
বায়ো-বাবলকে ইস্যু হিসেবে দাঁড় করিয়ে টেস্ট ফরম্যাট থেকে নাম সরিয়ে নেওয়া মুস্তাফিজুর রহমান খেলছেন না বায়ো-বাবল শিথিল হওয়ার পরও। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে ভালোভাবে, যেখানে নতুন মাত্রা যোগ করলেন জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তার মতে সিনিয়রদের জন্য দেওয়া সুযোগই লুফে নিয়েছেন মুস্তাফিজ, যা তার প্রাপ্য নয়।
গত বছর থেকেই বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) কেন্দ্রীয় চুক্তির আগে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে তাদের খেলতে চাওয়া ফরম্যাট সম্পর্কে জেনে নিচ্ছে। যে ধারাবাহিকতায় তামিম ইকবাল নিজেকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সরিয়ে রাখে। এর বাইরে এই সুবিধা নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ।
বায়ো-বাবল শিথিল হওয়ার পরও টেস্টে না ফেরায় তাকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি বোর্ড কর্তাদের মাঝেও আলোচনা চলছেই। খালেদ মাহমুদ সুজন আজ (৭ মে) মিরপুরে সাংবাদিকদের এ প্রসঙ্গে শোনালেন নতুন তথ্য। কেন্দ্রীয় চুক্তির আগে ফরম্যাট বাছাইয়ের সুবিধা ছিল কেবল সাকিব, তামিম, মুশফিকদের মতো অভিজ্ঞ ও সিনিয়রদের জন্য।
তিনি বলেন, ‘পাপন ভাই বলেছে ৩ মাস আগে খেলোয়াড়েরা যেটা চায় ওটা আলাপ করছে। এটা কিন্তু সিনিয়র ক্রিকেটারদের খাতিরে বলেছে। সবার ক্ষেত্রে না। এখন যদি আপনি জয় যদি বলে আমি ওয়ানডে খেলবো টেস্ট খেলবো না এটা কি ঠিক হল নাকি? মুস্তাফিজের আসলে বয়স কত? কয়দিন ধরে খেলে? মুস্তাফিজতো সাকিব না বা তামিম না কিংবা মাশরাফি না মুশফিক না।’
‘তারা বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে এত বছর ধরে সার্ভিস দিয়েছে। দেশের জন্য খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আর টেস্ট ক্রিকেটের মতো বুনিয়াদি ফরম্যাট তো আর কিছু নাই। হয়তো আপনি বলবেন আলোর ঝলকানি, টাকা পয়সা সেটা সাদা বলের ক্রিকেটে বেশি। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেট তো একটা বুনিয়াদি খেলা। মুস্তাফিজ কেন খেলতে চায় না আমি জানিনা। আমার মতে বোর্ডের সাথে শেয়ার করা উচিত।’
‘আমরা জানি সাকিবের ব্রেক দরকার। সাকিবের বয়স ৩৫, তামিমদের ৩৪-৩৫। ওদের তো একটা ব্রেক দরকার। তাদের এটা প্রাপ্য। লিটন দাস তো এটা ডিজার্ভ করে না। লিটন দাস যদি সাকিব, তামিম হতো তাহলে আমি বলতাম লিটন দাসও ডিজার্ভ করে। মুস্তাফিজ এখন ২৬-২৭ বছর বয়সী। আমাদের ক্রিকেটের ভাষায় একটা ছেলের এটা পিক টাইম।’
‘মানে হাড্ডি, মাড্ডি (হাড়) ভাঙবেনা, ঝুঁকি কম। সুতরাং আমি মুস্তাফিজকে বলতে পারি তুমি বাংলাদেশের সব টেস্ট ম্যাচ খেলো। মুস্তাফিজের অন্তত ৬-৮ বা ১০ টা টেস্ট খেলা উচিত। সেটা করলে আমরা রোটেট করতে পারবো।’
মুস্তাফিজের টেস্ট খেলা উচিত কেন সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। সুজনের মতে এই বাঁহাতি পেসারের মানের ক্রিকেটার তৈরি হলে তখন নাহয় তার প্রয়োজনীয়তা কমাবে বোর্ড। অন্তত এর আগে তাসকিন, শরিফুলদের শরীরের উপর থেকে ধকল কমাতে হলেও তার টেস্ট ফরম্যাটে খেলা উচিত বলে মনে করেন টিম ডিরেক্টর।
তিনি যোগ করেন, ‘আমিতো চাই মুস্তাফিজ টেস্ট ম্যাচ খেলুক, কেন নয়? আমাদের তো এত বোলার নাই। আপনি যদি হাতে গুনেন এবাদত, তাসকিন, শরিফুল, খালেদ খেলল গত সিরিজটা, রাহী… এরপর আপনার বোলার কই? এরপর তো বাংলাদেশের সেরা ফাস্ট বোলার মুস্তাফিজই। অভিজ্ঞতা বলেন, তার নৈপুণ্য বলেন তার টেকনিক্যাল বা ট্যাকটিক্যাল দিক বলুন মুস্তাফিজ সেরা।’
‘আমি মনে করি মুস্তাফিজের এই জন্যই টেস্ট খেলা উচিত…দেখেন আজকে তাসকিন ইনজুরিতে, আমাদের মূল একজন বোলার। সে জায়গায় যদি মুস্তাফিজ থাকতো তাহলে আমাদের একজন অভিজ্ঞ বোলার থাকতো। ব্যালেন্স ঠিক থাকে। তাসকিন-শরিফুল দুজন এমন প্লেয়ার ইনজুরি প্রবণ, তাড়াতাড়ি ইনজুরিতে পড়তে পারে। সেক্ষত্রে আমাদের তো মুস্তাফিজ থাকলে আমরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে…’
‘তিন ফরম্যাট খেলা (সমানতালে) এখন কঠিন, কারণ এতো বেশি খেলা। এখানে সবারই বিরতি প্রয়োজন। তাসকিনের যেমন ব্রেক দরকার, শরিফুলের ব্রেক দরকার। এবাদত যেহেতু একটা ফরম্যাট খেলে, আমরা ধরে নিলাম সে টেস্টে নিয়মিত থাকবে, খালেদেরও একই কারণ সেও অন্য ফরম্যাট খেলেনা। মুস্তাফিজকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য হলেও খেলা উচিত। যখন মুস্তাফিজের মানের খেলোয়াড় তৈরি হয়ে যাবে তখন হয়তো মুস্তাফিজকে আমাদের প্রয়োজন হবে না।’