

ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলেছে চলমান অ্যান্টিগা টেস্টে। ১৬২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেটে ৫০ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তাতেই চোখ রাঙাচ্ছিল পরাজয়, তৃতীয় দিন প্রথম সেশনে আরও ৪ উইকেট হারিয়ে যেন ইনিংস হারের দিকেই এগোচ্ছিল সফরকারীরা। কিন্তু নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে শতরানের জুটিতে উল্টো লিড এনে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
উইকেট বিহীন এক সেশন কাটিয়ে জয়ের স্বপ্নও খানিক জাগিয়ে তোলে সাকিব-সোহান। কিন্তু নতুন বলে কেমার রোচের এক স্পেলেই সে স্বপ্ন হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। দুজনের জোড়া ফিফটিতে ৮৪ রানের লক্ষ্য দেওয়া গেছে ক্যারিবিয়ানদের।
সহজ লক্ষ্য তাড়ায় নেমে পেসার খালেদের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচে প্রাণ ফেরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর অবশ্য জন ক্যাম্পবেল (২৮*) ও জার্মেইন ব্ল্যাকউডের (১৭*) দৃঢ়তায় জয়ের পথেই স্বাগতিকরা। ৩ উইকেটে ৪৯ রানে দিন শেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১০৩ রানের জবাবে ২৬৫ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। জবাবে ২ উইকেটে ৫০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। জয় ১৮ ও শান্ত ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তৃতীয় দিন অবশ্য বেশিক্ষণ লড়তে পারেননি শান্ত (৪৫ বলে ১৭ রান)। কাইল মায়ের্সের করা দিনের ৯ম ওভারে খানিক লাফিয়ে ওঠা বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন।
মুমিনুল হক শুরু থেকেই ছিলেন অস্বস্তিতে। কখনো ইনসাইড এজ তো কখনো রান আউট থেকে বেঁচে যাওয়া। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার বৃত্তেই রয়ে যান। মায়ের্সের দ্বিতীয় শিকার হন ৪ রান করে।
খারাপ সময় থেকে বের হতে অধিনায়কত্ব ছেড়েও যেন লাভ হচ্ছে না। এই নিয়ে টানা ৯ ইনিংস আউট হলেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। ৪ উইকেটে ৭৫ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
ভালো শুরু পেয়েও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি টেস্টে বেশ ধারাবাহিক লিটনও। তাকে ১৭ রানেই আটকে দেন কেমার রোচ।
এক পাশ আগলে রাখা জয়ও এরপর ধৈর্য্য হারান। রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে জশুয়া ডা সিলভাকে। ১৫৩ বলে ৪২ রানের ইনিংসটি সাজান ৩ চারে।
দিনের প্রথম সেশনে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই গেলো টাইগাররা। ৬ উইকেটে ১১৫ রান তুলে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। ৫ রানে সাকিব ও ২ রানে অপরাজিত ছিলেন সোহান।
লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই সাকিবকে ফেরানো যেত। মায়ের্সের বলে টাইগার অধিনায়কের ব্যাট ছুঁয়ে বল গ্লাভস বন্দী হয় জশুয়ার। আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় জীবন পেয়েছেন সাকিব।
এরপর অবশ্য সোহানকে নিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করেন। ৫৯তম ওভারে ৪ মেরে দলীয় রান ১৫০ পার করেন সোহান। এক ওভার পর তার ব্যাটে আসা চারে দুজনের জুটিও ৫০ পেরোয়। জাইডেন সিলসের করা ৬২তম ওভারে বাংলাদেশ পেয়ে যায় লিডও।
