

পারভেজ রাসুল, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা আটকে আছে একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। অভিষেকে খারাপ না করলেও অদ্ভুত কারণে দ্বিতীয় দফা সুযোগ আসেনি। তবে এইটুকুতেই যে ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন এই বোলিং অলরাউন্ডার। জম্মু কাশ্মীরে প্রথম ও এখনো পর্যন্ত একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন ভারত জাতীয় দলে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিপিড়ীত রাজ্যটির প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাক পান আইপিএলেও।
তার দেখানো পথে হেঁটে আইপিএল মঞ্চে বাজিমাত করছে উমরান মালিক, আব্দুল সামাদরা। তবে এখনো জম্মু কাশ্মীরের ক্রিকেট অবকাঠামো নিয়ে খুব একটা সচেষ্ট নয় রাজ্যের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) খেলতে এসে ‘ক্রিকেট৯৭’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাসুল এসবের বাইরেও শুনিয়েছেন বেশ কিছু গল্প…
ক্রিকেট৯৭: আপনি জম্মু কাশ্মীরের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ভারতের হয়ে খেলেছেন। এখন নিশ্চয়ই জম্মু কাশ্মীরের তরুণরা ক্রিকেটে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়?
রাসুল: প্রথমত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে আমিই জম্মু কাশ্মীরের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএল, ভারতের হয়ে খেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছি দলের জন্য সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
অবশ্যই এখন জম্মু কাশ্মীরের ছেলেরা আরও অনুপ্রাণিত। আপনি যদি খেয়াল করেন আমার আইপিএল ও ভারতের হয়ে খেলার পর প্রচুর ক্রিকেটার উঠে আসছে ওখান থেকে। উদাহরণ হিসেবে আব্দুল সামাদ, উমরান মালিক। তারা জম্মু কাশ্মীর থেকে উঠে আসা দারুণ প্রতিভা, বেশ সম্ভাবনাময়।
ক্রিকেট৯৭: জম্মু কাশ্মীরের অপর্যাপ্ত ক্রিকেট অবকাঠামো নিয়ে অভিযোগ পুরোনো। আপনি একাই লড়ে যাচ্ছেন সেখানকার পরিস্থিতি বদলে। বর্তমান অবস্থা কেমন?
রাসুল: অবকাঠামোর দিক থেকে এখনো সেখানে অপর্যাপ্ত অবস্থা। যখন আমি আইপিএল ও ভারতের হয়ে খেলি আমার খুব দৃঢ় বিশ্বাস ছিল জম্মু কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বোধহয় এবার নতুনভাবে ভাববে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা যেভাবে সামনে এগোনো দরকার ছিল সেভাবে করেনি। কিছুটা উন্নতি হয়েছে ঠিক, তবে সেটা কোনভাবেই পর্যাপ্ত নয়। যেটা হয়েছে সেটা কোনভাবেই ৩০ শতাংশও বলা যায় না। আমি যদি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে তুলনা করি তাহলে সেটা হয়তো অন্যদের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ হবে। আমাদের মাত্র একটা মাঠ।
ক্রিকেট৯৭: কোনো নির্দিষ্ট কারণ কি আছে এর পেছনে?
রাসুল: আমি জানি না কেন? আমি কোনভাবেই বুঝতে পারিনা, কোনো নির্দিষ্ট কারণও খুঁজে পাই না কেন তারা পিছিয়ে থাকে, উন্নতি করে না। এটার পুরো দায়িত্ব কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনের। প্রতি বছর বিসিসিআই টাকা দিচ্ছে, তারা ক্রিকেটের ভালোর জন্য সবসময় সবকিছু করছে। ক্রিকেট উন্নতিতে বিসিসিআই সবার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু দিন শেষে আমি কোনো উত্তর খুঁজে পাই না কেন আমাদের অ্যাসোসিয়েশন অবকাঠামোর দিক থেকে উন্নতি করতে পারছে না কিংবা করে না।
ক্রিকেট৯৭: আপনার রাজ্য থেকে এর আগে কোনো ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেনি। সে ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করতেন?
