

রাজনীতি করেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চান্দগাঁও ওয়ার্ডের দুই বারের কাউন্সিলর। এর বাইরে খেলাধুলার সাথেও সম্পৃক্ত দারুণভাবে, ছিলেন ফুটবল খেলোয়াড়। সংগঠক হিসেবেও চট্টগ্রামে সুনাম কুড়িয়েছেন বেশ, বর্তমানে বন্দর নগরীর ক্রিকেট ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও। অথচ মাহবুবুল আলমকে কীনা লোকে এখন চেনে জাতীয় দলের অফ স্পিনার নাইম হাসানের বাবা হিসেবে।
প্রায় ১৫ মাস পর জাতীয় দলের একাদশে সুযোগ পেয়েই নাইম করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দেখিয়েছেন স্পিন ভেল্কি। সফরকারীদের ৩৯৭ রানে আটকে দেওয়ার পথে ১০৫ রান খরচায় তার উইকেট ৬ টি। ছেলের এমন কীর্তি মাঠে বসেই দেখেছেন মাহবুবুল আলম।
গতকাল (১৬ মে) এই প্রতিবেদকের সাথে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের হসপিটালিটি বক্সে বসে যখন কথা বলছিলেন তখনো তাকে অভিনন্দন জানানো লোকের ভীড় কমছিল না। ছেলে নাইমকে নিজের ক্লাবে ক্রিকেট যাত্রা শুরুর মঞ্চ গড়ে দেওয়া এই পিতার গর্বের অন্ত নেই।
দীর্ঘদিন রাজনীতি করে যে পরিচয় জুগিয়েছেন সেটিই এখন বিলীন হওয়ার পথে নাইমের বাবার আড়ালে। এ নিয়ে মজার ছলে আক্ষেপের সুর তবে খানিক পরেই জানালেন কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম থেকে নাইমের আব্বুতে রূপান্তরিত হওয়াটা উপভোগ করেন, ভালো লাগে।
তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত, আনন্দ তো আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না (মাঠে বসে ছেলের ৬ উইকেট শিকার দেখে)। আশা করি সে আরও উন্নতি করবে। আমি নিজেও ক্রীড়াবিদ ছিলাম, ফুটবলার। যে কারণে বুঝতে পারি ব্যাপারগুলো। ক্রিকেট তো টেম্পারমেন্টের খেলা, ধীরে ধীরে সে হয়তো নিজেকে আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যাবে।’
‘আমিতো আগে কাউন্সিলর ছিলাম, কাউন্সিলর হিসেবে পরিচিত ছিলাম। এখন লোকে আমাকে নাইমের আব্বু বলে পরিচয় দিচ্ছে। আমার কাউন্সিলর পরিচয় অনেকটা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আসলে এগুলো সাধারণ জনগণের কাছে ছড়িয়ে পড়লে তারা নাইমের আব্বু বলেই পরিচয় দেয়। আমি যে একজন কাউন্সিলর ছিলাম এটা আর এখন বলে না (হাসি)। তবে অবশ্যই এটা আমার জন্য ভালো লাগার বিষয়।’
‘আমরা চাই, সবাই চায় সে চট্টগ্রামের না দেশের হয়ে একজন ভালো খেলোয়াড় হোক, দেশের নাম উজ্জ্বল করুক। আমার প্রত্যাশা সে ভালো খেলোয়াড় হোক নিজের যোগ্যতায়। কারও উপর নির্ভরশীল হওয়া নয়।’
ছোটবেলা থেকে নাইমের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টতার অন্যতম সঙ্গী মাহবুবুল। তবে এই অফ স্পিনারকে পড়াশোনা থেকে দূরে সরাননি। খেলাধুলা ও পড়াশোনা চলেছে সমান তালে। চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ার থেকে ইতোমধ্যে সেরেছেন স্নাতক।
ছেলের জেদের কথা তুলে ধরে সংগঠক বাবা যোগ করেন, ‘ওর অনেক জেদ। ছোট বেলা থেকেই যখন সে কোনো জায়গায় দলে সুযোগ পেত না তখন মন খারাপটা অন্যভাবে প্রকাশ করতো। আর সেটা হল নিজের অনুশীলন বাড়িয়ে দিত অনেক গুণ। আমার সাথে ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়, আমি তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিই। যে কোনো কিছুই সে সহজে শেয়ার করে আমার সাথে। আমি বলি আরকি ব্যাটিংটা যেন আরেকটু উন্নতি করে। সে আমলে নিয়ে চেষ্টাও করছে, দেখা যাক।’