

টেস্টে বাংলাদেশের হতশ্রী পারফরম্যান্স কোনভাবেই থামছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বোলারদের দারুণ কিছুর পরেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় পরাজয়ের বৃত্তেই আটকে আছে দল। আরেক দফা টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়ে সাকিব আল হাসান তো সোজা জানিয়ে দিলেন বেশিরভাগ ব্যাটারের টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। তার সাথে একমত বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়।
ব্যাটারদের বাজে অবস্থার উদাহরণ দিতে বেশি দূর যেতে হবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬ ব্যাটার ফিরেছেন রেকর্ড সংখ্যক শূন্য রান করে। সাকিবের ৫১ এর সাথে তামিম ইকবালের ২৯ রানে কোনো রকম ১০০ পেরোয় সংগ্রহ (১০৩)।
দ্বিতীয় ইনিংসেও চিত্রটা একই রকম। সাকিব ও নুরুল হাসান সোহানের জোড়া ফিফটিতে মান বাঁচানো ২৪৫ রানের দলীয় সংগ্রহ। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় এই ইনিংসেও ১০৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪২ রান।
মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটোন দাস, তামিম ইকবালরা এই ম্যাচে নিতে পারেননি দায়িত্ব। মুমিনুল, শান্ত তো দীর্ঘ দিন ধরেই নেই ফর্মে। চাপ কমাতে শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর অধিনায়কত্বও ছাড়েন মুমিনুল।
কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো টেকনিক্যাল সমস্যা দেখেন না, তার মতে মানসিকভাবে পিছিয়ে আছে ব্যাটাররা। তবে অধিনায়ক সাকিব ম্যাচ শেষে সোজা সাপ্টা উত্তরে বলেছেন টেকনিক্যালি পরিপূর্ণ ব্যাটার নেই দলে একজনও। এবার তার সাথে সুর মেলালেন দেশের প্রথম টেস্ট কাপ্তান দুর্জয়।
আজ (২১ জুন) মিরপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সাকিব যেটা বলেছে ঠিকই বলেছে যে টেকনিক্যালি সাউন্ড ব্যাটার নাই। কিছু বিশেষ জায়গা আছে টেস্টে, সেটা স্পিনারদের ক্ষেত্রে বলেন ব্যাটারদের ক্ষেত্রে বলেন। পেস বোলারদের বল সুইং করাতে হবে, স্পিনারদের টার্ন করাতে হবে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টির মতো গৎবাঁধা প্রক্রিয়ায় যদি বল করে যাই সেটা টেস্টে তেমন ফল দেয় না।’
‘হয়তো হোমে আমরা যে ধরণের উইকেটে খেলি…একই বল এখানে যেরকম আচরণ করে আমার সেটা ওয়েট ইন্ডিজ বা দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে একই রকম আচরণ করবে না। ঐ কন্ডিশনের জন্য আমাকে আলাদা ওয়ার্ক আউট করতে হবে। আলাদা স্ট্রেটেজি নিতে হবে।’
‘ব্যাটারদের ক্ষেত্রেও একই। কারণ আমরা বললাম সিম বোলারদের বল সুইং করাতে হবে সেটা কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের পেসাররাও করবে যে বল সুইং করাবে, জোরে করার চেষ্টা করবে। সেটাকে ম্যানেজ করতে হলে আমার ব্যাটারের কিন্তু সেই গুণ থাকতে হবে। সুতরাং সবারই এই প্রস্তুতি থাকতে হবে।’
টেস্ট ফরম্যাটে খেলার মেজাজই নেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বলছেন দুর্জয়। বিশেষ করে জয় পরাজয়ের বাইরে ড্রয়ের সুযোগও যে আছে সেটা মাথায় থাকে না বলে মত তার।
এ প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের যে ৫-৬ জন প্লেয়ার (সিনিয়র) তারা জ্বলে উঠছে। কিন্তু একসাথে জ্বলে উঠা হচ্ছে না, দলের যেটা প্রয়োজন, টেস্টের প্রতি ঘন্টায় পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। আমরা হয়তো ৫০ করছি কিন্তু ইনিংসটা ১০০ হওয়া উচিৎ। অনেক সময় সময় ক্ষেপণ করার জন্য যেভাবে খেলা দরকার সেটা করতে পারছি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টেস্টে যে সময় পার করা এবং আরেকটা বিকল্প যে ড্র আছে সেটা আমরা মনে হয় চিন্তা করি না।’
‘ড্র করলে কিন্তু অন্তত মাঝখানে একটা জায়গায় থাকা যায়। আমরা সবসময় জিততে গিয়ে হেরে যাচ্ছি। টেস্টে ড্রয়ের বিকল্প আছে সেটা মাথায় রাখা উচিৎ। দায়িত্ব সবাই নিচ্ছে কিন্তু হয়তো কারও ভাগ্য সহায় হচ্ছে কারও হচ্ছে না। ভাগ্যটা তৈরি করতে হবে, আমরা যদি আর একটু মনযোগী হই। ঘুরে দাঁড়াবার সামর্থ্য আছে আমাদের আমি মনে করি।’