রাসুল: নিজেকে এভাবে অনুপ্রাণিত করা কঠিন ছিল। ২০১২-১৩ মৌসুমে বিষাণ সিং বেদি স্যার আমাদের (রঞ্জি ট্রফির জম্মু কাশ্মীর দল) কোচ হয়ে আসেন। সে আমাকে বেশ দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। নেটে আমাকে গভীর মনযোগ দিয়েছে। প্রথম দিনই সে আমাকে বলেছে তুমি তোমার রাজ্যের সেরা অফ স্পিনার। যা আমার কাছে একটা ‘কিক’ হয়ে এসেছে। আমার মানসিকতা বদলে দিয়েছে। এরপর আমার মনে আছে আমরা একটা ট্রায়াল ম্যাচ খেলছিলাম। যেখানে আমি ৩ বা ৪ উইকেট নিয়েছি, বিষাণ সিং স্যার আমাদের নির্বাচকদের বলল এই রাজ্য থেকে যদি কেউ প্রথম ভারতের হয়ে খেলে এই ছেলে হল সে।
নির্বাচকরা মনে করেছিল উনি মজা করছেন কারণ তারা এভাবে পর্যবেক্ষণও করেনি, ভাবেওনি। কিন্তু উনিতো কিংবদন্তী। ঐ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে আমি ৩০ এর বেশি উইকেট ৫০০ এর বেশি রান করি। আমরা কয়েকটি ম্যাচও জিতি যেখানে একা হাতে আমিই জিতিয়েছি কিছু। ঐ মৌসুমের পারফরম্যান্সেই আমি ভারত ‘এ’ দলের হয়ে খেলি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দিল্লিতে ঐ ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যায়। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের হয়ে সুযোগ হয়। যে ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়েছি আমি, এটাকে টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়।
এরপরেই আমি আইপিএলে ডাক পাই, ভারতের হয়ে ডাক পাই জিম্বাবুয়ে সফরে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঐ সফরে আমি কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি। তবে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ায় সফর করেছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো পারফরম্যান্স করি। পরের রঞ্জি ট্রফিতে দেশসেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হই, লালা অমরনাথ ট্রফি জিতেছি। এরপরই আবার ভারত দলে ডাক পেয়েছি বাংলাদেশ সফরের জন্য, এখানেই আমার অভিষেক হয় ওয়ানডেতে। দুই উইকেট নিয়েছিলাম, এনামুল হক বিজয় ও মুশফিকুর রহিমের উইকেট ছিল। এভাবেই আসলে আমার ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলেছে।
ক্রিকেট৯৭: আপনার ক্রিকেটে হাতেখড়ি বাবার কাছে। পরিবারের সমর্থন কতটা ভূমিকা রেখেছে?
রাসুল: অবশ্যই আমি খুবই ভাগ্যবান যে একটা ক্রিকেটীয় পরিবারে জন্মেছি। আমার বাবা একজন ক্রিকেটার ছিলেন। আমি জম্মু কাশ্মীরের খুব ছোট একটা শহরে জন্মেছি। শ্রীনগরের কাছাকাছি বিজবেহারাতে। আমি বড় কোনো শহুরে পরিবেশে বেড়ে ওঠা কেউ না। আমি একজন গ্রাম্য ছেলে বলা যায়। আমার পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই বাবার সমর্থন বলে বোঝানো যাবে না। আমার বাবার পাশাপাশি ভাইও যথাসাধ্য সাহায্য করেছে। সে নিজেও বিজয় হাজারে ট্রফি খেলেছে, আর সেটা আমার আগে। অবশ্যই এসব আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
ক্রিকেট৯৭: আপনার বোলিং উন্নতিতে বিষাণ সিং বেদীর একটা প্রভাব আছে। তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
রাসুল: এটা আলাদা করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না কতটা প্রভাব রেখেছে। আমার মনে পড়ে অনুশীলন শেষে আমরা সবাই একটা জায়গায় উনার সামনে বসতাম। উনি একের পর এক অনুপ্রেরণামূলক বার্তা, গল্প শোনাতেন আমাদের। সে আমাদের বলতো সামনে এগোবে এবং লড়বে। শুধু অংশগ্রহণ করার জন্য যাওয়ার দরকার নেই। উনি আমাদের কোচ হয়ে আসার পর দেখবেন আমাদের রাজ্য দলের পারফরম্যান্সও বদলে গিয়েছে। উনি শুধু যে আমাকে বদলে দিয়েছেন তা না, উনার কথায় প্রতিটি ছেলেই অনুপ্রাণিত হত।
ক্রিকেট৯৭: আইপিএলে আপনার অভিজ্ঞতাটা রোমাঞ্চকর। বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেট নিলেন। এই পারফরম্যান্সে এরপর পুনে ওয়ারিয়র্সের হয়ে নাম লেখানোর আগে নাকি চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি আপনাকে দল নিতে চেয়েছে? অথচ এখন নিলামে অবিক্রিত থাকেন। ব্যাপারটা কেমন অনুভব হয়?
