

সেন্ট লুসিয়া টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন উইকেট প্রথম দিন বেশ ব্যাটিং সহায়ক হবে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রথম দুই ঘন্টার চ্যালেঞ্জ সামলে এগিয়ে যেতে হবে। টস হেরে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ প্রথম সেশনটা দারুণভাবে শেষ করে বড় সংগ্রহের আশা দেখাচ্ছিল। কিন্তু আম্পায়ার্স কলের ফাঁদে পড়ার সাথে আলগা শট, দুইয়ে মিলে আরেক দফা ব্যর্থ ব্যাটিং বিভাগ।
লিটন দাসের ফিফটির (৫৩) সাথে তামিম ইকবালের ৪৬ ও শেষদিকে শরিফুল ইসলাম-এবাদত হোসেনের ক্যামিওতে ২৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দেখিয়েছে উইকেট কতটা ব্যাটিং বান্ধব। ১৬ ওভার ব্যাট করেই স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৬৭ রান।
দুই ওপেনার জন ক্যাম্পবেল ক্রেইগ ব্র্যাথয়েট যথাক্রমে অপরাজিত ৩২ ও ৩০ রানে। হাতে ১০ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখনো পিছিয়ে ১৬৭ রানে।
ড্যারেন স্যামি জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ একাদশে দুই পরিবর্তন। পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গা নেন শরিফুল। টানা ব্যর্থতায় অধিনায়কত্ব ছাড়া মুমিনুল হক জায়গা হারান একাদশ থেকেও। তার স্থলাভিষিক্ত হন ৮ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা এনামুল হক বিজয়। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশে এক পরিবর্তন, স্পিনার গুদাকেশ মতির জায়গায় অভিষেক হয় পেসার অ্যান্ডারসন ফিলিপের।
কেমার রোচের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরতে পারতেন তামিম। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা রোচের আড়াআড়ি ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে চেয়ে ব্যর্থ হন। এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার, রিভিউ নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান তামিম, রিভিউ টিকে ক্যারিবিয়ানদের।
এরপর অবশ্য জয়কে নিয়ে বেশ সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন তামিম। যদিও রোচের করা ৭ম ওভারে জয়ের বিপক্ষে করা এলবিডব্লিউর আবেদনে দুইবার সাড়া দেন আম্পায়ার। দুইবারই রিভিউ নিয়ে বাঁচে জয়। দুইবারই উইকেট মিসিং ছিল।
নিয়মিত বাউন্ডারিতে জবাব দিচ্ছিলেন তামিম। ইনিংসের ১২তম ওভারে তার বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করে উল্টো রিভিউ নষ্ট করে স্বাগতিকরা। ব্যাট-বলের ফারাক টিভি রিপ্লেতে ছিল স্পষ্ট।
পরের ওভারে আক্রমণে আসেন অ্যান্ডারসন ফিলিপ। অভিষিক্ত এই পেসারের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড জয় (৩১ বলে ১০)। ভাঙে ৪১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
শান্তকে নিয়ে সহজাত ব্যাটিংই করছিলেন তামিম। কিন্তু আলঝারি জোসেফের করা ২৩তম ওভারে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের হাতে ধরা পড়ে ফিফটি মিস করেন। ৬৭ বলে ৯ চারে তামিম সাজান ৪৬ রানের ইনিংসটি।
সেশনের বাকি অংশ অবশ্য নিরাপদেই পার করেন শান্ত ও ৮ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা বিজয়। ২ উইকেটে ৭৭ রান তুলে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। শান্ত ১৬ ও বিজয় ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লাঞ্চের পর দুজনে ভক্ত সমর্থকদের আরও আশাবাদী করছিলেন। ৩৪তম ওভারে পূর্ণ হয় দলীয় ১০০ রানও। কিন্তু প্রত্যাবর্তন ইনিংসটা বড় করতে পারেননি বিজয় (৩৩ বলে ২৩)। নিজের দ্বিতীয় স্পেল করতে এসে তাকে ফেরান ফিলিপ। রিভিউ নেন বিজয়, ইমপ্যাক্ট আউটসাইড লাইন হলেও আম্পায়ার্স কলে তাকে ফিরে যেতে হয়।
