

হাতের কাছে চট জলদি ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ খুঁজতে গেলে চলমান অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশকে দেখানো যায়। প্রথম ইনিংসে ভূতুড়ে ব্যাটিংয়ে ১০৩ রানে অলআউট। প্রতিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ উইকেট হারিয়ে লিড নিয়ে নেয়। দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে ক্যাচ মিসের সাথে আউট হলেও আবেদন না করে হতে হয়েছে হতাশ। সেখান থেকে দুর্দান্ত বোলিংয়ে চা বিরতির পরই অলআউট করা গেছে ২৬৫ রানে। স্বাগতিকরা লিড পায়নি ১৬২ রানের বেশি।
তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট হারিয়ে চাপ বাড়লো আবারও। ২ উইকেটে ৫০ রান তুলে দিন শেষ করা বাংলাদেশের ইনিংস হার এড়াতে এখনো প্রয়োজন ১১২ রান। মাহমুদুল হাসান জয় ১৮ ও নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত আছেন ৮ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৯৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। জার্মেইন ব্ল্যাকউডের ব্যাটে ৬৩ রান। ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ।
View this post on Instagram
২ উইকেটে ৯৫ রান নিয়ে দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্র্যাথওয়েট ৪২ ও বোনার ১২ রানে ক্রিজে আসেন।
এবাদতের করা দিনের পঞ্চম ওভারেই উইকেটের দেখা পেতো বাংলাদেশ। ওভারের শেষ বলটি স্টাম্পের একটু বাইরে করেন, এনক্রুমাহ বোনারের (তখন ১৪ রানে ব্যাট করছিলেন) ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেট রক্ষক নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে।
আবেদনের মতো করে হাত উঠিয়েও শেষ মুহূর্তে নামিয়ে নেন সোহান, বোলার এবাদতও বুঝতে পারেননি। অথচ টিভি রিপ্লে দেখে আক্ষেপই করতে হয়েছে টাইগার ভক্তদের।
এবাদতের করা পরের ওভারেই চার মেরে লিড নিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। দারুণ টেস্ট মেজাজে খেলা স্বাগতিক অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট ২৬তম ফিফটির দেখা পান ১৭৪ বলে।
বোনার (২২ রানে) জীবন পেয়েছেন আরও একটি। খালেদের করা ৫৮তম ওভারে শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল যায় প্রথম স্লিপের দিকে। কিন্তু শান্ত পাশ দিয়ে যাওয়া বল তালুবন্দী করার কোনো চেষ্টাই দেখাননি।
জীবন পেয়েও অবশ্য বেশি দূর যেতে পারেনি বোনার (৯৬ বলে ৩৩)। তাকে বোল্ড করে ব্র্যাথওয়েটের সাথে ৬২ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব।
মিরাজের করা ৬৮তম ওভারেও আসে সুযোগ। এ দফায় ব্র্যাথওয়েট (তখন ৬৩ রানে) ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দেন লেগ স্লিপে, যদিও ফিল্ডার জয়ের জন্য কঠিনই ছিল।
এরপর ব্ল্যাকউডকে নিয়ে সেশনের বাকি সময়টা অনায়েসেই পার করে দেন ব্র্যাথওয়েট। ৩ উইকেটে ১৫৯ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্র্যাথওয়েট ৭৫ ও ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ব্ল্যাকউড।
লাঞ্চের পর দুজনে আরও সাবলীল। সেশনের দ্বিতীয় ওভারেই দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। তবে তাতে খুব বেশি অস্বস্তিতে ফেলা যায়নি ব্র্যাথওয়েট-ব্ল্যাকউডকে।
