

মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়। এরপর আবারও নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচের পর খেলা ৩ ম্যাচেই হেরেছে বাজেভাবে, সুযোগ তৈরি করেও হতে হয়েছে বিপর্যস্ত। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই হওয়া টাইগারদের সামনে আরও এক সুযোগ। আগামীকাল (১৫ মে) থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি।
তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান আমলে নিলে শ্রীলঙ্কার তুলনামূলক অনভিজ্ঞ দলটির বিপক্ষেও খুব একটা এগিয়ে থেকে মাঠে নামতে পারছে না বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কিছুটা নিজেদের এগিয়ে থাকার কারণ হিসেবে ভাবছে অনেকেই। কিন্তু অধিনায়ক মুমিনুল হক সাফ জানিয়ে দিলেন মাঠের ক্রিকেটে এসব ইস্যু প্রভাব ফেলবে না একটুও।
অন্যদিকে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেও বলছেন দেশে চলমান অস্থিরতা নিয়ে তাদের করনীয় কিছু নেই। তারা বাংলাদেশে এসেছেন কেবল ক্রিকেট খেলতে, পূর্ণ মনযোগ দিচ্ছেন সেখানেই। বরং ভালো ফল বয়ে এনে দেশের জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে চান।
অ্যাশেজ ব্যর্থতার কারণে ইংল্যান্ডের কোচিং পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া দলটির নবনিযুক্ত কোচ ক্রিস সিলভারউডের এটি প্রথম সিরিজ। কিন্তু সদ্য কাউন্টি খেলে আসা করুনারত্নে তার মানসিকতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইংলিশ ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই।
আজ (১৪ মে) ম্যাচ পূর্ববর্তী দিনের সংবাদ সম্মেলনে লঙ্কান দলপতি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এটা বলা ঠিক হবে যে অনেক তরুণ আছে দলে, তারা যথেষ্ট খেলেছে- আমার মনে হয় তারা সবাই ১০ ম্যাচের বেশি খেলেছে। একমাত্র ব্যাপার হচ্ছে কোচ। হ্যাঁ, উনি নতুন। আমাদের উনি কীভাবে ভাবেন সেটা বোঝার জায়গায় যেতে হবে। তার সম্পর্কে কিছুটা জানার চেষ্টা করেছি ইংলিশ খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলে।’
‘আমি আশা করছি তার সাথে দারুণভাবে কাজ করতে পারবো আমরা। কিন্তু এটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায় কিছু বলা। আমি মনে করি সে আমাদের উপর কতটা প্রভাব ফেলবেন তা বলার জন্য কিছু সময় দরকার।’
সর্বশেষ ১০ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ৩ জয়ের বিপরীতে ড্র ৪ টি, হেরেছে ৩ ম্যাচে। যেখানে বাংলাদেশ নিজেদের সর্বশেষ ১০ ম্যাচে ২ জয়ের বিপরীতে ড্র করেছে কেবল ১ ম্যাচে, হেরেছে বাকি ৭ ম্যাচে।
টেস্টে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা এর আগে মোট ২২ বার মুখোমুখি হয়েছিল। যেখানে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ১ ম্যাচে, ড্র হয়েছে ৪ ম্যাচে। হারতে হয়েছে বাকি ১৭ ম্যাচেই।
অতীত পরিসংখ্যান পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে শুরু করতে চান বাংলাদেশ কাপ্তান। দক্ষিণ আফ্রিকায় বোলাররা ছিল দুর্দান্ত, কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সঙ্গী হয়েছে হতাশা। এই সিরিজে ব্যাটাররা ঘুরে দাঁড়াবে, আশাবাদী মুমিনুল।
তার ভাষ্য, ‘প্রত্যেক সিরিজেই ব্যাটাররা ওভারকাম করতে চায়। আমরাও এই জিনিসগুলো নিয়ে কাজ করছি। আগের সিরিজে কী হয়েছে না হয়েছে এসব নিয়ে এখন এত চিন্তা করছি না। দুই জায়গার কন্ডিশনও অনেক ভিন্ন। এখানকার কন্ডিশনে কীভাবে মানিয়ে নিব এটাই গুরুত্বপূর্ণ। ঐ সিরিজের শিক্ষা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছি এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সর্বশেষ ২৭ মাসে ঘরের মাঠে টেস্ট জেতেনি বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রেও অতীতকে পেছনে ফেলে জয়ের জন্যই মাঠে নামতে মরিয়া মুমিনুল।
‘যখন খেলি জেতার জন্য খেলি। এখানেও এই পরিকল্পনা নিয়েই খেলব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। আগে কী হল না হল এগুলো নিয়ে কখনও চিন্তা করতে পারবেন না। যারা ৫ দিন চাপ সামলাতে পারবে তারাই ম্যাচ জিতবে। অতীতে কী হয়েছে এসব ভূমিকা রাখে না।’
