

তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভিন্ন এক বাংলাদেশকে দেখতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। জয়-পরাজয় মুখ্য নয়, আক্রমণাত্মক মানসিকতার খোঁজেই ছিল নীতি নির্ধারকরা। সে ভাবনায় কতটা সফল সে হিসাব কষা কঠিন। তবে প্রথম ম্যাচের মতো শেষ ম্যাচেও ব্যাটিং, বোলিং দুই বিভাগেই ভালো শুরুর পর খেই হারানোয় অপরিপক্বতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। ১০ রানের হারে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হার, দ্বিতীয় ম্যাচে দাপুটে জয়। ১-১ সমতায় থাকা সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণী ম্যাচটি আজ (২ আগস্ট) ফাইনালে পরিণত হয়।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে টস জিতে এ দিনও আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো শুরুতে ভালো বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। তবে ঝড়ো এক ইনিংসে দলকে উদ্ধার করেন রায়ান বার্ল। তার ২৮ বলে ৫৪ রানের ইনিংসের সাথে লুক জোংউইয়ের ২০ বলে ৩৫ রানে ৮ উইকেটে ১৫৬ রান স্কোরবোর্ডে।
জবাবে আফিফ হোসেন (৩৯*), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২৭), শেখ মেহেদী হাসান (২২) কিছু ছোট ছোট ইনিংস খেললেও দল জেতানোর মতো কারিশমা দেখাতে পারেননি। ৮ উইকেটে ১৪৬ রানেই থামতে হয় বাংলাদেশকে।
View this post on Instagram
একাদশে তিন পরিবর্তন বাংলাদেশের। এই সিরিজের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান চোট পেয়ে দেশে ফেরায় স্কোয়াডে যুক্ত করে একাদশেও রাখা হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।
অথচ তাকে এই সিরিজে রাখা হয়েছিল বিশ্রামে। দুই ম্যাচের ব্যবধানে বিশ্রাম শেষ হলেও একাদশে খেলোয়াড় হিসেবেই সুযোগ পেয়েছেন। একদিন আগেই এই ম্যাচের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে।
এদিকে প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারকে বাদ দিয়ে অভিষেক করানো হয় পারভেজ হোসেন ইমনকে। পেসার শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে সুযোগ পান স্পিনার নাসুম আহমেদ।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার লিটন দাসকে (৬ বলে ১৩) হারায় বাংলাদেশ। ভিক্টোরি নিয়াউচির দ্বিতীয় শিকার হয়ে চতুর্থ ওভারেই ফেরেন অভিষিক্ত ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন (৬ বলে ২)।
আরেক দফা ব্যর্থ হলেন এনামুল হক বিজয়ও (১৩ বলে ১৪)। ইনিংসের ৫ম ওভারেই তাকে সাজঘরের পথ দেখান ওয়েস্লে মাধেভেরে। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
সেখান থেকে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ২৬ রানের জুটি মাহমুদউল্লাহর। শন উইলিয়ামসের বলে শান্ত ফেরেন ২০ বলে ১৬ রান করে। আফিফকে নিয়ে জুটি জমাতে গিয়ে ব্র্যাড ইভানসের করা ১৫তম ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ (২৭ বলে ২৭)।
পরের বলে গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে মোসাদ্দেক (১ বলে ০)। ৯৯ রানে ৬ উইকেট হারায় টাইগাররা। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৫৮ রান।
View this post on Instagram
শেখ মেহেদী-আফিফের জুটি সে পথেই নিচ্ছিলো বাংলাদেশকে। তবে ৩৪ রানের জুটিটি জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ২৬, তবে ১৯তম ওভারে ৭ রানের বেশি দেননি নিয়াউচি। সাথে তুলে নেন শেখ মেহেদীর (১৭ বলে ২২) উইকেট।
