

পাটি গণিতে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে এক মিটার উপরে উঠার পর বানরের দুই মিটার নিচে নামার অংকটা আমাদের প্রায় সবার ছোটবেলায় বড় দ্বিধার কারণ হয়েছে। জীবনের হিসাব মেলাতে গেলে এই অংকের হয়তো খুব একটা বাস্তবিক প্রয়োগ পাওয়া যাবে না। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অবস্থান অবশ্য আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই হিসাব না মেলানো বানরের অংকে।
বেশি দূর নয় গতকাল (১৩ আগস্ট) ঘোষিত এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের স্কোয়াডই সেটা প্রমাণ করে। সিনিয়র ক্রিকেটারদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সকে পেছনে ফেলে তরুণদের নিয়ে এগোতে চেয়েছে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু এক জিম্বাবুয়ে সফরেই ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে আবারও পুরোনো বোতলে নতুন মদ তত্বে হাঁটতে হয়েছে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ কোনো কিছুতেই ভালো করতে পারছিল না। এখনো পর্যন্ত খেলা ১৩১ ম্যাচে জয় সাকূল্যে ৪৫ টি। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে হিসাব করলে সর্বশেষ ১৯ ম্যাচে জয়ের সংখ্যা মাত্র ৪ টি। যেখানে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জয় ছাড়া বাকি দুই জয়ের একটি আফগানিস্তান, আরেকটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের পরই টাইগার ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরিবর্তনের আভাস দেয়। ব্যর্থ হওয়া লিটন দাস, সৌম্য সরকারের সাথে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্রামের আদলে বাদ দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমকেও। লাভের লাভ হয়নি কিছুই, ৩-০ ব্যবধানে ঘরের মাঠের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
মার্চে অবশ্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফেরানো হয় মুশফিককে, ফেরেন লিটন দাসও। সিরিজে এক ম্যাচ খেলেন মুশফিক, রান করেছেন ২৫ বলে ৩০। এরপর পবিত্র হজ পালন করেছেন বলে ছুটি নেন পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে।
লিটন দাস অবশ্য ফিরেই আছেন ছন্দে। চোটের কারণে এশিয়া কাপ মিস করলেও দলের সেরা ব্যাটার তিনিই। তবে টি-টোয়েন্টিতে বাজে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি একটুও। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজ হারতে হয়েছে ২-০ ব্যবধানে। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচে আগে ব্যাট করেও হতশ্রী ব্যাটিং উপহার দেয় টাইগাররা।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে যতটা হতাশ সময় যাচ্ছিল তার চেয়ে বেশি দল হিসেবে খারাপ করছিল বাংলাদেশ। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে রিয়াদকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে চেয়েছে বোর্ড। জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টোয়েন্টিতে সতেজ আর নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেটারদের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়।
রিয়াদের সাথে বিশ্রাম দেওয়া হয় মুশফিককেও। সাকিব ছুটিতে, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেন তামিম ইকবাল।
নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়ক করে টি-টোয়েন্টি দল সাজানো হয়। সিরিজটি ৩-০ ব্যবধানে হারলেও ক্ষতি নেই এমন স্বাধীনতা দেওয়া হয় বোর্ড থেকে। তবে ক্রিকেটারদের মাঝে আগ্রসী মানসিকতা আর ভিন্নকিছু করার প্রয়াস দেখতে চেয়েছিল দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কিন্তু প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে টাইগাররা। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দল জিতলেও সোহান ছিটকে যান পুরো সফর থেকেই। শেষ ম্যাচে চমক জাগানো সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের, স্কোয়াডে অন্তর্ভূক্ত করে একাদশেই ফেরানো হয় রিয়াদকে। যদিও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ছিলেন অধিনায়ক।
একটা নতুন মাত্রা ক্রিকেট দেখতে চাওয়া টিম ম্যানেজমেন্ট রিয়াদকে এভাবে ফেরানোয় সমালোচনার মুখে পড়ে। ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছে, রিয়াদ খেলেছেন ২৭ বলে ২৭ রানের পরিস্থিতি বিরুদ্ধ ইনিংস।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব থেকে হিসাব করলে ১৪ ইনিংসে তার রান ২০৯, স্ট্রাইক রেট ১০০.৪৮, গড় মাত্র ১৭.৪১। অথচ যে পজিশনে তিনি ব্যাটিং করেন সেখানে প্রায় সময়ই খেলতে হয় ক্যামিও ইনিংস।
আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যখন দূয়ারে কড়া নাড়ছে তখনো সঠিক কম্বিনেশন দাঁড় করাতে পারেনি বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর তরুণদের স্বাধীনতা দেওয়ার ব্যাপারে যে স্লোগান তুলেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট সেটিও হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনতো প্রকাশ্যে গণ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। যা পরিবেশকে করেছে আরও গুমোট, অথচ দায়িত্ববান একজন হিসেবে এসব ড্রেসিং রুমেই আটকে রাখতে পারতেন তিনি।
এক সিরিজেই মুখের বুলি বদলে গেছে কর্তাদের, এশিয়া কাপ দিয়ে আবার নতুন শুরু করতে চাইছে। যে কারণে সাকিব আল হাসানকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত দেওয়া হলো অধিনায়কত্ব। ঘোষিত এশিয়া কাপের স্কোয়াডে আছেন রিয়াদ, মুশফিকও। অর্থাৎ বিশ্বকাপ ভাবনায়ও আছেন বেশ ভালোভাবে।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি খেলা মুশফিক কতটা মানিয়ে নিবেন সেটা সময় বলে দিবে। রিয়াদের বাজে ফর্ম বজায় থাকলেও তাকে টেনে নেওয়া হবে কীনা সেটাও নির্বাচকরাই ঠিক করবেন। তবে এই প্রক্রিয়াকে আপনি চাইলেই বানরের তৈলাক্ত বাঁশে উঠার অঙ্কের সাথে মেলাতেই পারেন।
মুশফিক-রিয়াদের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে গুঞ্জন আছে নতুন অধিনায়ক সাকিবের চাওয়াতেই এমনটা হয়েছে। দল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ইঙ্গিত দিয়েছেন সেরকম কিছুর।
তিনি বলেন, ‘এশিয়া কাপ অনেক বড় টুর্নামেন্ট। অভিজ্ঞতা এখানে বড় ব্যাপার। এই জায়গায় অভিজ্ঞ ক্রিকেটার প্রয়োজন বলে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। অধিনায়কের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। যেহেতু আমরা টি-টোয়েন্টিতে ভালো অবস্থানে নেই। সেসব বিবেচনায় নিয়েই দল তৈরি করেছি। আশা করছি, এশিয়া কাপে ভালো কিছু করবে এই দল। সেখানে কঠিন লড়াই হবে।’
এদিকে প্রায় তিন বছর পরে সাব্বির রহমানকে দলে ফেরানোও এক ধাপ এগিয়ে দুই ধাপ পেছানো বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের বার্তা দেয়। অথচ এই সময়ে ঘরোয়া কোনো টি-টোয়েন্টি লিগে আহামরি কোনো পারফরম্যান্স নেই এই ব্যাটারের। পাইপলাইনে বিকল্প তৈরি না হওয়ার চরম ব্যর্থতাও এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠে।