

নানা বিতর্ক, সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। স্লেজিং কান্ডে বিতর্কিক বাংলাদেশকে তো পুরুষের মতো লড়ে ক্রিকেট খেলার পরামর্শও দেন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ডিন এলগার। প্রথম দিন শেষে অবশ্য দুই দলই আছে সমানে সমান অবস্থানে।
অধিনায়ক এলগার (৭০), কিগান পিটারসেন (৬৪) ও টেম্বা বাভুমার (৬৭) ফিফটিতে ৫ উইকেটে ২৭৮ রান তুলে দিন শেষ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের হয়ে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম তিনটি ও পেসার খালেদ আহমেদ নেন দুইটি উইকেট।
সেন্ট জর্জ পার্কে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত প্রোটিয়াদের। তারা অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নামলেও বাংলাদেশ একাদশে আসে দুই পরিবর্তন। এক বছর পর| টেস্ট একাদশে তামিম ইকবাল, তাকে জায়গা দিতে বাদ পড়েন সাদমান ইসলাম। অন্যদিকে চোটের কারণে পেসার তাসকিন আহমেদ দেশে ফেরায় তার জায়গায় খেলছেন স্পিনার তাইজুল।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ফিরতে পারতেন ওপেনার সারেল এরউই। ব্যক্তিগত ৪ রানে ব্যাট করছিলেন, খালেদ আহমেদের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে পরাস্ত হন এরউই। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার, খালেদের সাথে আলাপ করে টাইগার কাপ্তান মুমিনুল রিভিউ নিতে নিতেই সময় শেষ।
এরপর খুব একটা অস্বস্তিতে ফেলা যায়নি প্রোটিয়াদের। তবে এরউই যেতে পারেননি বেশি দূর। খালেদের বলে ৪০ বলে ২৪ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ভাঙে ডিন এলগারের সাথে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
এরউই ফিরলেও অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেছেন এলগার। কিগান পিটারসেনকে নিয়ে লাঞ্চের আগে যোগ করেন ৫৫ রান। ততক্ষণে ৬৬ বলে তুলে নেন ফিফটি। সিরিজে এটি তার টানা তৃতীয় ফিফটি।
১ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ৫৯ রানে এলগার ও ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন পিটারসেন।
লাঞ্চের পর অবশ্য এলগার টিকেননি বেশিক্ষণ। তাকে ফেরান সফরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের ৩৩ ও নিজের ৮ম ওভারের ৫ম বলটি করেন অফ স্টাম্পের খানিক বাইরে, ছিল বাড়তি গতি। এলগারের ব্যাট ছুঁয়ে গ্লাভসবন্দী হয় লিটন দাসের। ৮৯ বলে ১০ চারে ৭০ রান করেন এলগার।
এবাদত হোসেনের করা পরের ওভারের শেষ ৩ বলে টানা চার মেরে ৭৪ বলে চতুর্থ টেস্ট ফিফটি তুলে নেন পিটারসেন। টেম্বা বাভুমকা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ভালোভাবেই। দলীয় ১৫৬ রানে বৃষ্টি নামে পোর্ট এলিজাবেথে। খেলা বন্ধ ছিল প্রায় আধা ঘন্টা।
বৃষ্টির কারণে চা বিরতি পিছিয়ে যায় ২০ মিনিট। আর সে সুযোগে তাইজুল তুলে নেন আরও এক উইকেট। বাভুমা-পিটারসেনের ৫১ রানের জুটি ভাঙে পিটারসেন এলবিডবিউর ফাঁদে পড়লে। ১২৪ বলে ৯ চারে তার ব্যাটে ৬৪ রান, অবশ্য শুরুতে সাড়া দেয়নি আম্পায়ার। এ দফায় রিভিউ নিতে দেরি করেনি বাংলাদেশ।
চা বিরতির আগে স্বাগতিকদের স্কোরবোর্ডে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান। বাভুমা ৩৩ ও আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া রায়ান রিকেলটন অপরাজিত ছিলেন ৭ রানে।
চা বিরতির পর মিরাজের করা ইনিংসের ৭০তম ওভারে চার মেরে ১১৩ বলে ক্যারিয়ারের ১৯তম ফিফটি ছুঁয়েছেন বাভুমা।
যেভাবে ব্যাট করছিলেন বাভুমা-রিকেলটন তাতে অনায়েসেই দিন পার করে দিবেন বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু ৮২তম ওভারে পুরাতন বলে শেষ ওভার করা তাইজুল তুলে নেন রিকেলটনকে।
এ দফায়ও রিভিউ নিয়ে ৮৩ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল। রিভার্সু সুপের চেষ্টা রিকেলটনের, কিন্তু গ্লাভস হয়ে বল ধরা পড়ে স্লিপে দাঁড়ানো ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল বাংলাদেশ। ৮২ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৪২ রান রিকেলটনের ব্যাটে।
পরের ওভারেই নতুন বল নিয়ে ভালোই ভোগাতে শুরু করন খালেদ। ৪ রানের ব্যবধানে বাভুমাকে ফেরানও। অফ স্টাম্পের একটি বাইরে ফেলা গুড লেংথ ডেলিভারি খোঁচা মেরে প্রথম স্লিপে পাঠান বাভুমা, দারুণ এক ক্যাচ লুফেও নেন শান্ত। ১৬২ বলে ৭ চারে ৬৭ রানের ইনিংসটি সাজান এই ব্যাটার।
এরপর দিনের শেষ সময়টুকু অবশ্য আর কোনো বিপদ ছাড়াই পার করেন কাইল ভেরেনে (১০*) ও উইয়ান মুল্ডার (০*)। ২০ ওভারে ৫৯ রান খরচায় খালেদের দুই ও ৩২ ওভারে ৭৭ রান খরচায় তাইজুলের তিন উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (১ম দিন শেষে):
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭৮/৫ (৯০), এলগার ৭০, এরউই ২৪, পিটারসেন ৬৪, বাভুমা ৬৭, রিকেলটন ৪২, ভেরেনে ১০*, মুলডার ০*; খালেদ ২০-৪-৫৯-২, তাইজুল ৩২-৭-৭৭-৩।