চট্টগ্রামে এর আগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ৪ বার। প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৮ উইকেট ও ৪৬৫ রানের বড় ব্যবধানে পরাজয়। তবে আশার কথা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সর্বশেষ দুই ম্যাচই হয়েছে ড্র।
চট্টগ্রাম মানেই ফ্ল্যাট উইকেট, বোলারদের জন্য থাকে না খুব বেশি কিছু। এমন কন্ডিশনে বাংলাদেশ কি ৪ বোলার নিয়ে খেলবে নাকি ৫ বোলার? এমন প্রশ্নের জবাবে মুমিনুল আজ সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচের আগে উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পুরোনো তরিকার কথা জানালেন।
‘কাল উইকেট দেখে আরেকবার সিদ্ধান্ত নিব, ৪টা বোলার নাকি ৫টা বোলার নিয়ে খেলব। সাকিব ভাই এলে কম্বিনেশন ভালো হয়। হয়ত কাল সিদ্ধান্ত নিতে পারব ৩ পেসার নাকি ২ পেসার।’
বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর দলে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। করোনা পজিটিভ হয়ে প্রথম টেস্টের স্কোয়াড থেকে ছিটকে যান। তবে করোনা নেগেটিভ হয়ে নিজেই প্রথম টেস্ট খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। আজ অনুশীলনে নিজের ফিটনেস নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টকে সন্তুষ্টও করেছেন। পরে মুমিনুল নিজেও নিশ্চিত করেছেন সাকিব একাদশে থাকছেন।
এদিকে চট্টগ্রামে টেস্টের প্রথম ২-৩ দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। যদিও এ নিয়েও বাড়তি ভাবনা নেই টাইগার দলপতির।
‘আবহাওয়ার ব্যাপারটা তো পুরো আল্লাহর হাতে। আমি তো এটা চিন্তা করতে পারব না। এখন তো শীতকালও না। আমার মনে হয় থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। হয়ত ৫-১০ মিনিটের জন্য হবে। এটা নিয়ে চিন্তা করতে পারব না।’
এদিকে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং অর্ডারকে পথ দেখাবেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে, দীনেশ চান্দিমাল, অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস। নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ঠিকই অবগত আছেন তারা।
করুনারত্নে যেমনটা বলছিলেন, ‘সবারই একটা দায়িত্ব আছে। আমি, অ্যাঞ্জেলা আর সিনিয়র ব্যাটারদের হাত তুলতে হবে এবং এই কন্ডিশনে কিছু ভালো ইনিংস খেলতে হবে। আমরা তরুণদের ওপর বেশি চাপ দিতে চাই না। অবশ্যই আপনি যদি গত বছর ধরেন, আমরা খুব ভালো করেছি, আমার মনে হয় আমরা আবার সেটা করতে পারব।’
বাংলাদেশের একাদশ সাজানোর কাজটা সহজ করে দিয়েছেন সাকিব। একজন বোলার কিংবা ব্যাটার বেশি নিয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছে মুমিনুলরা। সে ক্ষেত্রে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী মাহমুদুল হাসান জয়। তিন নম্বরে নাজমুল হোসেন শান্ত, চারে মুমিনুল হক, পাঁচে মুশফিকুর রহিম। বাকি পজিশনগুলো নিয়ে হতে পারে লড়াই।
সাকিবকে নামতে হবে অনেকটা লোয়ার মিডল অর্ডার পজিশনে। সে ক্ষেত্রে ইয়াসির আলি রাব্বির কপাল পুড়তে পারে। বোলিং বিভাগে লড়াইটাও জমিয়ে দিয়েছেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ৯ উইকেট নিয়েও বাদ পড়তে পারেন তাইজুল ইসলাম।
সেক্ষেত্রে মেহেদী হাসান মিরাজের বিকল্প হিসেবে স্কোয়াডে ডাক পাওয়া নাইম হাসানকেও একাদশে দেখা যেতে পারে। ২ স্পিনারের সাথে ৩ পেসার নিয়ে খেলার পথেও হাঁটতে পারে বাংলাদেশ। এবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদের সাথে তৃতীয় পেসার হতে পারেন শরিফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টায় শুরু হবে ম্যাচ।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ:
তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), নাইম হাসান/তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম/নাইম হাসান।