

কিছুদিন আগ অব্দিও যদি আপনাকে বলা হত শেষ ইনিংসে কোন দলকে ৩৭৮ রান করে জিততে হবে, তাহলে আপনি বলে দিতে পারতেন ব্যাটিং করা দলের সুযোগ কম। তবে বর্তমান ইংল্যান্ড দল সেই ধারণা বদলে দিয়েছে কদিনেই। এজবাস্টন টেস্টে কঠিন কাজ সহজেই সেরেছে জো রুট, জনি বেয়ারস্টো। ভারতকে তারা হারিয়েছে ৭ উইকেটে।
৩৭৮ রান করতে ইংল্যান্ড ব্যাট করেছে কেবল ৭৬.৪ ওভার! দ্বিতীয় নতুন বল ভারতীয় বোলাররা হাতে পাবার আগেই জয়ের আনন্দে মেতেছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম-বেন স্টোকসদের নয়া ইংল্যান্ড।
নয়া ইংল্যান্ড কেনো বলছি? শেষ চার টেস্টে ইংল্যান্ডের চতুর্থ ইনিংসের রান দেখুন- ৩৭৮/৩ (রান রেট ৪.৯৩), ২৯৬/৩ (রান রেট ৫.৪৫), ২৯৯/৫ (রান রেট ৫.৯৮ ও ২৭৯/৫ (রান রেট ৩.৫৪)।
টেস্ট ক্রিকেটে শেষ ইনিংসে রান তোলা কঠিন, এই জুজু থেকে বের হয়ে এসেছে ইংল্যান্ড। পরিস্থিতি যাই হোক, আক্রমণাত্মক ও পজিটিভ ক্রিকেট খেলছে ইংলিশরা।
কোচিং স্টাফের প্রধান হয়ে আছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। নয়া অধিনায়ক বেন স্টোকস পরিচিত তার আক্রমণাত্মক চরিত্রের জন্য। লিডারশিপ গ্রুপের এই চেতনা ছড়িয়ে গেছে দলের সবার মাঝেই। তাই তো শেষ চার টেস্টেই ২৭০+ রান অনায়াসে চেজ করেছে ইংলিশরা।
ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে তো গড়েছে একাধিক রেকর্ডই। টেস্ট ক্রিকেটে এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। ভারতের বিপক্ষে যেকোন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এটি। ইংল্যান্ডের মাটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের ৮ম সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডও এটি।
ইংল্যান্ডই প্রথম কোন দল যারা টানা ৪ টেস্টে ২৫০ এর বেশি রান তাড়া করে জয় পেয়েছে।
৫৭ ওভারে ৩ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে গতকালের খেলা শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য দরকার ছিল আরও ১১৯ রান, ভারতের জন্য ৭ উইকেট।
ভারতের সুযোগ যা ছিল তা দিনের শুরুতে চেপে ধরে ১/২ উইকেট তুলে নিয়ে দেন দ্বিতীয় নতুন বলে খেলা শেষ করা। তবে রুট ও বেয়ারস্টো সেই সুযোগটাই দেননি ভারতকে। ৭৬ রান করে অপরাজিত থাকা জো রুট নিজের ২৮ তম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় অপরাজিত থাকেন ১৪২ রানে। টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বেয়ারস্টো অপরাজিত থাকেন ১১৪ রানে।
এই জয়ে পাতৌদি ট্রফিতে ২-২ এ সমতা আনে ইংল্যান্ড। শিরোপা ভাগাভাগি করে নেয় দুই দল। ম্যাচসেরা হন বেয়ারস্টো, সিরিজে ৭৩৭ রানের সাথে ২ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন রুট।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ভারতের ১ম ইনিংসঃ ৪১৬/১০ (৮৪.৫), শুবমান ১৭, পুজারা ১৩, হনুমা ২০, কোহলি ১১, শ্রেয়াস ১৫, পান্ট ১৪৬, জাদেজা ১০৪, শারদুল ১, শামি ১৬, বুমরাহ ৩১*, সিরাজ ২; অ্যান্ডারসন ২১.৫-৪-৬০-৫, পটস ২০-১-১০৫-২, ব্রড ১৮-৩-৮৯-১, স্টোকস ১৩-০-৪৭-১, রুট ৩-০-২৩-১
ইংল্যান্ডের ১ম ইনিংসঃ ২৮৪/১০ (৬১.৩), লিস ৬, ক্রলি ৯, পোপ ১০, রুট ৩১, বেয়ারস্টো ১০৬, লিচ ০, স্টোকস ২৫, বিলিংস ৩৬, পটস ১৯, ব্রড ১, অ্যান্ডারসন ৬*; বুমরাহ ১৯-৩-৬৮-৩, শামি ২২-৪-৭৮-২, সিরাজ ১১.৩-২-৬৬-৪, শারদুল ৭-০-৪৮-১
ভারতের ২য় ইনিংসঃ ২৪৫/১০ (৮১.৫), শুবমান ৪, পুজারা ৬৬, হনুমা ১১, কোহলি ২০, পান্ট ৫৭, শ্রেয়াস ১৯, জাদেজা ২৩, শারদুল ৪, শামি ১৩, বুমরাহ ৭, সিরাজ ২*; অ্যান্ডারসন ১৯-৫-৪৬-১, ব্রড ১৬-১-৫৮-২, স্টোকস ১১.৫-০-৩৩-৪, পটস ১৭-৩-৫০-২, লিচ ১২-১-২৮-১
ইংল্যান্ডের ২য় ইনিংসঃ ৩৭৮/৩ (৭৬.৪), লিস ৫৬, ক্রলি ৪৬, পোপ ০, রুট ১৪২*, বেয়ারস্টো ১১৪*; বুমরাহ ১৭-১-৭৪-২
ফলাফলঃ ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী, সিরিজ ২-২ এ ড্র
ম্যাচসেরাঃ জনি বেয়ারস্টো (ইংল্যান্ড)
সিরিজ সেরাঃ জো রুট (ইংল্যান্ড)।