তাইজুলের দিনে বাংলাদেশকে ফলো অনের শঙ্কায় রাখলো ব্যাটাররা

তাইজুলের দিনে বাংলাদেশকে ফলো অনের শঙ্কায় রাখলো ব্যাটাররা
Vinkmag ad

আগেরদিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরেকটু চাপে রাখতে না পারার আফসোস করেছিল বাংলাদেশ স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তবে দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে অলআউট করা গেলেও আফসোস ততক্ষণে বেড়ে যাওয়ার কথা আরও। ৩০০ রানে ৬ উইকেট হারানো প্রোটিয়ারা থেমেছে ৪৫৩ রানে, যেখানে কেশব মহারাজ ক্যারিয়ার সেরা ৮৪ রানের ইনিংস খেলে বিরক্তির বড় কারণ হতে পারেন।

সফরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ৬ উইকেট শিকারে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তাইজুল।

কিন্তু দিন শেষে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় আফসোস বেড়ে হতাশায় রূপ নেওয়ার কথা। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করেছে যে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের হয়ে আগুন ঝরিয়েছেন পেসার উইয়ান মুলডার ও ডুয়েনে ওলিভিয়ার।

ফলো অনের শঙ্কায় পড়ে পিছিয়ে আছে ৩১৪ রানে। আশার আলো হয়ে মুশফিকুর রহিম ৩০ ও ইয়াসির আলি রাব্বি ৮ রানে অপরাজিত আছেন।

৫ উইকেটে ২৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কাইল ভেরেনে ১০ ও উইয়ান মুলডার ০ রানে অপরাজিত ছিলেন।

দ্বিতীয় দিন শুরুতেই দারুণ বোলিং করেন পেসার খালেদ আহমেদ। তবে তার বলে বাংলাদেশ নষ্ট করে রিভিউ। দিনের প্রথম ওভারের শেষ বলে ভেরেনের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন। আম্পায়ার নাকচ করে দিলে রিভিউ নেয় টাইগাররা, টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিস করতো স্টাম্পই।

বল হাতে অস্বস্তিতে ফেলা খালেদের সাথে কথার লড়াইও জমে যায় ভেরেনের। দিনের পঞ্চম ওভারে ভেরেনের ডিফেন্স করা বল অহেতুক স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে থ্রো করে পরিবেশ উত্তপ্ত করে দেন খালেদ। আম্পায়ারের দ্বারস্থ হয় ভেরেনে, আম্পায়ার দ্বারস্থ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুলের।

এক ওভার পর ফিরে এসেই ভেরেনেকে বোল্ড করে তৃপ্তির উদযাপনে মেতে ওঠেন খালেদ। ফুলার লেংথের ডেলিভারিতে ভাঙে মিডল স্টাম্প। ৪৮ বলে ২২ রানেই থামতে হয়ে ভেরেনেকে। দলীয় ৩০০ রানে ৬ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ভেরেনেকে ফিরিয়েই যেন বিপদ ডেকে আনে বাংলাদেশ। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন কেশব মহারাজ। ক্রিজে আসার পর দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে যোগ হওয়া ১৫৩ রানের ৮৪ এসেছে তার ব্যাট থেকে।

খালেদের করা ৯৯তম ওভারে হাঁকান ২ চার। তাইজুলের করা ১০১তম ওভারে হাঁকান সমান একটি করে চার, ছক্কা। তাইজুলের পরের ওভারেও তার ব্যাটে আসে ছক্কা, দ্রুত রান তোলাতেই ছিল পূর্ণ মনযোগ। কেশবের সাথে এক পর্যায়ে রান তোলাতে যোগ দেন মুলডারও।

১১২ তম ওভারে মেহেদী মিরাজকে ছক্কা মেরে ৫০ বলেই ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট ফিফটি তুলে নেন কেশব। তবে লাঞ্চের কিছু সময় আগে মুলডারকে ফেরান তাইজুল, ভাঙে কেশবের সাথে ৮০ রানের জুটি। ৭৭ বলে ৩৩ রান তার ব্যাটে।

৭ উইকেটে ৩৮৪ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কেশব ৫৫ ও সিমন হারমার ৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।

লাঞ্চের পর দলীয় সংগ্রহ ৪০০ পার হয় দুজনের ব্যাটে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দিকে ছুটছিলেন কেশব। যদিও ১১৯তম ওভারে এবাদতের বলে ৫৮ রানে জীবন পান, প্রথম স্লিপে তালুবন্দী করতে পারেননি ইয়াসির আলি।