৮২ বলে সাকিব ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের ২৯তম টেস্ট ফিফটি। ফলে অধিনায়ক হিসেবে নতুন যাত্রার প্রথম ম্যাচেই দুই ইনিংসে ফিফটি তার ব্যাটে।
চা বিরতির আগে শেষ ওভারে সোহানের সাথে জুটির সেঞ্চুরিও হয়ে যায়। তার আগেই অবশ্য দলীয় সংগ্রহ পেরোয় ২০০।
এই সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৯৫ রান। চা বিরতিতে যাওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেটে ২১০। সাকিব ৫৩ ও সোহান ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।
চা বিরতির পর প্রথম ওভারে সোহানও তুলে নেন ফিফটি। প্রায় প্রতি ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে লিড বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন সাকিব-সোহান। তবে দ্বিতীয় নতুন বল হাতে নিয়েই অস্বস্তিতে ফেলেন রোচ-সিলস।
এই স্পেলে দ্বিতীয় ওভার করতে এসে রোচ তুলে নেন সাকিবকে। কাভারে ব্র্যাথওয়েটের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে তার নামের পাশে ৬ চারে ৯৯ বলে ৬৩ রান। আর তাতে ভাঙে ১২৩ রানের জুটি।
স্পেলে নিজের চতুর্থ ওভারে রোচ ফেরান সোহানকেও। ১৪৭ বলে ১১ চারে তার ব্যাটে ৬৪ রান। এরপর বাংলাদেশ ইনিংস স্থায়ী হয় ২৬ বল। রোচেরও ৫ উইকেট পূর্ণ হয়, ২৪৫ রানেই থামে সফরকারীরা।
শেষ ব্যাটার এবাদতকে বোল্ড করে ১০ম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিলেন এই ডানহাতি পেসার। দ্বিতীয় নতুন বলে তার ফিগার ৫.৫-২-১৩-৩। সব মিলিয়ে যা ২৪.৫-১০-৫৩-৫। এ ছাড়া জোসেফ ৫৫ রানে ৩ ও মায়ের্স ৩০ রানে নেন ২ উইকেট।
৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে খালেদ আহমেদের পেস আগুনে পুড়ে ৯ রানেই ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসে ৯৪ রানের ইনিংস খেলা ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ১, রেইমন রেফার ২ ও এনক্রুমাহ বোনারকে কোনো রান না করেই সাঝঘরে ফিরতে হয়।
ব্ল্যাকউডকে নিয়ে বাকি সময়ে বাংলাদেশকে আর আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেয়নি ক্যাম্পবেল। ৩ উইকেটে ৪৯ রানে দিন শেষ করার পথে দুজনে অবিচ্ছেদ্য আছেন ৪০ রানের জুটিতে। ক্যাম্পবেল ৪২ বলে ২৮ ও ব্ল্যাকউড ৩৬ বলে ১৭ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (৩য় দিন শেষে):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ১০৩/১০ (৩২.৫), তামিম ২৯, জয় ০, শান্ত ০, মুমিনুল ০, লিটন ১২, সাকিব ৫১, নুরুল ০, মিরাজ ২, মুস্তাফিজ ০, এবাদত ৩*, খালেদ ০; রোচ ৮-২-২১-২, সিলস ১০-২-৩৩-৩, জোসেফ ৮.৫-২-৩৩-৩, মায়ের্স ৫-২-১০০-২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংসে ২৬৫/১০ (১১২.৫), ব্র্যাথওয়েট ৯৪, ক্যাম্পবেল ২৪, রেইফার ১১, বোনার ৩৩, ব্ল্যাকউড ৬৩, মায়ের্স ৭, জশুয়া ১, জোসেফ ০, রোচ ০, মোটি ২৩*, সিলস ১; মুস্তাফিজ ১৮-৭-৩০-১, খালেদ ২২-৪-৫৯-২, এবাদত ২৮-৮-৬৫-২, সাকিব ২১-৫-৪৮-১, মিরাজ ২২.৫-৬-৫৯-৪
বাংলাদেশ ২য় ইনিংসে ২৪৫/১০ (৯০.৫), তামিম ২২, জয় ৪২, মিরাজ ২, শান্ত ১৭, মুমিনুল ৪, লিটন ১৭, সাকিব ৬৩, নুরুল ৬৪, এবাদত ১, মুস্তাফিজ ৭, খালেদ ০*; রোচ ২৪.৫-১০-৫৩-৫, জোসেফ ১৯-৬-৫৫-৩, মায়ের্স ১৩-৩-৩০-২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংসে ৪৯/৩ (১৫), ব্র্যাথওয়েট ১, ক্যাম্পবেল ২৮*, রেইফার ২, বোনার ০, ব্ল্যাকউড ১৭*; খালেদ ৫-০-১৪-৩
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য দরকার আর ৩৫ রান।