটি ইবাদত ছুঁড়েছিলেন ১৪১ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। ওভারের শেষ বলে আরেক গতিময় বলে ফেরেন চারিথ আসালাঙ্কা (১)। এদফায় ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ইবাদত থামেননি সেখানেই। পরবর্তী ওভারের ৪র্থ বলে ফেরান ধানুশকা গুনাথিলাকাকে (১১)। এই উইকেটের কৃতিত্ব অবশ্য বেশি পাবেন তাসকিন আহমেদ। ফাইন লেগ থেকে অনেকটা দৌড়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন।
পরবর্তী বলে ইবাদত পেতে পারতেন কুশল মেন্ডিসের উইকেটও। বল মেন্ডিসের গ্লাভসে লেগে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়লেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। তখন কুশল মেন্ডিসের রান ৩১।
এর আগে পরে আরও ৩ টি জীবন পান মেন্ডিস। ব্যক্তিগত ২ রানের মাথায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন, যা ছাড়েন মুশফিকুর রহিম। ২৯ রানের মাথায় শেখ মেহেদী হাসানের বলে মুশফিক ক্যাচ নিলেও তৃতীয় আম্পায়ার বলটিকে নো বল ঘোষণা করেন। ৪৪ রানের মাথায় সাব্বির মিস করেন রান আউটের সুযোগ।
শ্রীলঙ্কার ইনিংস ১৩১ রান অব্দি টেনে নেন মেন্ডিস। মুস্তাফিজুর রহমানের ১ম শিকার হবার আগে ৩৭ বলে ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৬০ রান করেন মেন্ডিস।
সেখান থেকে বাংলাদেশের জয়ের আশা বাড়ে। পরবর্তী ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে (২) ফেরান তাসকিন আহমেদ। ম্যাচে দুই দারুণ ক্যাচ ধরা তাসকিন ৪ ওভারে ২৪ রান খরচে নেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশের পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা (৩৩ বলে ৪৫) সাজঘরে ফেরেন মেহেদী হাসানের বলে লং অনে মেহেদী হাসানকে ক্যাচ দিয়ে। পেনাল্টিমেট ওভারে ১৭ রান হজম করেন ইবাদত হোসেন, যদিও সাকিব আল হাসানের ডিরেক্ট থ্রোতে আউট হন চামিকা করুনারত্নে (১৬)।
শেষ ওভারে ৮ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। মেহেদী হাসানের শুরুর দুই বৈধ বলেই যা তুলে নেয় শ্রীলঙ্কার দুই টেল এন্ডার।
৪ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখে জেতে শ্রীলঙ্কা।