

২০১৩ সালে আবাহনীর হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) খেলতে বাংলাদেশে আসা ইংলিশ ক্রিকেটার লুক রাইট ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছিলেন ব্লেন্ডার। এ নিয়ে টুইটারে মজা করে পোস্টও দিয়েছেন এমন ম্যান অব দ্য ম্যাচ এর আগে কখনো দেখেননি বলে।
একই আসরে গাজী ট্যাংকসের হয়ে খেলতে আসা ইংলিশ ব্যাটার এউইন মরগান ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে পান রাইস কুকার। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের খোরাক হয়েছে। এখনো গুগলে অদ্ভুত ম্যাচ সেরার পুরষ্কার খুঁজতে গেলে ঘটনা দুইটি উপরের দিকেই আছে।
এরপর কেটে গেছে প্রায় এক দশক, ব্লেন্ডার, রাইস কুকারের অধ্যায় পেছনে ফেলে ডিপিএলের ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হিসেবে যোগ হয়েছে আর্থিক অঙ্ক। কিন্তু অঙ্কটা এতই কম যে ব্লেন্ডার, রাইস কুকারের সাথে তুলনা করতে গেলে আগের চেয়ে খুব বেশি উন্নতি হয়েছে বলার উপায় নেই।
চলতি ডিপিএলে প্রথম পর্বে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হিসেবে একটি ট্রফি ছাড়া কিছুই ছিল না। সুপার লিগ পর্ব থেকে আর্থিক অঙ্ক যুক্ত হয়, পরিমাণ মাত্র ৫ হাজার টাকা। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জেতা তামিম ইকবালের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই হাস্য রসের খোরাক।
দেশের সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন একটি টুর্নামেন্টে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হিসেবে যা নগন্যই বলা চলে। পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটের সাথেও যদি তুলনা করা হয় ডিপিএলের ম্যাচ সেরার পুরষ্কার পিছিয়ে আছে বড় ব্যবধানেই। অথচ ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক বিপিএলের (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) পর দেশের অন্যতম জমজমাট ও ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট এটি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়ে ‘ক্রিকেট৯৭’ এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সিসিডিএম (ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস) সমন্বয়ক আমিন খানের সাথে। তার দাবি টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পন্সর ওয়ালটনই ঠিক করে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার কি হবে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবির) ডিপিএলের সাথে জড়িত বলে কিছুটা দায় নিজেদেরও স্বীকার করছেন এই কর্মকর্তা। এমনকি ভবিষ্যতে আরেকটু ভালো পরিমাণ অর্থ থাকবে বলেও আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ‘আসলে নিয়ম অনুসারে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার কি হবে কিংবা কি পরিমাণ অর্থ হবে সেটা নির্ধারণ করে থাকে টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যেহেতু এটি বোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত টুর্নামেন্ট সেহেতু আমাদেরও আরেকটু সচেতন হওয়া যেত। বোর্ডের মর্যাদার একটা বিষয় জড়িয়ে আছে। আমরা ইতোমধ্যে টাইটেল স্পন্সরের সাথে কথা বলেছি, আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আগামী মৌসুমে অবশ্যই এটা পরিবর্তন হবে, অন্তত একটা ভালো মানের আর্থিক অঙ্ক থাকতে পারে।’
বলা বাহুল্য পাকিস্তানের ঘরোয়া ন্যাশনাল ওয়ানডে কাপের ম্যাচ সেরার পুরষ্কার ৫০ হাজার পাকিস্তানি রুপি। দেশটির লঙ্গার ভার্সন টুর্নামেন্টে কায়েদ-ই-আজম ট্রফির ফাইনালের ম্যাচ সেরার পুরষ্কার ৫০ হাজার পাকিস্তানি রুপি। কায়েদ-ই-আজম ট্রফির ওয়ানডে ভার্সনের ফাইনালের ম্যাচ সেরার পুরষ্কার আবার দ্বিগুন, ১ লাখ পাকিস্তানি রুপি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) আয়োজনের আগে থেকেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজন করে আসছে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ। ২০০৪-০৫ মৌসুমে যাত্রা করা এই টুর্নামেন্টের ম্যাচ সেরার পুরষ্কার ২৫ হাজার পাকিস্তানি রুপি গত এক যুগ ধরে।
ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো হল রঞ্জি ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফি, সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি। চারদিন, একদিন ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট তিনটির ম্যাচ সেরার পুরষ্কার সমানভাবে ২৫ হাজার ভারতীয় রুপি।
অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়া শ্রীলঙ্কার ন্যাশলাল সুপার লিগের (ওয়ানডে ফরম্যাট) ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও ৫০ হাজার লঙ্কান রুপি। লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত মেজর ক্লাব টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও প্রায় একই রকম। আর চারদিনের ফরম্যাট ন্যাশনাল সুপার লিগের ম্যান অব দ্য ফাইনালের পুরষ্কারতো চোখ কপালে তোলার মতো, ৫ লাখ লঙ্কান রুপি। ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও বেশ ভালো অঙ্কের।