

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন বাংলাদেশ যেভাবে শেষ করেছে তেমন দিন খুব কমই আসে। এমনিতে ব্যাটিং বান্ধব উইকেট তার সাথে টাইগার ব্যাটারদের শৈল্পিক পরিবেশন, দুইয়ে মিলে সাগর পাড়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থা মুমিনুল হকের দল। তিন বছর পর তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি, মাহমুদুল হাসান জয়, লিটন দাস, মুশফিকের ফিফটি। দিনের দুই সেশনে উইকেট শূন্য রেখে শ্রীলঙ্কান বোলারদের হতাশা উপহার দিয়েছে স্বাগতিকরা।
রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগে তামিমের ১৩৩, জয়ের ৫৮ এর পর মুশফিক ও লিটনের যথাক্রমে অপরাজিত ৫৩ ও ৫৪ রান। ৩ উইকেটে টাইগারদের স্কোরবোর্ডে ৩১৮ রান। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের চেয়ে পিছিয়ে আছে আরও ৭৯ রানে।
বিনা উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। জয় ৩১ ও তামিম অপরাজিত ৩৫ রান নিয়ে আজ (১৭ মে) তৃতীয় দিন ক্রিজে আসেন।
আগেরদিন সাবলীল ব্যাটিংয়ের যে প্রদর্শনী দেখিয়েছে বাংলাদেশ, দুই ওপেনার সেটিই টেনে নেন। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বিশ্ব ফার্নান্দোকে চার দিয়ে স্বাগত জানান তামিম। ইনিংসের ২৪তম ওভারে রমেশ মেন্ডিসকে কাট শটে চার মেরে ৭৩ বলে ফিফটিও পূর্ণ করেন।
২৫তম ওভারে তামিম-জয়ের উদ্বোধনী জুটি পেরোয় ১০০ রান। ৬১ ইনিংস পর বাংলাদেশ ওপেনিং জুটিতে পেয়েছে শতরান। যে পথে তামিমের মতো ছন্দে ছিলেন জয়ও।
আসিথা ফার্নান্দোর করা ইনিংসের ৩৭তম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান জয়। যে পথে খেলেছেন ১১০ বল।
তামিম-জয়ের জুটি ১৪০ রানেই থামানোর সুবর্ণ সুযোগ পায় শ্রীলঙ্কা। আসিথা ফার্নান্দোর করা ৩৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ফাইন লেগে জয়ের সহজ ক্যাচ ছাড়েন লাসিথ এম্বুলদেনিয়া। ৫১ রানে ব্যাট করছিলেন এই ডানহাতি।
রমেশ মেন্ডিসের করা ৪৪তম ওভারে সুযোগ দেন তামিম, ব্যক্তিগত ৮৭ রানে স্লিপে দেওয়া ক্যাচ অবশ্য সহজ ছিল না ফিল্ডারের জন্য। তবে এর বাইরে ছিল না আর কোনো জড়তা।
তামিম-জয় লাঞ্চের আগে হারাননি নিজেদের উইকেট। বিনা উইকেটে ১৫৭ রানে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। তামিম ১৫২ বলে ৮৯ ও জয় ১৩৪ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। এ নিয়ে পঞ্চম বারের মতো ১৫০ পেরোনো শত রানের উদ্বোধনী জুটি পেল টাইগাররা।
তবে লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন জয়। আসিথা ফার্নান্দোর বলে গ্ল্যান্স করতে চেয়ে হয়েছেন ব্যর্থ, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৪২ বলে ৯ চারে ঐ ৫৮ রানেই। তামিমের সাথে ভাঙে ১৬২ রানের জুটি।
View this post on Instagram
জয় ফিরলেও নিজের ১০ম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলতে ভুল করেননি তামিম। আসিথা ফার্নান্দোর করা ৫১তম ওভারের প্রথম বলে চার মেরে পৌঁছান ৯৯ তে। পরের বলেই ফ্লিক করে ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে পূর্ণ করেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার।
আগের দিন মাথায় আঘাত পাওয়া বিশ্ব ফার্নান্দো আজ ৪ ওভার করে চলে গেছেন মাঠের বাইরে। তার কনকাশন বদলি হিসেবে নেওয়া হয় আরেক পেসার কাসুন রাজিথাকে।
মূল একাদশে না থাকা এই পেসার নিজের প্রথম ওভারেই ফেরান নতুন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তকে (২২ বলে ১)। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে।
সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া তামিমের বিপক্ষে ৫৬তম ওভারে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। সাথে সাথে রিভিউ নিয়ে সফল তামিম। তবে বাজে ফর্ম থেকে বেরই হতে পারছেন না টাইগার দলপতি মুমিনুল হক। টানা পাঁচ ইনিংসে ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক।
বদলি পেসার রাজিথার বলে বোল্ড হয়ে ১৯ বলে ২ রানেই থামেন। রমেশ মেন্ডিসের করা পরের ওভারে জীবন পান তামিম। স্লিপে তার ক্যাচ ছেড়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে ২২০ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তামিম ২১৭ বলে ১৩৩ ও মুশফিকুর রহিম ৩৬ বলে ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।
চা বিরতির পর সেঞ্চুরিয়ান তামিম নয় মুশফিকের সাথে ক্রিজে আসেন লিটন কুমার দাস। মূলত দীর্ঘ সময় ক্রিজে কাটিয়ে ক্র্যাম্প হওয়াতে রিটায়ার্ড হার্ট হন বাঁহাতি ওপেনার।
লিটনকে নিয়ে মুশফিক শেষ সেশনে দেখিয়েছেন ব্যাটিং দাপট। দুজনে ৯৮ রানের জুটিতে অবিচ্ছেদ্য থেকে দিন শেষ করেছেন। দুজনেই পেয়েছেন ফিফটির দেখা।
৮১তম ওভারে নতুন বল নিয়ে আক্রমণে আসেন কাসুন রাজিথা। নিয়মিত বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯০তম ওভারে জুটির ফিফটিতে পৌঁছান লিটন-মুশফিক। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে অবশ্য ব্যক্তিগত ৩৩ রানে জীবন পান লিটন, শর্ট লেগে মিস করেন ফিল্ডার।
১০৩তম ওভারে এম্বুলদেনিয়াকে চার মেরে ৯৬ বলে ফিফটিতে পৌঁছান লিটন। পরের ওভারে ফিফটির দেখা মুশফিকেরও। দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে মুশফিক ১৩৪ বলে ২ চারে ৫৩ ও লিটন অপরাজিত আছেন ১১৩ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (৩য় দিন শেষে):
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংসে ৩৯৭/১০ (১৫৩), ওশাদা ৩৬, করুনারত্নে ৯, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথুস ১৯৯, ধনঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৬৬, ডিকওয়েলা ৩, রমেশ ১, এম্বুলদেনিয়া ০, বিশ্ব ১৭*, আসিথা ১; নাইম ৩০-৪-১০৫-৬, তাইজুল ৪৮-১২-১০৭-১, সাকিব ৩৯-১২-৬০-৩
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩১৮/৩ (১০৭), জয় ৫৮, তামিম ১৩৩ (রিটায়ার্ড হার্ট), শান্ত ১, মুমিনুল ২, মুশফিক ৫৩*, লিটন ৫৪*; আসিথা ১৬-২-৫৫-১, রাজিথা ১১-৪-১৭-২
৩য় দিন শেষে বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৭৯ রান পিছিয়ে।