
১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে অফ স্পিনার নাইম হাসান দেখালেন ঝলক। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ইনিংসে ৪০০ এর নিচে আটকানোর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। বাংলাদেশ সেটা পেরেছেও, তবে আগেরদিন সেঞ্চুরি হাঁকানো অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের আক্ষেপে মোড়ানো ১৯৯ রানের ইনিংসে ঠিক যত কমে রাখতে চেয়েছে ততটা পারেনি। ৩৯৭ রানে অল আউট করার পথে নাইম হাসান দেখিয়েছেন স্পিন ভেল্কি, ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেটে দলকে রেখেছেন পথে।
শ্রীলঙ্কার ১০ উইকেটের সবকটিই নিয়েছে টাইগার স্পিনাররা। যেখানে নাইমের ৬ উইকেটের সাথে সাকিব আল হাসানের তিনটি ও তাইজুল ইসলামের শিকার এক উইকেট।
দিমুথ করুনারত্নের দলকে ৩৯৭ রানে আটকে দিয়ে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ৭৬ রান তুলে। এখনো পর্যন্ত পিছিয়ে আছে ৩২১ রানে। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয় অপরাজিত আছেন যথাক্রমে ৩৫ ও ৩১ রানে।
৪ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ১১৪ রানে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন দীনেশ চান্দিমাল।
আগেরদিনের মতো মরা পিচে বোলাররা শুরুতে সুবিধা করতে পারছিল না। সাবলীল ব্যাটিংই করছিল ম্যাথুস-চান্দিমাল। তবে তার মাঝেও ম্যাথুসকে ফেরানোর সুযোগ পেয়ে হেলায় হারায় স্বাগতিকরা।
দিনের চতুর্থ ওভার, ইনিংসের ৯৪তম ওভার। পেসার খালেদ আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরে করা পঞ্চম বলটি ম্যাথুসের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উইকেট রক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে জমা পড়ে।
কিন্তু লিটন কিংবা বোলার খালেদ কেউই বিষয়টি টের পায়নি, করেনি আবেদনও। পরে টিভি রিপ্লেতে আল্ট্রা এজে পরিষ্কার ধরা পড়ে কট বিহাইন্ড। তখন ১১৯ রানে ব্যাট করছিলেন লঙ্কান ব্যাটার, পরের বলেই হাঁকান চার।
প্রথম দিন ৩৬ ওভার পর বল হাতে পাওয়া সাকিব আজ অবশ্য দিনের ৬ষ্ঠ ওভারেই আক্রমণে আসেন। খানিক পরে যোগ দেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলও। তবে তাতেও ফায়দা হয়নি।
সাকিবের করা ১০০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মেরে ম্যাথুসের সাথে জুটির সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন চান্দিমাল। তাইজুলের করা ১০৭তম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে ১২৮ বলে ফিফটির দেখাও পান। ফিফটির পর তাইজুলকে পেয়ে আরও আক্রমণাত্মক হন, একই ওভারে হাঁকান চার ও ছক্কা।
তবে ম্যাথুসের সাথে জমে যাওয়া ২৩৬ রানের জুটি ভাঙে চান্দিমালের বিদায়েই। এবারও বল হাতে পথ দেখান নাইম হাসান, চান্দিমালকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। ১৪৮ বলে ২ চার ৩ ছক্কায় ৬৬ রান তার ব্যাটে। একই ওভারে নাইম ফেরান নতুন ব্যাটার নিরোশান ডিকভেলাকে (৩ বলে ৩)।
ফলে দারুণ এক সেশন কাটানোর পথে হেঁটেও শেষ পর্যন্ত সমান সমান অবস্থানে থাকে দুই দল। ৬ উইকেটে ৩২৭ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় শ্রীলঙ্কা, ২৮৮ বলে ১৪৭ রানে ম্যাথুস ও ৭ বলে ১ রানে অপরাজিত ছিলেন রমেশ মেন্ডিস।
লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই সাকিবের জোড়া আঘাত। টানা দুই বলে রমেশ মেন্ডিস (১) ও লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে (০) ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা জাগান টাইগার অলরাউন্ডার। নাইমের করা পরের ওভারেই ১৫০ রানে পৌঁছান ম্যাথুস। ৯ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩২৮ রানে ৮ উইকেটে পরিণত হয় সফরকারীরা।
