শেষ বিকালে বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখালেন তাইজুল

শেষ বিকালে বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখালেন তাইজুল
Vinkmag ad

২৭ মাস পর টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুশফিকুর রহিম, যে পথে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পাঁচ হাজারি ক্লাবেও প্রবেশ করলেন। তবে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে লঙ্কানদের দুই উইকেট তুলে নেওয়া না গেলে তামিম ও মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরিতেও জয়ের পথে থাকার সুযোগ তৈরি হতনা।

আগেরদিন দারুণ অবস্থায় থেকে দিন শেষ করা বাংলাদেশ ব্যাটাররা যে এ দিন যতটা দ্রুত রান তোলা প্রয়োজন ছিল ততটা করতে পারেনি। যার দায় কিছুটা হলেও বর্তায় সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিক ও সেঞ্চুরি বঞ্চিত হওয়া লিটন দাসের ওপর।

মুশফিকের ব্যাটে ১০৫ রান, আগেরদিনের ১৩৩ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া তামিম আজ যোগ করতে পারেননি কোনো রান। এর বাইরে লিটন দাস থেমেছেন ৮৬ রানে।

প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৩৯৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ থামে ৯ উইকেটে ৪৬৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে লঙ্কানরা দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ৩৯ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করেছে।

৩ উইকেটে ৩১৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। লিটন ৫৪ ও মুশফিক ৫৩ রানে ক্রিজে আসেন।

আজ ভোরে বন্দর নগরীতে বৃষ্টি নামায় দিনের খেলা শুরু আধ ঘন্টা পরে। দিনের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই রমেশ মেন্ডিসকে চার মেরে জুটির সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন।

চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৫ হাজার রানের মালিক হতে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল ৬৮ রান। গতকাল তৃতীয় দিনই কাজ কিছু এগিয়ে রাখেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

আজ চতুর্থ দিন প্রথম সেশনের প্রথম পানি পানের বিরতির পর এই মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিক। পেসার আসিথা ফার্নান্দোর শর্ট বলকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে গ্লাভসে লেগে ফাইন লেগে চলে যায়, দুই রান নিয়ে ততক্ষণে মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন মুশফিক।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by cricket97 (@cricket97bd)

মুশফিক এ নিয়ে খুব বেশি উদযাপন করলেন না মাঠে, তবে ড্রেসিং রুম থেকে সতীর্থ, টিম ম্যানেজমেন্ট হাত তালিতে জানিয়েছেন অভিনন্দন। ক্রিজে থাকা আরেক ব্যাটার লিটনও পিঠ চাপড়ে দিলেন।

মাইলফলক পেছনে ফেলে লিটন-মুশফিক দুজনেই ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। আর সে কারণেই রান তোলাতে যতটা দ্রুততা দেখা যাওয়ার কথা ছিল তা দেখা যায়নি। ৩ উইকেটে ৩৮৫ রানে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। লিটন ৮৮ ও ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক।

লাঞ্চের পর প্রথম বলেই ফিরেছেন লিটন। পেসার কাসুন রাজিথার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের লাফিয়ে ওঠা গুড লেংথ ডেলিভারিতে কাট করার চেষ্টা। খানিক আলসেমি মোড়ানো শটে দেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ। ১৮৯ বলে ৮৮ রানের ইনিংসটি সাজান ১০ চারে।

পরের বলেই কনকাশন বদলি হয়ে নামা রাজিথা বোল্ড করেন আগেরদিন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়া তামিমকে। ১৩৩ রানেই তাই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে টাইগার ওপেনারকে। ফুলার লেংথের ভেতরে ঢোকা বলে বোকা বনে যান এই বাঁহাতি। হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা জাগলেও তা হতে দেননি নতুন ব্যাটার সাকিব।

কিন্তু ইনিংসজুড়ে ব্যাট হাতে খুব একটা স্বস্তিতে দেখা যায়নি। ১৪৫তম ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর বলে পুল করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন, হেলমেটে আঘাত হানে। ফার্নান্দোর পরের ওভারেই একই রকমের বলে ফিরতে হয়ে একই শট খেলে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৪৪ বলে ২৬ রানে করে।

