

ডারবান টেস্টে চারদিন এগিয়ে থেকেও মাত্র দুই সেশন খারাপ ক্রিকেট খেলে বড় ব্যবধানে পরাজয় বরণ করে নিতে হয় বাংলাদেশকে। ৫৩ রানে অলআউট হওয়ার বেদনার সাথে এক গুচ্ছ বিতর্ক, সমস্যা সঙ্গী করে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে যায় টাইগাররা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ (৮ এপ্রিল) মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ কাপ্তান মুমিনুল হক বলছেন কোনো কিছুতেই নেই সমস্যা।
নিজেরা স্পিনে অভ্যস্ত হয়েও আগের টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকান দুই স্পিনার কেশব মহারাজ ও সিমন হারমারে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে টাইগারদের। ২৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫৩ রানেই দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে। যে টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাট করার পরামর্শ দিয়েছিল প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো ও পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। তাদের পরামর্শ আমলে না নেওয়ায় রীতিমত সমালোচনার ঝড় বইছে।
তবে সে ঝড় এক পাশে রেখে মাঠে নামার আগে আরেক ঝড় নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কথা বাংলাদেশের। ১৩৩ বছরের পুরোনো পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জ স্টেডিয়ামে বাতাস বড় প্রভাবক। যা নিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ডিন এলগারও বেশ গভীরভাবে ভাবছেন, পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। কিন্তু এই বাতাস নিয়েও খুব একটা চিন্তিত নন বাংলাদেশ দলপতি। তার মতে এসব স্বাভাবিক বিষয়, মানিয়ে নিয়েই খেলতে হবে।
গতকাল (৭ এপ্রিল) ম্যাচ পূর্ববর্তী দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাতাস অবশ্যই থাকে, একেক জায়গায় একেক কন্ডিশন চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলো মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার থাকে। আমরা চেষ্টা করছি। আমরা মানসিকভাবে হারিনি। হারলে তো চারদিন ভালো খেলতাম না (আগের টেস্টে)। মানসিকভাবে সবাই শক্ত আছি। কালকের ম্যাচেও সেভাবে নামব।’
‘চ্যালেঞ্জ না, আপনি একেক জায়গায় একেক রকম পরিস্থিতিতে পড়তেই পারেন। এটা ক্রিকেটে না, সবক্ষেত্রেই হয়। এটার সাথে মানিয়ে নিয়েই খেলতে হবে। সব জায়গায় তো…যেটা একটু আগে বললাম একেক সময় একেক কন্ডিশনে থাকবে, ইংল্যান্ডে একরকম থাকে, নিউজিল্যান্ডে এক রকম থাকে সাউথ আফ্রিকায় আরেক রকম।’
‘তো একেক জায়গায় এক রকম থাকে। আসলে মানিয়ে নিয়ে খেলাটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমার কাছে মনে হয় সবাই মানিয়ে নিয়ে খেলবে। আমরা ওভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।’
অন্যদিকে প্রোটিয়া দলপতি ডিন এলগারের জন্য চেনা কন্ডিশন, নিজেদের ঘরের মাঠ। এখানে বাতাস যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে সেটা ভালোভাবেই জানেন। নিজেদের অনুশীলনে যে কারণে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন, ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নেওয়া কঠিন হবে বলেও জানান।
বাতাস যে কখন কাকে সাহায্য করে তা আগাম বলার উপায় নেই। স্কোরবোর্ডের উপর দিক ছাড়াও ড্রেসিং রুমের ফাঁক দিয়ে আসা বাতাসে কখনো উপকৃত হতে পারে বোলাররা কখনো ক্ষতিগ্রস্থ।
এলগারের ভাষ্য, ‘এখানে বাতাস অনেক বড় প্রভাব রাখবে। যখন থেকে আমরা এখানে খেলছি তখন থেকেই এটার সঙ্গী। সুতরাং আমরা জানি পরের পাঁচ দিন কি অপেক্ষা করছে। যদি এটা স্কোরবোর্ডের উপর দিয়ে আসে তবে এটাকে ‘সুইং ওয়াইন্ড’ ডাকা হয়, যা বোলারদের বেশ সহায়তা করবে। আর একটা জায়গা আছে বাতাস আসার, ড্রেসিং রুমের মাঝের ফাঁকা জায়গা, যদি সেদিক থেকে আসে তবে তা পুরো স্টেডিয়ামে ঘুরবে।’
‘অনুশীলনে আমাদের এটা বেশ ভালো অভিজ্ঞতা দিয়েছে। বাতাস কতটা প্রভাব রাখতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা ভালোই। বিশেষ করে বল হাওয়ায় ভাসে অনেকক্ষণ। সেন্ট জর্জ পার্কে ক্যাচ ধরা বেশ কঠিন কাজ। বাতাস বোলারদের রান আপেও প্রভাব রাখবে, অবশ্য কোন প্রান্ত থেকে বল করছে তার উপর নির্ভর করবে।’
