

সর্বশেষে ১০ টেস্টে মাত্র এক জয়। এরপর বদলে গেলো প্রধান কোচ, অধিনায়ক। নাহ! শুধু চরিত্র বদলায়নি, পুরো দলটাই যেন খোলস পাল্টে ফেলল। বলছি ইংল্যান্ড টেস্ট দলের কথা। নতুন অধিনায়ক-কোচের অধীনে শুরুর যাত্রা অবিশ্বাস্য, দুর্দান্ত কিংবা ভয়ংকর সুন্দর। হয়তো অন্য কোনো বিশেষণও কম হয়ে যায় ইংলিশদের জন্য।
নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশের পর ভারতের বিপক্ষে নতুন সূচিতে আগের একটি টেস্ট, সেটিতেও দাপুটে জয়। কতটা দাপুটে সেটা বলতে পরিসংখ্যানের আশ্রয় নিতে হবে। নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়লো ইংলিশরা। যা সব দল মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
শত বছরের টেস্ট ইতিহাসেরও ৮ম সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড হল জো রুট ও জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে। এই নিয়ে টানা চার টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ২৫০ এর বেশি রান তাড়া করে জিতলো ইংল্যান্ড। যা টেস্টে কঠিন কাজ বলা যায় অনায়েসেই। বিশেষ করে ওভারপ্রতি যে রান রেটে এসব ম্যাচে জয় এসেছে তা অবিশ্বাস্য।
কোচ হিসেবে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও অধিনায়ক হিসেব বেন স্টোকসের এক সঙ্গে যাত্রাটা এর চেয়ে সুন্দর আর কীভাবে হতে পারতো? সাবেক নিউজিল্যান্ড তারকা ম্যাককুলাম ও বর্তমান ইংলিশ কাপ্তান স্টোকস খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে আক্রমণকেই যে নিজেদের শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন বারবার। এবার এক সঙ্গে এই শক্তি ছড়িয়ে দিলেন পুরো দলের মাঝে। নাহয় এক মাসের ব্যবধানে এমন চারটি জয় কি আসলেই ধরা দেওয়া সম্ভব?
ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর অধিনায়ক বেন স্টোকস বলছেন তারা নতুন করে লিখতে চায় টেস্ট ক্রিকেটটা খেলতে হয়,
‘কীভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হয়, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে সেটাই আমরা নতুন করে লিখতে চাচ্ছি। গত ৪-৫ সপ্তাহে সবগুলো ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা যেগুলো আমরা ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির জন্য একত্রিত করেছি সেগুলোই সামনে টেনে নিতে চাই।’
এজবাস্টনে ভারতের দেওয়া ৩৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ১০৭ রান তুলেও ২ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদের আশঙ্কায় ইংল্যান্ড। কিন্তু আবারও ব্যাত হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন জনি বেয়ারস্টো ও জো রুট।
দুজনে ১৫০ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে চতুর্থ দিন শেষ করেন, দলের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২৫৯। রুট ৭৬ ও বেয়ারস্টো ৭২ রানে অপরাজিত ছিল।
জয়ের জন্য তবুও পঞ্চম দিন প্রয়োজন ১১৯ রান। রুট-বেয়ারস্টো ১৯.৪ ওভার ব্যাট করেই এই রান তুলে ফেলেন। ২৬৯ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে দলকে জেতানোর পথে রুট ২৮তম সেঞ্চুরি তুলে ১৪২ ও বেয়ারস্টো ১২তম সেঞ্চুরি তুলে ১১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।
টানা ৪ ম্যাচে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রদর্শন করে জয় ছিনিয়ে ইংলিশ নয়া টেস্ট কাপ্তান বলছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মজার পাঁচ সপ্তাহ কাটিয়েছেন। ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে নিয়ে ড্রেসিং রুমে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের যে মন্ত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন জানিয়েছেন সে ব্যাপারেও।
স্কাই স্পোর্টসকে স্টোকস বলেন,
‘এখন পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মজার পাঁচ সপ্তাহ গেল। আমার মনে হয় না এখানে কি ঘটছে সবাই বুঝতে পারবে। আপনি কী করতে চান,কী অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে যখন আপনি স্পষ্টতা পান এবং ফলাফলের চেয়ে বড় বিষয়ে চিন্তা করেন, তখন এটি সবকিছুকে অনেক সহজ করে তোলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে চাপ তা থেকে এসব আপনাকে দূরে রাখবে। যখন আপনি জানবেন আপনি কিসের জন্য ছুটছেন তখন সবকিছুই অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।’
এদিকে শতরানের উদ্বোধনী জুটিতে চতুর্থ ইনিংসে প্রায় ৪০০ তাড়া করার জ্যাক ক্রলি (৪৬) ও অ্যালেক্স লিস (৫৬) যে ভীত গড়ে দিয়েছেন তারও প্রশংসা করেন কাপ্তান স্টোকস।
তার ভাষায়,
‘জনি ও রুটি প্রশংসা পেতে চলেছে এবং ঠিক সেরকমই, দুইটা দুর্দান্ত ইনিংস। কিন্তু লক্ষ্য তাড়ায় নেমে আপনার উদ্বোধনী জুটি যে নজির স্থাপন করেছে তা অসাধারণ। তাদের ঐ জুটি অবিশ্বাস্য ছিল, যা মোমেন্টামা আমাদের দিকে ফিরিয়েছে। যেভাবে মোহাম্মদ শামি ও জাসপ্রীত বুমরাহকে সামলেছে তা এক কথায় দুর্দান্ত।’