সেখান থেকে বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির পথে ছুটেছেন ম্যাথুস। জুটি ভাঙতে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা সাকিবের। ১৩৯তম ওভারের ৫ বলই ছিল লেগ স্পিন। যা প্রায় কাজেও লেগে যাচ্ছিল। তার লেগ স্পিনে মিড অনে ফার্নান্দোর সহজ ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকুর রহিম। ক্যাচ লুফে নিলে দুজনের জুটি ভাঙতো ৪৪ রানেই।
লঙ্কানরা চা বিরতিতে যায় ৮ উইকেটে ৩৭৫ রান নিয়ে। ৩৫৩ বলে ১৭৮ রানে ম্যাথুস ও ৭৭ বলে ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন বিশ্ব ফার্নান্দো।
চা বিরতির আগে শরিফুলের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পাওয়া বিশ্ব ফার্নান্দো চা বিরতির পর নামেননি। শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো (১) যোগ দেন ম্যাথুসের সাথে। আসিথাকে নিয়েও দারুণভাবে সময় পার করছিলেন ম্যাথুস। তবে এ দফায়ও জুটি ভাঙতে হাজির নাইম।
View this post on Instagram
২৭ বল খেলে ফেলা আসিথাকে বোল্ড করে প্রত্যাবর্তন টেস্টেই ৫ উইকেট পূর্ণ করেন এই অফ স্পিনার। আসিথার বিদায়ে মাথায় আঘাত পাওয়া বিশ্ব ফার্নান্দো আবারও ক্রিজে আসেন। তবে ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র এক রান দূরে থেকে আউট হয়ে আক্ষেপে পুড়েন ম্যাথুস।
নাইমের করা ১৫৩তম ওভারের শেষ বলে উড়িয়ে মেরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁতে ছেয়েছেন ১৯৯ রানে থাকা ম্যাথুস। কিন্তু স্কয়ার লেগে সাকিবের হাতে ধরা পড়ে থামে তার ১০ ঘন্টার দারুণ এক ইনিংস। ৩৯৭ বলে ১৯ চার ১ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। শ্রীলঙ্কা থেমেছে ৩৯৭ রানে। ৩০ ওভারে ১০৫ রান খরচায় নাইমের নেওয়া ৬ উইকেট ক্যারিয়ার সেরা।
View this post on Instagram
দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশ যেটুকু ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন তাতে দাপটের সাথেই শেষ করেছে। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে এসেছে ৬ ম্যাচ পর ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশোর্ধ রান।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর বলে দ্বিতীয় স্লিপে তামিমের ক্যাচ মিস করে কুশল মেন্ডিস। তবে পরে আম্পায়ার নো বলও ঘোষণা করে। ওইটুকু অস্বস্তি দূরে সরিয়ে এরপর কেবল সাবলীল ব্যাটিংই উপহার দিয়েছে তামিম-জয়। আসিথা ফার্নান্দোর করা ৮ম ওভারে টানা দুই চার হাঁকান তামিম।
এরপর রান তোলাতে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন জয়ও। ১৩ ওভারেই দলীয় রান পেরোয় ৫০। শেষ পর্যন্ত ১৯ ওভার ব্যাটিং করে বিনা উইকেটে ৭৬ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। তামিম ৫২ বলে ৫ চারে ৩৫ ও জয় ৬৬ বলে ৫ চারে ৩১ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (২য় দিন শেষে):
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংসে ৩৯৭/১০ (১৫৩), ওশাদা ৩৬, করুনারত্নে ৯, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথুস ১৯৯, ধনঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৬৬, ডিকওয়েলা ৩, রমেশ ১, এম্বুলদেনিয়া ০, বিশ্ব ১৭*, আসিথা ১; নাইম ৩০-৪-১০৫-৬, তাইজুল ৪৮-১২-১০৭-১, সাকিব ৩৯-১২-৬০-৩
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৭৬/০ (১৯), জয় ৩১*, তামিম ৩৫*
২য় দিন শেষে বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩২১ রান পিছিয়ে।