

বোলিং বিভাগে কিছুটা অনভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কার বড় ভরসা ব্যাটিং বিভাগে দিমুথ করুনারত্নে, দীনেশ চান্দিমাল, অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটাররা। আজ (১৫ মে) থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টের আগে অধিনায়ক করুনারত্নে জানিয়েছিলেন সিনিয়র ব্যাটারদের ধরতে হবে হাল। টস জেতার অপেক্ষায় ছিল দুই দলই। টস ভাগ্যে জিতে শুরুর হাসি শ্রীলঙ্কার, যে হাসি চওড়া হয়েছে অভিজ্ঞ সেনানী ম্যাথুসের ব্যাটে।
চট্টগামের স্পোর্টিং উইকেটে টস জিতে আগে ব্যাট করে প্রথম দিন শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৮। সেঞ্চুরি তুলে ১১৪ রানে অপরাজিত থাকা ম্যাথুস ছাড়াও ফিফটির দেখা পান কুশল মেন্ডিস। ম্যাথুসের সাথে ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন চান্দিমাল।
অনিশ্চয়তার দোলাচলে থাকা সাকিব আল হাসান খেলবেন আগেই জানা। তাতে ৭ ব্যাটারের সাথে ৪ স্বীকৃত বোলার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। দুই পেসার খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। সাকিব ছাড়া বাকি দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও ১৫ মাস পর ফেরা নাইম হাসান।
দিনের শুরুতে কোনো চাপই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। উপরন্তু নষ্ট করে রিভিউ। শরিফুলের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওশাদা ফার্নান্দোর বিপক্ষে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদন আম্পায়ার নাকচ করে দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। মূলত শরিফুলের অতি আত্মবিশ্বাসে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল আউট সাইড লেগে পিচড হয়েছে।
দিনের ৮ম ওভারেই স্পিনার নাইম হাসানকে ডেকে নেন অধিনায়ক মুমিনুল। প্রত্যাবর্তন টেস্টে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট এই অফ স্পিনারের। ফিরিয়েছেন প্রতিপক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার অধিনায়ক করুনারত্নেকে।
নাইমের কিছুটা বাড়তি গতির বল অফ স্টাম্পের দিকে যাচ্ছিল, তার আগে কাট করার চেষ্টা করুনারত্নের (১৭ বলে ৯)। কিন্তু অপ্রত্যাশিত গতিতে ব্যাট মিস করে প্যাডে আঘাত হানে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি।
এক ওভার পরই নাইমের সাথে স্পিন আক্রমণে যোগ দেন তাইজুল ইসলামও। প্রথম পানি পানের বিরতিতে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ১ উইকেটে ৩৩ রান। ধীরে ধীরে ফার্নান্দোর সাথে সাবলীল ব্যাটিংয়ে যোগ দেন কুশল মেন্ডিসও।
২০তম ওভারে নাইমকে রিভার্স সুইপে চার মেরে দলীয় ৫০ রান পূর্ণ করে ফার্নান্দো। তবে প্রায় জমে যাওয়া এই জুটি লাঞ্চের কিছু সময় আগে ভাঙেন নাইমই।
তার অফ স্টাম্পের বাইরে করা বলে ড্রাইভ খেলার চেষ্টা ফার্নান্দোর, টাইমিং গড়মিলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি, ফিরেছেন ৭৬ বলে ৩৬ রান করে।
তবে পরের ওভারে বাংলাদেশকে হতাশ হতে হয়ে আরও এক রিভিউ নষ্ট করে। শরিফুলের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল খানিক ভেতরে ঢুকে অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসের প্যাডে আঘাত হানে। আম্পায়ার নাকচ করলেও আবারও আত্মবিশ্বাসের সাথে রিভিউ নিতে বাধ্য করে শরিফুল, রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিস করেছে স্টাম্প।
শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে ৭৩ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় শ্রীলঙ্কা। মেন্ডিস ৪৩ বলে ২৭ ও ম্যাথুস কোন রান না করে অপরাজিত ছিলেন।
লাঞ্চের পর নাইমের করা দ্বিতীয় ওভারে ছক্কা হাঁকান ম্যাথুস। দুজনের জুটি ৫০ পেরোয় ৩৩তম ওভারে। ইনিংসের ৩৬তম ওভারে প্রথম আক্রমণে আসেন সাকিব। ততক্ষণে ম্যাথুসকে নিয়ে দলকে ভালো অবস্থানের দিকে নিয়ে যান মেন্ডিস।
৪৩তম ওভারে তাইজুল ইসলামকে সুইপ করে সিঙ্গেল নিয়ে ৯৩ বলে ছুঁয়েছেন ফিফটি। তাইজুলের করা পরের ওভারেই ম্যাথুসের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিলে দেখা যায় ব্যাট স্পর্শ করেনি বল। পরে ফিফটি তুলে নেন তিনিও।
চা বিরতির আগে কোনো বিপদ ঘটেনি লঙ্কানদের। মেন্ডিস-ম্যাথুসের ব্যাটে উইকেট বিহীন সেশন পার করে সফরকারীরা। ২ উইকেটে ১৫৮ রান তুলে চা বিরতিতে যাওয়ার পথে ম্যাথুস ১১৪ বলে ও মেন্ডিস ১৩০ বলে সমান ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তবে চা বিরতির পর প্রথম বলেই মেন্ডিসকে ফেরান তাইজুল। তার শর্ট বলে সফট ডিসমিসালে পরিণত হন মিড উইকেটে নাইমের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৩১ বলে ৩ চারে ৫৪ রানে সাজানো ইনিংসেই থামতে হয় এই ডানহাতিকে।
এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে দলকে পথে রাখেন অভিজ্ঞ সেনানী ম্যাথুস। কিন্তু সাকিবের প্রথম শিকার হয়ে ধনঞ্জয়া ফেরেন মাত্র ৬ রান করে। স্লিপে দারুণ এক ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়। ১৮৩ রানে ৪ উইকেটে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা।
তবে দীনেশ চান্দিমালকে নিয়ে দলকে অস্বস্তিতে পড়তে দেননি ম্যাথুস। ৭১তম ওভারে তাইজুলকে হাঁকান টানা ২ চার। পরের ওভারে সাকিবকে ছক্কা হাঁকান চান্দিমাল। ৭৮তম ওভারে ৪ মেরে ৯০ এর ঘরে প্রবেশ করেন ম্যাথুস।
৮০ ওভার পরই নতুইন বল নেয় বাংলাদেশ। শরিফুলের করা ৮১তম ওভারের চতুর্থ বলে ফ্লিক শটে চার মেরে ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরি। যে পথে খেলেছেন ১৮৩ বল।
শরিফুলের পরের ওভারে ম্যাথুসের ব্যাটে আরও ২ চার। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ২৫৮ রানেই থামে দিন শেষ হয় সফরকারীদের। ম্যাথুস ২১৩ বলে ১১৪ রানে ও ৭৭ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন চান্দিমাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (১ম দিন শেষে)-
শ্রীলঙ্কা ২৫৮/৪ (৯০), ওশাদা ৩৬, করুনারত্নে ৯, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথুস ১১৪*, ধনঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৩৪*; নাইম ১৬-২-৭১-২, তাইজুল ৩১-৮-৭৩-১, সাকিব ১৯-৭-২৭-১।