তবে তাইজুলের পঞ্চম শিকার হয়ে কেশবকে ফিরতে হয় সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়েই। স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ৯৫ বলে ৯ চার ৩ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৮৪ রান করে। তাইজুলের ৬ষ্ঠ শিকার হয়ে হারমার থামেন ৫৯ বলে ২৯ রান করে।

আর তাতেই দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ১৫০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তাইজুল। তার আগে এই কীর্তি গড়েন সাকিব আল হাসান।

লিজাড উইলিয়ামসকে (১৩) ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ইতি টানেন মিরাজ। ৪৫৩ রানে আটকানোর পথে বাংলাদেশের হয়ে ৫০ ওভার বল করে তাইজুলের ৬ শিকার ১৩৫ রান খরচায়। ৩ উইকেট নেওয়ার পথে খালেদের খরচ ১০০ রান।

জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের পঞ্চম বলেই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে হারায় বাংলাদেশ। ডুয়েনে অলিভিয়ারের পঞ্চম স্টাম্প তাক করে করে আউট সুইঙ্গারে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন আগের ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকানো জয় (০)।

সেখান থেকে তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বেশ সাবলীল ব্যাটিং এক বছর পর টেস্ট খেলতে নামা তামিম ইকবালের। উইলিয়ামসের করা চতুর্থ ওভারে ৩ চার হাঁকান তামিম।

স্পিনার সিমন হারমার আক্রমণে এসে অবশ্য কিছুটা অস্বস্তি উপহার দেন। ইনিংসের ১৪তম ওভারে শান্তর বিপক্ষে স্টাম্পিংয়ের আবেদনও হয়, তবে বেনেফিট অব ডাউটে বেঁচে যান।

১৪ ওভারেই ৫০ পেরোনো বাংলাদেশ তামিম-শান্তর ব্যাটে নিয়মিতই বাউন্ডারি পাচ্ছিলো।

তবে ইনিংসের ২১তম ওভারে প্রথম বল হাতে নিয়েই তামিমকে ফিরিয়ে ৭৯ রানের জুটি ভাঙেন উইয়ান মুলডার। ৫৭ বলে ৮ চারে ৪৭ রান করেন এই বাঁহাতি। ৩ রানের ব্যবধানে মুলডারের পরের ওভারে ফেরেন শান্তও (৭৪ বলে ৩৩)।

অফ স্পাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে হন এলবিডব্লিউ, শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল দক্ষিণ আফ্রিকা।

৮৫ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে পথ দেখাতে পারতেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। কেশব মহারাজের বলে জীবন পান ব্যক্তিগত ১ রানে, স্লিপে ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেনি কিগান পিটারসেন।

তবে জীবন পেয়েও ফর্মহীনতা থেকে বের হতে পারেননি, মুলডারের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ৬ রানে। এক পাশ মুশফিকুর রহিম আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে ফিরে যান লিটন দাসও (১১)। ওলিভিয়ারের বলে বোল্ড হলে ১২২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা।

দিনের বাকি অংশে অবশ্য আর কোনো বিপদ ঘটেনি। ৫ উইকেটে ১৩৯ রানে দিন শেষ করার পথে মুশফিক ৩০ ও ইয়াসির আলি রাব্বি অপরাজিত আছেন ৮ রানে। ফলো অন এড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন আরও ১১৫ রান। মুলডার ৬ ওভারে ৩ মেডেনসহ ১৫ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট, ওলিভিয়ারের ২ উইকেট ১৭ রান খরচায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (২য় দিন শেষে):

দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫৩/১০ (১৩৬.২), এলগার ৭০, এরউই ২৪, পিটারসেন ৬৪, বাভুমা ৬৭, রিকেলটন ৪২, ভেরেনে ২২, মুলডার ৩৩, মহারাজ ৮৪, হারমার ২৯, উইলিয়ামস ১৩, অলিভিয়ার ০*; খালেদ ২৯-৬-১০০-৩, মিরাজ ২৬.২-৪-৮৫-১, তাইজুল ৫০-১০-১৩৫-৬

বাংলাদেশ ১৩৯/৫ (৪১), তামিম ৪৭, জয় ০, শান্ত ৩৩, মুমিনুল ৬, মুশফিক ৩০*, লিটন ১১, রাব্বি ৮*; অলিভিয়ার ৯-৪-১৭-২, মুলডার ৬-৩-১৫-৩

বাংলাদেশ ৩১৪ রানে পিছিয়ে।

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

শ্রীলঙ্কার নতুন হেড কোচ ক্রিস সিলভারউড

Read Next

ড্রেসিং রুমে স্বস্তি ফিরিয়েও মানসিক দুর্বলতায় আউট হয়েছেন তামিম: সিডন্স

Total
0
Share