

খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেটের সাথে আছেন লম্বা সময় ধরে। তবে এখনো পেশাদার ক্রিকেটে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারেননি চট্টগ্রামের উইকেট রক্ষক ব্যাটার সাব্বির হোসেন। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে বছর পাঁচেক আগেই। কিন্তু একটি করে ম্যাচেই আটকে আছে তার এই ক্যারিয়ার। তবে থেমে যাননি, নিজের পাওয়া প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে গেছেন।
ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে নিয়মিত খেলছেন। প্রতি মৌসুমেই দারুণ শুরু পেয়ে থেমে যেতে হত, কারণ যেসব দলে খেলতেন সেসব দল সুপার লিগে উঠতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে ৯-১০ ম্যাচের বেশি খেলার সুযোগ হত না। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ মৌসুমে সাব্বির খেলেছেন র্যাপিড ফাউন্ডেশনের হয়ে। দল সুপার লিগেতো বটেই, দুরন্ত ফর্মে অগ্রণী ব্যাংকের পাশাপাশি নিশ্চিত করে আগামী মৌসুমে ডিপিএল খেলার টিকিটও।
যে পথে সাব্বির ১৬ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রায় ৭০ গড়ে ৫ ফিফটি ৩ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৯০৫। দল ডিপিএলে উন্নতি হওয়ায় আগামী মৌসুমে এই ডানহাতি ব্যাটারকে সুযোগ পাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। দলের মালিক বিসিবির সাবেক পরিচালক হানিফ ভূঁইয়া বেশ সন্তুষ্ট তার পারফরম্যান্সে। ডিপিএলে অন্য কোনো দলে না খেলে র্যাপিড ফাউন্ডেশনে খেলার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন ইতোমধ্যে।
সাব্বির নিজেও চান দারুণ পারফরম্যান্সে যে দলকে ডিপিএলে তুলেছেন সে দলের হয়ে ৫ বছর পর ডিপিএলে প্রত্যাবর্তন করতে। এর আগে ২০১৮ সালে খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতির হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে খেলা ম্যচটিই এখনো পর্যন্ত ডিপিএলে একমাত্র ম্যাচ হয়ে আছে। এবারের ডিপিএলেও অবশ্য দুই-একটি দল আশ্বাস দিয়ে শেষ পর্যন্ত ভেড়ায়নি।
যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই এক মৌসুমে প্রায় হাজার রান করাটা চাট্টিখানি কথা নয়। সাব্বির এবারের ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ৯০৫ রান করার পথে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কোথায়? ‘ক্রিকেট৯৭’ এর সাথে আলাপে এমন প্রশ্নের জবাবে এই ব্যাটারকে শোনালেন দারুণ এক গল্প।
এমনিতে নিজের ব্যাটিং আদর্শ হিসেবে নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনকে অনুসরণ করেন। তবে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান তার ভালো লাগার জায়গায় বিশেষভাবে আছেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সাকিবের অতি মানবীয় পারফরম্যান্সই সাব্বিরের মূল প্রেরণা ছিল।
যে টুর্নামেন্টে সাকিব ব্যাট হাতে ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ৫ ফিফটি, ২ সেঞ্চুরিতে ৬০৬ রান করেছেন। সাকিবের এই কীর্তি ডায়েরিতে টুকে রেখে এরপর যেকোনো টুর্নামেন্ট খেলতে নামার আগে নিজের সাথে চ্যালেঞ্জ নিতেন র্যাপিড ফাউন্ডেশনের ব্যাটার সাব্বির।
তিনি বলেন, ‘এমনিতে আমি কেন উইলিয়ামসনের বড় ভক্ত। তাকে দারুণভাবে অনুসরণ করি। কিন্তু সাকিব ভাই আমার কাছে বিশেষ কিছু। ২০১৯ বিশ্বকাপে উনি যা করেছেন তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। তার এমন কীর্তি আমাকে বেশ ভালোভাবে নাড়া দিত। যেকোনো টুর্নামেন্ট খেলতে গেলেই তার এমন পারফরম্যান্সের কথা মাথায় ঘুরতো।’
‘আমি ডায়েরিতে উনার রানগুলো লিখে রাখতাম আর ভাবতাম উনি বিশকাপের মতো মঞ্চে এমন কিছু করতে পারলে আমি ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে কেন পারবো না? টুর্নামেন্ট শুরুই করতাম আসলে উনার ৬০৬ রানকে পেছনে ফেলার একটা লক্ষ্য নিয়ে। এবার সবকিছু ব্যাটে-বলে মিলে গেছে, আল্লাহর রহমতে যেভাবে শেষ করেছি তাতে সন্তুষ্ট।’
সাব্বিরের পরবর্তী লক্ষ্য আগামী ডিপিএলের আগে নিজেকে আরও শাণিত করা। ডিপিএলে নিজের প্রত্যাবর্তন রাঙাতে ভুল ত্রুটি শুধরে নিতে প্রায় বছর খানেক সময়ও পাচ্ছেন।
তার ভাষ্য, ‘প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠলে দলগুলো আসলে ভিন্নভাবে চিন্তা করে। প্রিমিয়ার লিগতো বড় মঞ্চ, বড় বড় তারকা ক্রিকেটাররা থাকে। যে কারণে প্রথম বিভাগের ক্রিকেটারদের খুব কমই রাখা হয়, সেটা যৌক্তিক কারণেই। তবে আমার পারফরম্যান্সে আমাদের মালিক হানিফ ভূঁইয়া স্যার বেশ খুশি। আর আমারতো আগেরও কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে।’
‘সব মিলিয়ে উনি আমাকে বলে রেখেছে আমি যেন র্যাপিড ফাউন্ডেশনের হয়েই আগামী বছর ডিপিএল খেলি। আর এই দলটায় খেললে আমার জন্যও সুবিধা, অনেকটা পরিবারের মতো। আমিও উনাকে বলেছি আমার সর্বাত্মক দিয়ে চেষ্টা করবো, যে সময় পাচ্ছি তাতে নিজের ভুল ত্রুটি কিছুটা হলেও শুধরে নিতে পারবো।’
এই ব্যাটারের ক্রিকেট যাত্রায় বড় অবদান আছে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের। যাদের মধ্যে অন্যতম আরেক উইকেট রক্ষক ব্যাটার ইরফান শুক্কুর। যেকোনো প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটার ও বর্তমান কোচ আফতাব আহমেদও।
সাব্বির বলেন, ‘আমিতো তপন দার (চট্টগ্রামের জনপ্রিয় প্রবীণ কোচ) কাছে ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করি। পরে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। উনারা ঢাকা লিগ, জাতীয় লিগে নিয়মিত খেলতেন সেসব অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন।’
‘ইরফান শুক্কুর ভাইতো এখনো আমাকে পরামর্শ দিয়ে যান প্রতিনিয়ত, কীভাবে কি করতে হবে, কি করা উচিৎ, কি করা উচিৎ নয় এসব। আর আফতাব ভাইয়ের সাথেও উনার একাডেমিতে কাজ করা হয়েছে, নানা পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও উনার সাথে খুব লম্বা কোনো সেশন করার সুযোগ হয়নি। ‘