সেঞ্চুরির পথে হাঁটা ব্র্যাথওয়েটকে নার্ভাস নাইনটিজে আটকে দেন খালেদ। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে ক্যারিবিয়ান দলপতির ব্যাটে ২৬৮ বলে ৯ চারে ৯৪ রান।
টানা ভালো বল করার ফল সেশনের শেষদিকে পান মিরাজ। ৬ রানের ব্যবধানে ফেরান কাইল মায়ের্স (৭) ও জশুয়া ডা সিলভাকে (১)।
ততক্ষণে ফিফটি তুলে নেন ব্ল্যাকউড। ৬ উইকেটে ২৩১ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। ব্ল্যাকউড ৫৩ ও আলঝারি জোসেফ ০ রানে অপরাজিত ছিলেন।
চা বিরতির পর দ্রুতই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুটিয়ে দেয় টাইগার বোলাররা। ৮.৫ ওভারেই হারায় শেষ ৪ উইকেট।
জোসেফকে (০) বিদায় করেন মিরাজ। কেমার রোচকে (০) দুই বলের বেশি টিকতে দেননি এবাদত।
পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো ব্ল্যাকউডকে মিরাজের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত করেন খালেদ। ১৩৯ বলে ৯ চারে সাজান ৬৩ রানের ইনিংসটি।
এরপর শেষ ব্যাটার জাইডেন সিলসকে (৭ বলে ১) ফিরিয়ে মিরাজ নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন। ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন গুদাকেশ মতি।
২৬৫ রানে অলআউট হয়ে ক্যারিবিয়ানদের লিড ১৬২।
বাংলাদেশের সফল বোলার মিরাজ ৪ উইকেট নেওয়ার পথে ২২.৫ ওভারে খরচ করেন ৫৯ রান। এবাদত ও খালেদ ভাগাভাগি করেন দুইটি করে। সাকিব ও মুস্তাফিজের শিকার একটি করে।
জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। কেমার রোচ, জাইডেন সিলসদের সামলে সাবলীল ব্যাটিংয়ের আভাস দুই ওপেনার তামিম ও জয়ের। তবে ৯.৪ ওভার স্থায়ী ৩৩ রানের জুটি ভাঙে তামিম (৩১ বলে ২২) আউট হলে।
টানা দুই ইনিংস আলঝারি জোসেফের শিকার হন অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে জশুয়া ডা সিলভার দারুণ এক ক্যাচে।
তামিমের বিদায়ে তিন নম্বরে তুলে আনা হয় লোয়ার মিডলের মিরাজকে। কিন্তু ব্যর্থ হতে হয়, জোসেফের দ্বিতীয় শিকার হয়ে আউট হন ২ রান করে।
৩৫ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে দিনের বাকি সময় নিরাপদ রাখেন জয় ও শান্ত। ২০ ওভার ব্যাট করে ২ উইকেটে ৫০ রান তুলে দিন শেষ করে সফরকারীরা। জয় ৬০ বলে ১৮ ও শান্ত ২৩ বলে ৮ রানে অপরাজিত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (২য় দিন শেষে):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ১০৩/১০ (৩২.৫), তামিম ২৯, জয় ০, শান্ত ০, মুমিনুল ০, লিটন ১২, সাকিব ৫১, নুরুল ০, মিরাজ ২, মুস্তাফিজ ০, এবাদত ৩*, খালেদ ০; রোচ ৮-২-২১-২, সিলস ১০-২-৩৩-৩, জোসেফ ৮.৫-২-৩৩-৩, মায়ের্স ৫-২-১০০-২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংসে ২৬৫/১০ (১১২.৫), ব্র্যাথওয়েট ৯৪, ক্যাম্পবেল ২৪, রেইফার ১১, বোনার ৩৩, ব্ল্যাকউড ৬৩, মায়ের্স ৭, জশুয়া ১, জোসেফ ০, রোচ ০, মোটি ২৩*, সিলস ১; মুস্তাফিজ ১৮-৭-৩০-১, খালেদ ২২-৪-৫৯-২, এবাদত ২৮-৮-৬৫-২, সাকিব ২১-৫-৪৮-১, মিরাজ ২২.৫-৬-৫৯-৪
বাংলাদেশ ২য় ইনিংসে ৫০/২ (২০), তামিম ২২, জয় ১৮*, মিরাজ ২, শান্ত ৮*; জোসেফ ৬-২-১৪-২
বাংলাদেশ ১১২ রানে পিছিয়ে।