শ্রীলঙ্কা দলের রিবিল্ডিং, সাকিবের উদাহরণ দিলেন রোশান আবেসিংহে

শ্রীলঙ্কা দলের রিবিল্ডিং, সাকিবের উদাহরণ দিলেন রোশান আবেসিংহে

রোশান আবেসিংহে, শ্রীলঙ্কান জনপ্রিয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার। পেশাগত কারণেই নিয়মিত বাংলাদেশে আসেন। টাইগার ক্রিকেটের খোঁজ খবর, উন্নতির জায়গা, ইতিবাচক দিক সম্পর্কে তাই বেশ ভালো ধারণা রাখেন। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চলমান চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন চা বিরতি ফাঁকে কথা বলেছেন সেসব নিয়েই।

স্পিন ও ব্যাটিং বিভাগে বাংলাদেশের ঘাটতি দেখেন না এই লঙ্কান। তবে উন্নতির প্রয়োজন মনে করেন পেস বোলিং আক্রমণে। বিশেষ করে পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড যোগ দেওয়াতে এই বিভাগ নিয়েও বেশ আশাবাদী রোশান। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের সাথে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার নাইম হাসানেও মুগ্ধ তিনি। চোটের কারণে দলের বাইরে থাকলেও মেহেদী মিরাজ সম্পর্কে জানেন ভালোই।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ধারাভাষ্য কক্ষের পাশে আলাপচারিতার সময় বলেন, ‘দল হিসেবে বাংলাদেশ ভালো করছে। স্পিন আক্রমণে সাকিবের সাথে আরেক বাঁহাতি তাইজুল খুব ভালো, আমি বেশ মুগ্ধ। আর তরুণ ছেলেটা, নাইম হাসান সেও দারুণ। এর বাইরে মেহেদী হাসান মিরাজ আছে বেশ ভালো, যদিও সে চোটের কারণে বাইরে আছে। তো স্পিন বিভাগটা সব দিক দিয়ে ঠিকঠাক।’

পেস বোলিং বিভাগে উন্নতি প্রয়োজন ও দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তী অ্যালান ডোনাল্ডের নিয়োগ প্রসঙ্গে যোগ করেন,’আমি মনে করি বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে উন্নতির জায়গা আছে। কিন্তু তারা অ্যালান ডোনাল্ডকে পেয়েছে যার মাধ্যমে সেরা পেসারদের বের করা, তরুণদের ঘষা মাঝা করে তুলে আনার কাজটা করতে পারবে। আর ব্যাটিং তো খারাপ বলার উপায় নেই। নতুন ছেলে মাহমুদুল হাসান জয়, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান সহ আরও কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যাটার আছে।’

অর্জুনা রানাতুঙ্গা, আরভিন্দ ডি সিলভা, সনাথ জয়সুরিয়া, কুমার সাঙ্গাকারা, মুত্তিয়াহ মুরালিধরন, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলেকরত্ন দিলশান হয়ে লাসিথ মালিঙ্গাদের নিয়ে লঙ্কানদের রয়েছে সোনালী অতীত। দুর্দান্ত সেই দলটা তারকা সব ক্রিকেটারদের বিদায়ের পর কিছুটা সংগ্রাম করেছে।

তবে দিমুথ করুনারত্ন, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দীনেশ চান্দিমাল, পাথুম নিসাঙ্কা, লাসিথ এম্বুলদেনিয়া, প্রভীন জয়াবিক্রমা, রমেশ মেন্ডিসদের কাঁধে চড়ে ঠিকই পথ খুঁজে নিচ্ছে দ্বীপ রাষ্ট্রটি। এসব ক্ষেত্রে দলকে গুছিয়ে ওঠার পর্যাপ্ত সময় দিতে হয় মনে করেন রোশান। সাকিব আল হাসানকে উদাহরণ হিসেব টেনেছেন লঙ্কান ধারাভাষ্যকার।

তার ভাষ্য, ‘হ্যাঁ, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের একটা খারাপ সময় গিয়েছিল। মাহেলা, সাঙ্গাকারা, দিলশান, মুরালি, ভাস, যখন খেলতো তখন শ্রীলঙ্কা একটা পরাশক্তি ছিল। জয়সুরিয়া ছিল, রঙ্গনা হেরাথ কয়েক বছর আগে ছেড়েছে, লাসিথ মালিঙ্গাও। এ ধরণের ক্রিকেটার চলে যাওয়া মানে…যদি সাকিব আল হাসান আগামীকাল অবসর নেয় এটা অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে আসবে। আপনাকে এটা অনুভব করতে হবে।’

‘সমস্যা হল শ্রীলঙ্কা সময় নিয়েছে এটা বুঝতে। এখন দিমুথ, ম্যাথুস, চান্দিমালরা আছে, পাথুম নিসাঙ্কা আছে। দল হিসেবেও আগের জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। হেরাথ ৪০০ এর বেশি উইকেট নিয়েছে। এটা সহজ কাজ ছিল না। সুতরাং বিকল্প এতো সহজ নয়। এটা একটা প্রসেস, পর্যায়ক্রমে আপনি আপনার খেলোয়াড়দের খুঁজে পেতে পারবেন। শ্রীলঙ্কা যেমন পেয়েছে লাসিথ এম্বুলদেনিয়া, জয়াবিক্রমা আছে এখানে, রমেশ মেন্ডিসও। তারা হাল ধরার চেষ্টা করছে। তবে আপনাকে সময় দিতে হবে।’

বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতির গ্রাফ হিসেবে এই জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক তুলে ধরেন দক্ষিণ আফ্রিকায় টাইগারদের ওয়ানডে সিরিজ ও নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয়কে। বিদেশের বিরুদ্ধ কন্ডিশনে জয় পাওয়া, ভালো খেলা সবসময়কার চ্যালেঞ্জ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

৫৯ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার বলেন, ‘একটা সময় বাংলাদেশ দেশের বাইরে জিততো না। এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় জিতেছে, হয়তো সেটা ওয়ানডে ফরম্যাট। কিন্তু কাজটা কঠিন, সেদিক থেকে বলা যায় একটা যাত্রা তো শুরু হল। বিদেশের মাটিতে জয় পাওয়া খুব সহজ কিছু না। যখন ইংল্যান্ড উপমহাদেশে আসে তারা বিপর্যস্ত হয়। ইংল্যান্ডের বাজেভাবে হারার নজিরও আছে।’

‘তবে প্রেক্ষাপট ভিন্নও হয়। ভারত যেমন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তাদের হারায়। খুব অল্প কিছু বড় দল বাইরে গিয়ে ভালো করে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান সহ আরও দুই-একটা। সে দিকে বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন বাইরে জিততে শুরু করেছে মানে একটা পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে জয় পাওয়া, এবাদতের সেই স্বপ্নের মতো স্পেল…’

চট্টগ্রাম থেকে, নাজমুল তারেক

Read Previous

বাংলাদেশের দারুণ দিনেও ভারসাম্য খুঁজে পাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার কোচ

Read Next

হাসিমুখেই দিন শেষ করল বাংলাদেশ

Total
0
Share