শেষ ওভারের সমীকরণ ১৯। লুক জোংউইয়ের ওভারটিতে আফিফ, হাসান মাহমুদ নিতে পারেনি ৮ রানের বেশি। ১০ রানের হারে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও খোয়ায় টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত ২৭ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ।
জিম্বাবুয়ে ইনিংসের শুরুটা ছিল ভালোই। রেগিস চাকাভার (১০ বলে ১৭) উইকেট হারিয়ে ৫ ওভারেই তুল ফেলে ৪১ রান। তবে শেখ মেহেদীর করা ৬ষ্ঠ ওভারেই বিপত্তি। টানা দুই বলে তুলে নেনে উইকেট।
ওয়েস্লে মাধেভেরেকে (৮ বলে ৫) বোল্ড করার পরের বলে সিকান্দার রাজাকে মুস্তাফিজের ক্যাচে পরিণত করেন। আগের দুই ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো রাজা আজ পেয়েছেন গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। ৯ম ওভারে মোসাদ্দেকের শিকার শন উইলিয়ামস (৮ বলে ২)।
১০ম ওভারে নিজের প্রথম বলেই উইকেট মাহমুদউল্লাহর, জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে (২৭ বলে ২৪) করেন স্টাম্পড। মুস্তাফিজের করা ১৩তম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে এনামুল হক বিজয়ের দারুণ এক ক্যাচে সাজঘরে ফিরতে হয় মিল্টন শুম্বাকে (১১ বলে ৪)।
২২ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে ৬ উইকেটে ৬৭ রানে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। কিন্তু সেখান থেকেই ক্যামিও শুরু রায়ান বার্লের। সঙ্গী হিসেবে পান লুক জোংউইকে।
দুজনে মিলে ৭ম উইকেট জুটিতে ৩১ বলে যোগ করেন ৭৯ রান। নিজের মোকাবেলা করা প্রথম ১৪ বলে রায়ান বার্লের ব্যাটে ৯ রান, তবে নাসুমের করা ১৫তম ওভারে ৫ ছক্কা ১ চারে নেন ৩৪ রান। টানা ৪ ছক্কার পর ১ চার এবং শেষ বলে ফের ছক্কা।
View this post on Instagram
২০১৯ সালে মিরপুরে সাকিব আল হাসানের এক ওভারে বার্ল হাঁকিয়েছেন তিন চার ও তিন ছক্কা, নেন ৩০ রান। ১৭তম ওভারের শেষ বলে শেখ মেহেদীকে ছক্কা মেরে ২৪ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন বার্ল।
১৯তম ওভারের প্রথম বলে জোংউইকে হাসান মাহমুদ মোসাদ্দেকের ক্যাচে পরিণত করলে ভাঙে জুটি। তার আগে ২০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন ৩৫ রান। একই ওভারে ফেরেন বার্লও। ২৮ বলে ২ চার ৬ ছক্কায় তার ব্যাটে ৫৪ রান।
শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১৫৬ রানের দলীয় সংগ্রহ পাওয়ার পথে এই দুজনের বার্ল-জোং উইয়ের ব্যাটে শেষ ৭ ওভারে আসে ৮৯ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
জিম্বাবুয়ে ১৫৬/৮ (২০), চাকাভা ১৭, আরভিন ২৪, মাধেভেরে ৫, রাজা ০, উইলিয়ামস ২, শুম্বা ৪, বার্ল ৫৪, জঙ্গে ৩৫, ইভান্স ৫*, নিয়াউচি ১*; মুস্তাফিজ ৪-০-২২-১, মেহেদী ৪-১-২৮-২, মোসাদ্দেক ৪-০-২২-১, নাসুম ২-০-৪০-১, হাসান ৪-০-২৮-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৮-১
বাংলাদেশ ১৪৬/৮ (২০), লিটন ১৩, ইমন ২, বিজয় ১৪, শান্ত ১৬, মাহমুদউল্লাহ ২৭, আফিফ ৩৯*, মোসাদ্দেক ০, মেহেদী ২২, হাসান ৩, নাসুম ২*; ইভান্স ৪-০-২৬-২, নিয়াউচি ৪-০-২৯-৩, মাধেভেরে ২-০-১৪-১, উইলিয়ামস ২-০-১৬-১, জঙ্গে ৩-০-২৮-১
ফলাফলঃ জিম্বাবুয়ে ১০ রানে জয়ী, ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী
ম্যাচসেরাঃ রায়ান বার্ল (জিম্বাবুয়ে)
সিরিজসেরাঃ সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)।