আম্পায়ার্স কলের বড় সুবিধাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে পরের ওভারেই। হাল ধরার চেষ্টা করা শান্তকে ফিরতে হয়েছে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা কাইল মায়ের্সের গুড লেংথ বলে ব্যাটে সংযোগ করাতে ব্যর্থ শান্ত।
আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেন, রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। টিভি রিপ্লে দেখায় লেগ স্টাম্প কিঞ্চিৎ ছুঁয়েছে বল। টাইগারদের রিভিউ টিকলেও আম্পায়ার্স কলে সাজঘরে ফিরতে হয় শান্তকে (৭৩ বলে ২৬)। ২ উইকেটে ১০৩ থেকে ৪ উইকেটে ১০৩ রানে পরিণত হয় সফরকারীরা।
আগের ম্যাচে জোড়া ফিফটি হাঁকানো অধিনায়ক সাকিব আজ করতে পারেননি ৮ রানের বেশি। অ্যান্টিগা টেস্টে লড়াকু এক ইনিংস খেলা নুরুল হাসান সোহানও থামেন ৭ রানে। ১৩৮ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই টাইগারদের।
বাংলাদেশকে টেনে নেন লিটন দাস। ৬ উইকেটে ১৫৯ রানে চা বিরতিতে যায় দল। লিটন ৩৪ ও মেহেদী হাসান মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে।
লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে গেছেন মিরাজ (৩০ বলে ৯)। এবাদত হোসেনকে নিয়ে সাবলীল ছিলেন লিটন। ৫৬তম ওভারে সিলসকে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে ৬৬ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪তম টেস্ট ফিফটি।
তবে ইনিংসে দারুণ সব পুল শট খেলা লিটন আউট হন পুল খেলতে গিয়েই, আলঝারি জোসেফের তৃতীয় শিকার হন ৭০ বলে ৫৩ রান করে।
কার্যত বাংলাদেশ ইনিংস সেখানেই শেষ ভাবা হলেও ৯ম উইকেট জুটিতে শরিফুল ইসলাম ও এবাদত দেখান ঝলক। কেমার রোচের করা ৫৯তম ওভারে ৩টি ও ৬১ তম ওভারে শরিফুলের ব্যাটে চার আসে ২ টি।
সুযোগ বুঝে বাউন্ডারি আদায় করেন এবাদতও। দুজনে ২৯ বলের জুটিতে যোগ করেন ৩৬ রান। ১৭ বলে ৫ চারে ২৬ রান শরিফুলের ব্যাটে। ২৩৪ রানে অলআউট হওয়ার পথে এবাদত অপরাজিত ৩৫ বলে ৩ চারে ২১ রানে। টাইগারদের শেষ ৩ ব্যাটার মিলে যোগ করেন ৪৮ রান!
ক্যারিবিয়ানদের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট জাইডেন সিলস ও আলঝারি জোসেফের। দুইটি করে নেন অ্যান্ডারসন ফিলিপ ও কাইল মায়ের্স।
জবাবে নিজের প্রথম ইনিংসে দারুণ শুরু পেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৬ ওভার ব্যাট করে কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলল ৬৭ রান। এই সময়ে খুব একটা অস্বস্তিতে ফেলা যায়নি স্বাগতিক দুই ওপেনার ব্র্যাথওয়েট ও ক্যাম্পবেলকে।
পাঁচ বোলার ব্যবহার করেও তাই হতাশা নিয়ে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ। ক্যাম্পবেল ৪১ বলে ৫ চারে ৩২ ও ব্র্যাথওয়েট ৫৫ বলে ৪ চারে ৩০ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (১ম দিন শেষে):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ২৩৪/১০ (৬৪.২), তামিম ৪৬, জয় ১০, শান্ত ২৬, বিজয় ২৩, লিটন ৫৩, সাকিব ৮, নুরুল ৭, মিরাজ ৯, এবাদত ২১*, শরিফুল ২৬, খালেদ ১; সিলস ১৪.২-৪-৫৩-৩, জোসেফ ১৫-১-৫০-৩, ফিলিপ ৯-১-৩০-২, মায়ের্স ৮-০-৩৫-২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংসে ৬৭/০ (১৬), ব্র্যাথওয়েট ৩০*, ক্যাম্পবেল ৩২*
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৭ রানে পিছিয়ে।