রাসুল: হ্যাঁ আমাকে চারটা দল প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি পুনে ওয়ারিয়র্সের হয়ে ডাক পাই প্রথমে। ২০১৩ সালে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ৪ ওভারে ২০ রানের মতো (২৩) খরচ করে এক উইকেট (জ্যাক ক্যালিসের) নিয়েছি। কিন্তু ঐ মৌসুমে দুই ম্যাচের বেশি সুযোগ পাইনি। পরের মৌসুমে আবারও দেশসেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হই (ঘরোয়া ক্রিকেটে)। আবারও সুযোগ পাই সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে। দুই মৌসুম সেখানে কাটিয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে যোগ দিই।
আইপিএলেও আমি সেভাবে সুযোগ পাইনি, জানি না ঠিক কেন? এরপর তো দলই পাচ্ছিলাম না। অথচ আমার ঘরোয়া পারফরম্যান্স দিনে দিনে তখন উন্নত হচ্ছিল, আমিও পরিণত হচ্ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। গত ৩-৪ মৌসুমে আমি ১০০ এর বেশি উইকেট ও প্রায় ১ হাজারের মতো রান করেছি। ভালো পারফর্ম করছি আলহামদুলিল্লাহ, আর এটাই কিন্তু আমার কাজ। আমি আমার এই কাজটাই কেবল করে যেতে পারি, নির্বাচন তো আর আমার হাতে নেই।
বিষাণ সিং বেদি স্যার সবসময় বলতেন নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন সব জিনিসই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে। সে ক্ষেত্রে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে কেবল নিজেদের পারফরম্যান্সটাই। আমরা সেরা পারফরম্যান্সের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিতে পারি, বাদ বাকি কিছুই আমাদের হাতে নেই।
ক্রিকেট৯৭: ঢাকার ক্রিকেটে আপনি নিয়মিত মুখ। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিটা আপনি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করেন?
রাসুল: এটা আমার চতুর্থ মৌসুম ঢাকা লিগে। আমি সত্যি উপভোগ করি এখানে ক্রিকেট খেলাটা। ভারতের বাইরে আমি ইংল্যান্ড কিংবা অন্য কোনো দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলিনি বাংলাদেশ ছাড়া। এখানকার ক্রিকেট সবসময় আমার কাছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনে হয়। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা আসেন, তাদের সাথে খেলেও দিন দিন নিজেকে কিছুটা হলেও উন্নত করা যায়।
কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আপনি বোলার হিসেবে ভালো মানের ব্যাটারকে বল করছেন ঠিক ব্যাটিং করার সময়ও ভালো মানের, সর্বোচ্চ পর্যায়ের বোলারকে মোকাবেলা করছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে এমন প্রচুর খেলোয়াড় এখানে অংশ নেয়। ফলে শেখার জায়গাটা বিস্তৃত। আমি নিজে অনেক উপভোগ করি, সাথে আলহামদুলিল্লাহ ভালো পারফর্মও করছি।
ক্রিকেট৯৭: ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সাথে এখানকার নির্দিষ্ট কোনো পার্থক্য খুঁজে পান?
রাসুল: খুব বেশি না। তবে একটা জায়গায় সুক্ষ্ম একটা পার্থক্য চোখে পড়েছে। আর সেটা হল উইকেট। বিকেএসপিতে খুব বেশি ফ্ল্যাট উইকেট। ভারতে হয় কি আপনি এমন সব উইকেটে খেলবেন যেখানে ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদের জন্যও কিছু না কিছু থাকে। আমার মতে এ জায়গাটায় উন্নতি করা, এটা নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন আছে।
ক্রিকেট৯৭: ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা খেলোয়ারদেরও নানাভাবে পুরষ্কৃত করা হয়। যেমন আপনি লালা অমরনাথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, বিসিসিআই কর্তৃক রঞ্জি ট্রফির সেরা অলরাউন্ডার হয়েছে একাধিকবার। আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশেও ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্মের জন্য এমন উদ্যোগ, স্বীকৃতি থাক উচিৎ?
রাসুল: অবশ্যই। ভারতে প্রতি বছর এই পুরষ্কারের ব্যবস্থা থাকে, পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এটা ক্রিকেটারদের ভারতের হয়ে ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলতে নিশ্চিতভাবে অনুপ্রাণিত করে। এই সিস্টেমটা এখানেও সংযুক্ত করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়। এটা ক্রিকেটারদের উৎসাহী করবে। যেমন তরুণ ক্রিকেটাররা বছরের সেরা ব্যাটার, বোলার, অলরাউন্ডার পুরষ্কার জেতার জন্য নিজেদের আরও বেশি নিংড়ে দিবে।
ক্রিকেট৯৭: আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে আছে একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। আপনি কি মনে করেন জাতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ আপনি পেয়েছেন?
