

দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি ও পাঁচ হাজার টেস্ট রানের মালিক মুশফিকুর রহিম। তবে দুই ক্ষেত্রেই ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছন দারুণভাবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান চট্টগ্রাম টেস্টে শতক হাঁকিয়ে মুশফিক বলছেন তার পরিশ্রমের প্রতিদানই দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। ড্রেসিং রুমে কেক কেটে উদযাপন করেছে দল। দলের কনিষ্ঠ সদস্য মাহমুদুল হাসান জয়কে কেক খাইয়ে তার মাঝে থাকা ১০ হাজার রান করার সামর্থ্যের কথাও জানিয়ে দিলেন।
চট্টগ্রাম টেস্টের আগে মুশফিকের নামের পাশে রান ৪৯৩২। অন্যদিকে তামিম ইকবালের ৪৮৪৮। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তামিমই প্রথম পাঁচ হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় দিন চা বিরতির আগে তার নামের পাশে ১৩৩, মুশফিকের ১৪।
তবে চা বিরতির পর ক্র্যাম্প হওয়াতে তামিম আর মাঠেই নামেননি রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে। আর মুশফিক দিন শেষ করেন ৫৩ রানে। ফলে আজ চতুর্থ দিন মাইলফলক স্পর্শে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান।
আজ চতুর্থ দিন প্রথম সেশনের প্রথম পানি পানের বিরতির পর এই মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিক। পেসার আসিথা ফার্নান্দোর শর্ট বলকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে গ্লাভসে লেগে ফাইন লেগে চলে যায়, দুই রান নিয়ে ততক্ষণে মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন মুশফিক।
এরপর তামিমও ব্যাটিংয়ে নামেন লিটন দাস আউট হলে, কিন্তু দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে পাঁচ হাজারি ক্লাবে প্রবেশের অপেক্ষা তার দীর্ঘই হল। আজ নিজের মোকাবেলা করা প্রথম বলেই বোল্ড হয়েছেন, থেমেছেন ১৩৩ রানেই।
দিন শেষে ড্রেসিং রুমে কেক কেটে উদযাপন করে টিম ম্যানেজমেন্ট। আর সেখানেই জয়কে কেক খাওয়ানো ও শুভ কামনা জানান মুশফিক। তার বিশ্বাস জয়ের সামর্থ্য আছে ১০ হাজার টেস্ট রান করার।
সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেন, ‘হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো লাগছে যে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমি ৫ হাজার রান করেছি এবং আমি আশা করছি এটাই প্রথম না, আমি মনে করি যে অনেক খেলোয়াড়রা আছে যারা অনেক ক্যাপাবল এরকম…শুধু সিনিয়র আমরা যারা আছি তারা না। যারা জুনিয়র আছে ইন শা আল্লাহ ওরাও আমি মনে করি যে ভবিষ্যৎ এ দেখতে পারব যে তারাও ৮ হাজার ১০ হাজার রান করছে টেস্টে।’
‘আমি আজ ৫০০০ রানের জন্য কেক কেটে ড্রেসিংরুমে যে উদযাপন করছিলাম তখন জয়কে প্রথম কে খাইয়ে বলেছি যে তুই এখানে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান। তোর সম্ভাবনা আছে ১০ হাজার রান করার। আমি আশা করি তুই সেদিন অন্য নতুন কাউকে এরকম কেক খাইয়ে দিবি। আর এই লিগ্যাসিটা সামনে এগিয়ে যাবে।’
ভাগ্যের কারণে এগিয়ে থেকেও তামিম প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেননি। কিন্তু বন্ধু মুশফিককে ঠিকই জানিয়েছেন অভিনন্দন।
এ প্রসঙ্গে মুশফিক যোগ করেন, ‘হ্যাঁ হয়েছে (কথা), ও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আর তামিম তো আমার ২০০ রানের রেকর্ড ভেঙ্গেছিল। আমি যে ভালোটা করবো এটা আপনার বন্ধু ভাই করলে এটা ভালোই লাগে। এরপর ওই আমাকে বলেছে যে দুই-তিন বছরে তুই আবার ২০০ করবি। আমি মনে করি এটা খুব ভাল প্রতিযোগীতা এটা থাকলে দলেরই ভালো।’
এদিকে শুধু পাঁচ হাজার রান নয়, দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো ম্যাচেও ভাগ্যবান ছিলেন মুশফিক। ২০১৩ সালে গল টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে মোহাম্মদ আশরাফুল অপরাজিত ছিলেন ১৮৯ রানে, মুশফিক ১৫২ রানে।
স্বাভাবিকভাবে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাবে আশরাফুল এমনটাই প্রত্যাশা করছিল সবাই। অথচ পরদিন নিজের নামের পাশে মাত্র এক রান যোগ করতে পারেন আশরাফুল। ভাগ্যক্রমে পাওয়া সুযোগ হেলায় নষ্ট করেননি মুশফিক, আউট হয়েছেন ঠিক ২০০ রান করে। আর তাতেই যে ইতিহাসের অংশ বনে গেছেন।
নিজের এমন ভাগ্য নিয়ে মুশফিক কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার প্রতি, ‘আর ভাগ্যের যে বিষয়টা বললেন – এই যে কপালটা দেখছেন (কপাল দেখিয়ে) হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল, নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাসির। আমি যখন উঠে অনুশীলন করি তখন আপনাদের অনেকেই ঘুমিয়ে থাকেন। তো আল্লাহর রহমতে কিছুটা হলেও তো আল্লাহ দেখেন।’