ততক্ষণে ৯০ এর ঘরে প্রবেশ করেন মুশফিক। ১৫৩তম ওভারের তৃতীয় বলে ফার্নান্দোকে লেগ গ্ল্যান্সে চার মেরে মুশফিক পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। ক্যারিয়ারের ৮ম টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে খেলেন ২৭০ বল। যা তার ক্যারিয়ারের ধীরগতির শতক।

তার সেঞ্চুরির পর ওভার দুয়েক খেলা মাঠে গড়ায়, দুই দল যায় চা বিরতিতে। মুশফিক ২৮০ বলে ১০৪ ও নাইম হাসান ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।

চা বিরতির পর তৃতীয় ওভারেই ফেরেন মুশফিক, বাঁহাতি এম্বুলদেনিয়ার লেগ স্টাম্পে পড়া ডেলিভারিকে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট মিস করে বোল্ড হন এই সেঞ্চুরিয়ান। তার আগে নামের পাশে ২৮২ বলে ৪ চারে ১০৫ রান।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by cricket97 (@cricket97bd)

মুশফিকের পর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার প্রথম শিকার হয়ে ৫৩ বল খেলা নাইম হাসানও (৯) ফিরে যান। এরপর তাইজুল ইসলামের ব্যাটে ২০ রান। শরিফুল ইসলাম (৩*) হাতে ব্যথা পেলে ৪৬৫ রানে থামে বাংলাদেশের ১ম ইনিংস।

স্বাগতিকদের লিড ৬৮ রানের। লঙ্কানদের সেরা বোলার রাজিথা, ৬০ রানে নেন ৪ উইকেট। ৭২ রানে ৩ উইকেট শিকার আসিথা ফার্নান্দোর।

এরপর দিনের বাকি অংশে লঙ্কানরা ব্যাট করার সুযোগ পায় ১৭.১ ওভার। তাতে ওশাদা ফার্নান্দো ও নাইট ওয়াচম্যাচ লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ ৩৯। শেষ বিকেলে দারুণ এক টার্ন পাওয়া বলে এম্বুলদেনিয়াকে (২) বোল্ড করেন তাইজুল। ১৯ রান করা ওশাদা হয়েছেন রান আউট।

এখনো ২৯ রানে পিছিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। সফরকারী দলপতি দিমুথ করুনারত্নে অপরাজিত আছেন ১৮ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (৪র্থ দিন শেষে)ঃ

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংসে ৩৯৭/১০ (১৫৩), ওশাদা ৩৬, করুনারত্নে ৯, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথুস ১৯৯, ধনঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৬৬, ডিকওয়েলা ৩, রমেশ ১, এম্বুলদেনিয়া ০, বিশ্ব ১৭*, আসিথা ১; নাইম ৩০-৪-১০৫-৬, তাইজুল ৪৮-১২-১০৭-১, সাকিব ৩৯-১২-৬০-৩

বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৪৬৫/১০ (১৭০.১) জয় ৫৮, তামিম ১৩৩, শান্ত ১, মুমিনুল ২, মুশফিক ১০৫, লিটন ৮৮, সাকিব ২৬, নাইম ৯, তাইজুল ২০, শরিফুল ৩ (রিটায়ার্ড আউট), খালেদ ০*; আসিথা ২৬-৪-৭২-৩, এম্বুলদেনিয়া ৪৭-৯-১০৪-১, ধনঞ্জয়া ১৯-২-৪৮-১, রাজিথা ২৪.১-৬-৬০-৪

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংসে ৩৯/২ (১৭.১), ওশাদা ১৯, করুনারত্নে ১৮*, এম্বুলদেনিয়া ২; তাইজুল ১.১-১-০-১

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংসে ২৯ রানে পিছিয়ে।

চট্টগ্রাম থেকে, ক্রিকেট৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে মুম্বাইকে হারাল হায়দ্রাবাদ

Read Next

স্ত্রীর পোস্ট ও টি-টোয়েন্টি অবসর নিয়ে যা বললেন মুশফিক

Total
0
Share