

খবরটা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার আগেই জেনেছেন রেজাউল ইসলাম রাজন। গতকাল (২৭ মে) রাতে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। যেখানে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, স্পেশাল স্পিন কোচিং করানোর জন্য বিসিবি থেকে ডাক পেয়েছি।’
সংবাদ কর্মী হিসেবে এমন কিছু নিশ্চিতিভাবেই আলাদা আগ্রহ জাগায়। সে ভাবনা থেকেই তাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে নক দেওয়া। মূলত জানতে চাওয়া বিসিবির কোন নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের জন্য স্পিন কোচিং করাবেন? তৎক্ষণাৎ উত্তরে তিনি জানান সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত ৩২ জন স্পিনারকে নিয়ে একটা ক্যাম্প হচ্ছে। যেটার প্রধান জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।
পরে আজ (২৮ মে) বিসিবিও আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে ২৯ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৪ দিনের বিশেষ স্পিন বোলিং প্রোগ্রামের বিষয়টি। রঙ্গনা হেরাথ পারিবারিক কারণে জাতীয় দলের সাথে যাচ্ছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। তবে ঠিকই বিশেষ এই প্রোগ্রামের দেখভাল করবেন। এটি শেষ করেই নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার বিমানে চড়বেন।
এই ক্যাম্পে ডাক পেয়ে পুরষ্কৃত হয়েছেন ঢাকা প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট, যুব দল, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) পারফর্ম করা স্পিনাররা।
ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু জানাশোনা, রাজন একজন ক্রিকেট কোচ। বয়স ৩৪ পেরোলো মাত্র, অথচ তার কোচিং ক্যারিয়ারের বয়সই প্রায় ১০ বছর!
সাবেক এই অফ স্পিনার অন্য অনেকের মতো জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নই দেখেছেন। যার সীমা অতিক্রমে একের পর এক ধাপও পার করছিলেন। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সোহরাওয়ার্দী শুভ, শামসুর রহমান শুভ, ডলার মাহমুদ সহ জাতীয় দলে খেলা এক ঝাঁক ক্রিকেটার।
২০০৬ যুব বিশ্বকাপের বাংলাদেশ স্কোয়াড থেকে প্রায় সব ক্রিকেটারই জাতীয় দলে খেলেছেন। যাদের মধ্যে সাকিব, তামিম, মুশফিকরা তো দেশের আইকনিক ক্রিকেটারই বনে গেছেন।
যে কয়েকজন ছিটকে গেছেন কক্ষপথ থেকে তাদের একজন রাজন। মাত্র তিনটি প্রথম শ্রেণি ও ১০ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাতেই আটকে গেছে ক্যারিয়ার।
শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত সেবারের যুব বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নেন ৫ উইকেট। তবে তার আগে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে ছিলেন আরও দুর্দান্ত। ১০ ম্যাচে ২২ উইকেট শিকার তার।
ঠিক কি কারণে গতিপথ বদলেছে রাজনের তা খোলাসা করতে চাননি। ২০১৩ সালে সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলা এই অফ স্পিনার ঐ বছরই যুক্ত হন কোচিং পেশায়। ২৫ বছর বয়সী সম্ভাবনাময় এক ক্রিকেটার বনে গেলেন পুরোদস্তুর কোচ।
নিজ এলাকা ঢাকার গেন্ডারিয়ায় একটি ক্রিকেট একাডেমির কোচ ছাড়াও কাজ করেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কোচিং প্যানেলে। ডিপিএলে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে।
আর কোচ হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার ধাপ বিবেচনা করলে বলতে হয় গত এপ্রিলে শেষ হওয়া শেখ কামাল অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কথা। যেখানে ঢাকা মেট্রোর কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।
তবে খেলোয়াড়ি জীবনের দ্রুত ইতি টেনে জাতীয় দলে খেলার আক্ষেপ ঘুচাতে চেয়েছেন জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ হয়ে। সে পথেই এলো এবারের ডাকটা। মাত্র ৪ দিনের একটা ক্যাম্প সেখানে কিংবদন্তী হেরাথের সাথে রাজনও কাজ করবেন।
বিশেষ স্পিন বোলিং ক্যাম্পে সাবেক এই অফ স্পিনারের সাথে স্থানীয় কোচ হিসেবে থাকছেন আরও কয়েকজন। তবে রাজনের জন্য এটা এক প্রকার পরীক্ষাও। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান খালেদ মাহমুদ সুজন তাকে আশ্বস্ত করেছেন এসব খন্ডকালীন প্রোগ্রামে ভালো কিছু করতে পারলে ভবিষ্যতে বিসিবিতে স্থায়ী কোনো দায়িত্বও পাবেন।
নিজের সুযোগ পাওয়া নিয়ে এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে রাজন বলেন, ‘এটা আমার জন্য একটা বড় পাওয়া। ক্রিকেটার হিসেবে আমি হয়তো একটা পর্যায়ে বাঁক বদলে ফেলেছি। সেসব নিয়ে আসলে আর বলতে চাই না, নিজের বর্তমান কাজটা উপভোগ করি। সাকিব, তামিম, মুশফিকদের সাথে যুব বিশ্বকাপ সহ দীর্ঘদিন খেলেছি। সবার জীবন তো আসলে একরকম হয় না। আমি আমার এখনকার অবস্থান নিয়ে খুশি।’
‘আমার চাওয়া নিজের যতটুকু অভিজ্ঞতা তা দিয়ে যেন অন্তত একজন স্পিনার হলেও গড়ে দিতে পারি। দেশের জন্য ভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগও তো আছে। এটাই হবে আমার বড় আনন্দ। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ হওয়া। স্বপ্ন পূরণের পথে ছোট ছোট ধাপগুলো যেন মসৃণভাবে পার হতে পারি…জানিনা স্বপ্ন সত্যি হবে কীনা।’
‘আমিতো বিসিবির স্থায়ী কেউ না। প্রোগ্রাম ভিত্তিক কাজ করি। তবে সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ) আশ্বস্ত করেছেন নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে ভবিষ্যতে সুযোগ আসতেও পারে। সে হিসেবে আমাকে এসব প্রোগ্রামে ভালো করতে হবে, আমিও চাই আমাকে দিয়ে কারও উপকার হোক।’
শেখ কামাল অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তারই হাতে গড়া মোহাম্মদ হৃদয় দেখিয়েছেন ঝলক। হৃদয়কে শুরু থেকেই মনে ধরে রাজনের। টুর্নামেন্টে দারুণ স্পিন বোলিংয়ে আস্থার প্রতিদানও দেন ঢাকা মেট্রোর এই ক্রিকেটার। মাত্র ৬ ইনিংস হাত ঘুরিয়ে ওভারপ্রতি ২ রানের কম দিয়ে তুলে নেন ২০ উইকেট।
হৃদয়ের উদাহরণ টেনে রাজন বলেন, ‘আমার একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করে, কিছুটা অভিজ্ঞতাও বলা যায়। আল্লাহর রহমতে অনেক ক্রিকেটারের ভীড়ে দুই একজনকে আলাদা করে নজরে আনতে পারি। অনূর্ধ্ব-১৮ ঢাকা মেট্রোর হৃদয়ের কথাই যদি বলি, অনেকটা জোর করে খেলিয়েছি আমি। আমার বিশ্বাস ছিল ভালো করবে, ২০ উইকেট নিয়ে সে প্রমাণও করেছে।’