রাসুল: অবশ্যই। তবে আমি যেটা বলেছি আগে আমার হাতে করণীয় আছে শুধু একটা জিনিস, পারফরম্যান্স। নিজের সেরাটা বের করে আনার চেষ্টা করতে পারি। পারফরম্যান্স বিবেচনায় আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার কাজটা করে যাচ্ছি। কিন্তু নির্বাচিত হওয়াটা আমার হাতে নাই। আমি তিনবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি, প্রথম জিম্বাবুয়ে সফরে, পরে বাংলাদেশ এবং সর্বশেষে ইংল্যান্ডে। মিরপুরে একটা ম্যাচ খেলতে পেরেছি, ফ্ল্যাট উইকেট ছিল, দুই উইকেট নিয়েছি (একমাত্র ওয়ানডে ২০১৪)।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও এক উইকেট পেয়েছি, এউইন মরগানের (একমাত্র টি-টোয়েন্টি ২০১৭)। এর আগে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলি, ৩ উইকেট নিয়েছি। বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস ও জস বাটলার ছিল সেই উইকেট তিনটি। আমি পারফর্ম করছি। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ পাইনি অবশ্যই। কারণ মাত্র এক ম্যাচে আপনি একজন খেলোয়াড়ের সবকিছু দেখতে পারবেন না। অন্তত দুই-তিনটা ম্যাচ টানা সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
ক্রিকেট৯৭: এর আগে ঢাকা লিগে খেলে গেলেও এবারই প্রথম রমজানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কেমন উপভোগ করছেন?
রাসুল: হ্যাঁ এবারই প্রথম রমজান মাসে আমি বাংলাদেশে। এর আগে আমার প্রথম মৌসুমে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেবার রমজান পাইনি। ফলে রমজানে এবারই প্রথম ঢাকায় কাটাচ্ছি। আমি খুব উপভোগ করছি। কিন্তু গরম ও রোজা রেখে খেলতে হয় বলে কাজটা খুব কঠিন।
ক্রিকেট৯৭: আপনার দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে। শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ সামনে। দলের পরিবেশটা কেমন এখন?
রাসুল: টুর্নামেন্টের শুরুতে যদি দেখেন কাগজে-কলমে আমরা গড়পড়তা একটা দলই ছিলাম। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমরা দারুণ করছি। আমাদের ম্যানেজমেন্টকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। যারা ক্রিকেটারদের বেশ চমৎকার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। আমাদের সিনিয়র ও জুনিয়র ক্রিকেটারের ভালো একটা সমন্বয় আছে।
আমার মতে এই টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত আমাদের টেনে নিচ্ছে বোলাররা। আমাদের বোলিং আক্রমণ অসম্ভব ভালো করছে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন আমরা ১৫০ এর নিচে পুঁজি নিয়েও ম্যাচ জিতেছি, ১৯০ করে ম্যাচ জিতেছি। আমার মনে হয় আমাদের বোলিং আক্রমণ যথেষ্ট ভালো, তবে সুপার লিগে আমাদের ব্যাটারদের আরও দায়িত্ববান হতে হবে।
ক্রিকেট৯৭: আপনি নিজেও বল হাতে দারুণ করছেন। প্রথম পর্বে ২০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। টুর্নামেন্ট শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
রাসুল: আলহামদুলিল্লাহ বল হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছে। আমি এটা টেনে নিতে চাই টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমার একটা লক্ষ্য যেন দলে অবদান রাখতে পারি। এটাই আমার মূল কাজ। ব্যাটিং দিয়েও চেষ্টা থাকে যদিও উপরর দিকে সেভাবে সুযোগ হয়নি কম্বিনেশনের জন্য। একটা ম্যাচে উপরের দিকে খেলতে পেরেছি, তো যখনই সুযোগ আসবে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবো দলের জন্য।
ক্রিকেট৯৭: প্রথম পর্বে আবাহনীর বিপক্ষে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং করলেন (২৯ রানে ৫ উইকেট)। নিশ্চয়ই চমৎকার এক স্মৃতি হয়ে থাকবে…
রাসুল: আমি এর আগেও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট ৫ উইকেট পেয়েছিলাম। এটা আমার দ্বিতীয় বার ৫ উইকেট পাওয়া। কিন্তু এটার আলাদা একটা মর্যাদা আছে, আবাহনীর মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এমন বোলিং করতে পারা তৃপ্তির। যেখানে ভারতীয় টেস্ট দলের ব্যাটার হনুমা বিহারি ছিল, তার উইকেটও পেয়েছি।