অস্থিরতার মাঝেও যেভাবে, যে কারণে বাংলাদেশে এলেন শ্রীলঙ্কান ভক্ত

অস্থিরতার মাঝেও যেভাবে, যে কারণে বাংলাদেশে এলেন শ্রীলঙ্কান ভক্ত
Vinkmag ad

ক্রিকেট কারও আছে শুধুই একটা খেলা, তবে কারও কারও কাছে বড় আবেগের নাম। তাদেরই একজন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ভক্ত গায়ান সেনানায়েকে। শ্রীলঙ্কা দল যেখানে সেখানেই গ্যালারিতে খুঁজে পাওয়া যাবে তাকে। তবে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও তার বাংলাদেশে আসা কিছুটা অবাকই করার কথা। যে পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণ পরিবারের কাছাকাছি থাকাকেই সেরা সিদ্ধান্ত মনে করছে সে সময়ে তার বাংলাদেশে আসাটা কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে।

এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন গায়ান মিটিয়েছেন সেসব কৌতুহল। শ্রীলঙ্কার অস্থির সময়ের পেছনে কারণ সহ নিজের স্বাধীনভাবে বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়িয়ে দলকে সমর্থন দেওয়ার গল্পও শুনিয়েছেন।

এই নিয়ে ৭ম বার এসেছেন বাংলাদেশে, পরিচয় আছে সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন থেকে বর্তমান ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হকদের সাথে। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বাড়ি উল্লেখ করে এই শ্রীলঙ্কান ভক্ত মন খারাপ করেছেন এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা থেকে সরে যাচ্ছে বলে।

দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে কারণ ও দুঃসময়ে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের খারাপ অবস্থাটা শুরু হয় কোভিডের সময়। এমনিতে পরিস্থিতি অনেক দিন ধরে খারাপ, সরকারের উপর সন্তুষ্ট ছিল না জনগণ। তবে কোভিডে আমাদের পর্যটন শিল্পে বড় একটা ধাক্কা লাগে। লোকজন ভ্রমণে শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছিল না।’

No description available.

‘ঐ সময়টায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত আমাদের বেশ সাহায্য করে। আর্থিকভাবে সাহায্য করায় বাংলাদেশ সরকারকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। যে প্রভাবের চূড়ান্ত ফল সরকারের বাজে কীর্তি সামনে আসা। এখন যে অবস্থা তাতে আগামী ৫-৬ মাসেও খুব একটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন হয়তো কোভিড চলে গেছে তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপ, খারাপ অবস্থা চলছে।’

গতকাল (১৫ মে) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রুফটপে বসে গায়ানের সাথে কথা বলে জানা যায় কীভাবে এই কঠিন সময়ে শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশে এলেন। একজন ভাই ছাড়া পরিবারে কেউ নেই, ভাইও বিয়ে করে নিজের মতো আছেন। ফলে আইকনিক এই ভক্ত ব্যাচেলর জীবন উপভোগ করছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বাধীনভাবে পুরো বিশ্ব।

তার ভাষ্য, ‘আমি ক্রিকেটে দারুণ ভক্ত। শ্রীলঙ্কা দলের খেলা দেখতে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়াই। আমি আমার স্পন্সর কোম্পানি ডিএম ব্রাদার্সকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাজিব দীন । সে আমার ফ্লাইং টিকিট থেকে শুরু করে সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আপনারা জানেন শ্রীলঙ্কায় বিমান ভাড়া এখন কতটা উচ্চ দরে চলছে।’

‘প্রায় ১ হাজার ডলার গুনতে হয় বাংলাদেশে আসতেই। যে কারণে আমার স্পন্সর কোম্পানিকে অশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার এক ভাই আছে ওখানে (শ্রীলঙ্কায়), সে বিয়ে করেছে, পরিবার নিয়ে থাকে। কোভিডের সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মা মারা গেছে। আমি এখন একাই, ব্যাচেলর একটা ছেলে, কোনো বাধা নেই কোথাও ঘুরতে যেতে। আগের মতোই স্বাধীনভাবে ঘুরে চলেছি।’

২০০৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসা গায়ান টাইগার ক্রিকেটারদের সাথে সখ্যতার গল্পও তুলে ধরেন, ‘আমি বাংলাদেশে এ নিয়ে সাতবার এসেছি। প্রথমবার ২০০৬ সালে এসেছিলাম, চট্টগ্রামেই। ওয়ানডে ম্যাচে। বাংলাদশের মানুষ খুবি বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় বাড়ি। সব খেলোয়াড়কে আমি চিনি।’

‘বাংলাদেশের আইকনিক ফ্যান শোয়েব আলি আমার বন্ধু, টাইগার মিলনও। সাবেক খেলোয়াড় খালেদ মাসুদের সাথেও ভালো পরিচয়। বর্তমানে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক সবার সঙ্গে আমার সখ্যতা। ম্যানেজার (মূলত টিম ডিরেক্টর) খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথেও ভালো পরিচয়।’

এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা থেকে দুবাই সরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে বাড়তি খরচ ও ঝামেলার কারণে এতে মন খারাপ লঙ্কান ভক্তের।

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ শুনেছি এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা থেকে সরে যাচ্ছে, হয়তো দুবাইতে যাবে। এটা আমাদের জন্য হতাশার খবর। শুধু আমাদের জন্য না, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশী সমর্থকদের জন্যও হতাশার।’

‘শ্রীলঙ্কার জীবন যাপন বেশ সস্তা, সাথে চলাফেরায় স্বাধীনতা তো আছেই। যেকোনো জায়গায় সহজে যাওয়া আসা করা যায়। কিন্তু দুবাইয়ে ভিন্ন চিত্র, খরচ বেশি আর অতি মাত্রায় সিকিউরিটি।’

চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কান মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পড়াশোনার কারণেও দেশটির বড় একটা অংশ চট্টগ্রামে বসবাস করে। এখানে এসে তাই পরিচিত বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করতে ভুলেননি গায়েন।

তিনি জানান, ‘চট্টগ্রামে এসে আমি এখানকার কিছু শ্রীলঙ্কান মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি, এসব জায়গায় আমার অনেক বন্ধু আছে। এর বাইরে চট্টগ্রামে মেডিকেলে পড়তে আসা প্রচুর শ্রীলঙ্কান আছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনেও অনেকে আছে। তাদের সাথে যোগাযোগ হয়, দেখাও হয়েছে।’

চট্টগ্রাম থেকে, নাজমুল তারেক

Read Previous

দুঃসময়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের পাশে পেশোয়ার জালমির মালিক

Read Next

জয়-তামিমের ব্যাটে বাংলাদেশের ভালো শুরু

Total
0
Share