

ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সিমার ছিলেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মইন আলি। তবে অনূর্ধ্ব-১৫ তে খেলার সময় ওয়ারউইকশায়ার তাকে জোর করে স্পিনার হিসাবে খেলাতে বাধ্য করে।
নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস যদি চান, তবে অবসর ভেঙে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরতে পারেন বলে জানান মইন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটকে দীর্ঘায়িত করার জন্য গত বছর সেপ্টেম্বরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তিনি।
এ বছর আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের অধীনে ১০ ম্যাচে ২৪৪ রান ও ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯৩ রানও ছিল।
শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চেন্নাই সুপার কিংস ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাতকার নিজের শুরুর দিকের ক্রিকেটে ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সাথে খেলার কথাও জানান।
‘স্কুলজীবন আমার জন্য সেরা সময় ছিল। আমার অনেক ভালো বন্ধু ও ভালো বিদ্যালয় (মোসলে) ছিল। আমি ক্রিকেট ভালোবাসতাম এবং আমার স্কুলে দারুণ ক্রিকেট গ্রাউন্ড ছিল। দক্ষিণ এশিয়া ভিত্তিক স্কুল ছিল এটা। ভারত, পাকিস্তানিরা ছিল। সবার ক্রিকেটে আগ্রহ ছিল,’ বলেন মইন।
‘ন্যাশনালে জিতেছিলাম। প্রাইভেট স্কুলদের হারিয়েছিলাম। ৪ বছরে মাত্র ২ বার হেরেছিলাম। বেশ ভালো দল ছিল আমাদের। তখন যারা খেলতো বিপক্ষে, সবাই ইংলিশ কাউন্টি দলের খেলোয়াড় ছিল। আমরা তাদের হারিয়েছিলাম। এমনকি অ্যালিস্টার কুকের স্কুলের বিপক্ষেও খেলা হয়েছিল।’
‘আমি তখন সব করছিলাম দলের জন্য। তখন আমি সিম বোলার ছিলাম যে ব্যাট করতে পারতো। ব্যাটিং খুব কঠিন ছিল, কিন্তু আমার ঠিকঠাক চলছিল। আমি ছক্কা হাকানোর পর বাবাকে বলেছিলাম। আমি অনেক খুশি ছিলাম এটা নিয়ে।’
‘অনূর্ধ্ব-১৫-তে খেলার সময় আমি স্পিন বোলারে রুপান্তরিত হই। ওয়ারউইকশায়ারে তখন সিম বোলিং করার সময় প্রচুর মার খেতাম। এরপর আমি নেটে স্পিন বোলিং করলাম এবং কোচ আমাকে বললো যে আর কোন সিম বোলিং নয়, আজ থেকে আমি যেন স্পিন বোলিং করি। সে আমার স্পিন বোলিংয়ে ভিন্ন কিছু দেখেছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি স্পিন করে যাচ্ছি।’
শৈশবে পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে জানান মইন। গাড়ির জন্য পেট্রোল কেনার সামর্থ্য ছিল না। এমনকি কিছু নিত্য দ্রব্যাদি জিনিসপত্রও কেনা হতো না।
‘শুরুর দিকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। আমাদের অত অর্থসম্পদ ছিল না। এক মনোবিদের পরিসেবক হিসেবে কাজ করতেন আমার বাবা। অনেক মানুষকে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দেখেছেন। একইসাথে সে আমাকে ও আমার ভাইকে কাউন্টি খেলার জন্য ট্রায়াল ও ট্রেনিংয়ে নিয়ে যেতেন। পেট্রোল কেনার সামর্থ্য ছিল না, এমনকি কখনও খাবারও জুটতো না। কঠিন সময় যাচ্ছিল তখন। মাঝেমাঝে আমাদের ৩ জনের একই দিনে কাউন্টি খেলাও পড়তো। দুর্ভাগ্য ছিল, আমাদের বাবাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছিল।’
‘আমাদের একটা গাড়ি ছিল। দুই পরিবার নিয়ে কষ্ট করে যেতে হতো। একবার পেট্রোল খতম হলে সবকিছু মাটি হয়ে যেত। সারাদিনের জন্য ১ পাউন্ড হাতে থাকতো। আমরা পাউরুটি কিনতাম। কখনও শসা ও স্যান্ডউইচও জুটতো। এভাবে আমাদের কষ্টে দিন যাচ্ছিল। আমার বাবা ও চাচার না শুধু, আমার মা ও চাচীও কষ্ট করছিলেন তখন। আমাদের কাপড় প্রস্তুত রাখতেন, যাতে সবকিছু সময়মত থাকে। তাড়াহুড়োর মধ্যে সব করতে হতো। অনেক কঠিন সময় ছিল, তবে সেটাই সেরা সময় আমার কাছে।’
‘এটা আমার হৃদয়ে শিহরণ জাগায়, কেননা আপনি কোথায় থেকে কোথায় এসেছেন এবং নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড মনে রাখাটাও প্রয়োজন। একদম শুরু থেকে আমি পেশাদার এবং আস্তে আস্তে আরো উন্নতি করতে থাকি। আজকের দিনের জন্য আমি অনেক কৃতজ্ঞ,’ জানান মইন।