‘বাতাস ব্যাটারদের জন্যও সমস্যা কারণ হতে পারে। প্রচন্ড বাতাসে ফ্রন্ট ফুটে ক্রস খেলতে বাধ্য করতে পারে। এখানে খেলার সময় এখানকার প্রচন্ড বাতাসকে আমাদের হিসাবে রাখতে হয়।’
দল আগের ম্যাচ জিতেছে, অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার নেই আইপিএলের কারণে। তবে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই আজ মাঠে নামার আভাস দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিয়ায়ক।
‘টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে ধারাবাহিক হতে হলে একাদশ ধারাবাহিক হতে হবে কিছুটা। আমার মনে হয় পোর্ট এলিজাবেথে আমরা যেমন কন্ডিশন প্রত্যাশা করি তেমনই পাচ্ছি। উইকেট দেখে মনে হচ্ছে আমরা অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু এখনো কয়েক ঘন্টাতো বাকি সিদ্ধান্তের জন্য। কিন্তু আমার মনে হয় না খুব বেশি পরিবর্তন আসবে।’
এদিক থেকেও পিছিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক। ম্যাচের আগে উইকেট দেখেই একাদশের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানান। তবে এক বছর পর সাদা পোশাকে তামিম ইকবালের ফেরা হচ্ছে করেছেন নিশ্চিত।
আগের টেস্ট দিয়েই ফিরতে পারতেন কিন্তু পেটের পীড়ায় শেষ মুহূর্তে ছিটকে যান। তামিমের ফেরা মানে টানা ব্যর্থ ওপেনার সাদমান ইসলামের বাদ পড়া।
আগের ম্যাচে বাংলাদেশ কেবল একজন স্পিনার নিয়ে খেলেছে। অথচ তৃতীয় ও চতুর্থ দিনেই উইকেট স্পিনারদের জন্য মায়া বিছিয়ে রেখেছিল। পোর্ট এলিজাবেথেও উইকেট এখন অনেকটা স্পিন বান্ধব হয়ে পড়ে সময়ের সাথে সাথে।
এ দফায়ও কি বাংলাদেশ এক স্পিনার নিয়ে খেলবে? চোটের কারণে আগের ম্যাচে একাদশে থাকা তাসকিন ফিরেছেন দেশে, তার জায়গায় কে খেলবে? এসবও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি মুমিনুল।
বাংলাদেশ কাপ্তান ডারবান টেস্টের পরই বিতর্কিত হয়েছেন আরও এক কারণে। সংবাদ সম্মেলনে অকপটে বলে দিলেন মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকানরা স্লেজিংয়ের আদলে নাকি গালাগালিও করেছে। এ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান সংবাদ মাধ্যমেও চলছে বেশ সমালোচনা।
গতকাল নিজেদের সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ডিন এলগারতো মুমিনুলদের আরও পরিণত আচরণের পরামর্শ দেন। সাথে সাফ জানিয়ে দেন মাঠে বিতর্ক তৈরি হতে পারে এমন কিছুই তারা করেননি।
এত সব বিতর্কের সাথে মুমিনুল নিজে আছেন ফর্মহীনতায়, এমনকি দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহিমও নেই চেনা ছন্দে। সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল জানালেন নিজের মতো মুশফিকের ফর্ম নিয়েও বিন্দু মাত্র চিন্তা নেই তার। তবে সব ছাপিয়ে আজ মাঠে নামবেন জেতার জন্যই তা অবশ্য বলে গেলেন।
‘অবশ্যই আমি জেতার জন্য খেলবো। প্রতি সেশন শতভাগ দিয়ে খেলবো। আমরা যদি খুব বেশি অন্য বিষয়ে কান দেই…সেসব চিন্তা না করে অন্তত ১২-১৩ সেশন কিভাবে জিততে পারি সেই চিন্তা নিয়ে এগোতে চাই।’
এই নিয়ে ১৪তম বারের মতো টেস্টে দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে। আগের ১৩ ম্যাচে বাংলাদেশের অর্জন বলতে ঘরের মাঠে ২০১৫ সালে ড্র করা টেস্ট দুইটি। যেখানে বড় অবদান ছিল বৃষ্টির। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা ৭ টেস্টের সবকটিতেই বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ।
এবার যখন মাঠে নামছে তখন নিজেরা ভাবতে না চাইলেও অবচেতন মনে হলেও বেশ চাপ নিয়েই খেলতে নামার কথা টাইগারদের। সব চাপ, বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে প্রোটিয়াদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মাঠে মুমিনুল হকরা কি পারবে দারুণ কিছু করে দেখাতে সেটা সময়ই বলে দিবে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ:
তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলি রাব্বি, লিটন দাস, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাব্য একাদশ:
ডিন এলগার (অধিনায়ক), সারেল এরউই, কিগান পিটারসেন, টেম্বা বাভুমা, রায়ান রিকেলটন, কাইল ভেরেনে, উইয়া মুল্ডার, কেশব মহারাজ, সিমন হারমার, লিজাড উইলিয়াম, ডুয়েন ওলিভিয়ার।
ভেন্যু: সেন্ট জর্জ পার্ক স্টেডিয়াম, পোর্ট এলিজাবেথ
সময়: দুপুর দুইটা (বাংলাদেশ)
টিভি সম্প্রচার (বাংলাদেশ): জিটিভি, টি-স্পোর্টস, র্যাবিটহোল (অনলাইন)।