

আবাহনী-মোহামেডান লড়াইয়ে পুরোনো দর্শক উন্মাদনার ছিটেফোঁটাও দেখা মেলেনা এখন। কেবল কিছু প্রবীণ ভক্ত সমর্থক ও সংবাদ কর্মীরাই যেন কিছুটা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ঐতিহ্যবাহী এই লড়াই জিইয়ে রাখতে। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে মোহামেডান টানা ব্যর্থ হয়ে সে লড়াইটা নিজেরাই পানসে করে দিচ্ছে। এই যেমন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) আজকের মুখোমুখি লড়াইয়েও দলটি হেরেছে ৬ উইকেটে।
এই নিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে সর্বশেষ ৬ দেখায় আবাহনীর কাছে হেরেছে মোহামেডান। গত বছর পাওয়া জয়টি অবশ্য ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। আবাহনীর কাছে এই হারে মোহামেডানের জন্য এবারের সুপার লিগ খেলার রাস্তাটাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ৭ ম্যাচে ৪ হারে পয়েন্ট টেবিলের ৮ নম্বরে অবস্থান তাদের। অথচ লম্বা সময় ধরে শিরোপা বঞ্চিত এই ক্লাবটি এবার শিরোপার লক্ষ্যেই নতুন উদ্যমে দল গড়েছিল।
এদিকে বাজেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করা আবাহনী আজকের জয় সহ টানা ৪ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের উপরের দিকের জায়গাটা পোক্ত করছে। ৭ ম্যাচে ৫ জয়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের অবস্থান এখন তিন নম্বরে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে মোহামেডানকে আগে ব্যাট করতে পাঠায় আবাহনী। মোহাম্মদ হাফিজ ও রুবেল মিয়ার ফিফটির সাথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কার্যকরী এক ইনিংসের পরও ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি মোহামেডান।
জবাবে হনুমা বিহারী, জাকের আলি ও মোসাদ্দেক হোসেনের ফিফটির সাথে আফিফ হোসেন ধ্রুবর দারুণ এক ইনিংসে ৬ উইকেট ও ২২ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আবাহনী।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে রান আউট হয়ে খালি হাতেই ফেরেন ওপেনার নাইম শেখ। আরেক ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারও ২৫ বলে ৩১ রানে থামেন। ৩৯ রানে ২ উইকেট হারানো আবাহনীকে টেনে নেন ভারতীয় হনুমা বিহারী।
দুজনে মিলে যোগ করেন ৯৮ রান। আগের ম্যাচে শতক হাঁকানো বিহারী এ দিন ফিফটির পর অবশ্য ফিরে যান। ৬৪ বলে ফিফটি ছুঁয়ে হাফিজের বলে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন ৮০ বলে ৭ চারে ৫৯ রান করে।
হনুমার বিদায়ের পর ফিফটি তুলে নেন অনিকও। ৩৩তম ওভারে রুবেল মিয়াডে ডিপ এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে ৮০ বলে ছুঁয়েছেন ফিফটি। তবে ফিফটির পর তাকেও ফিরতে হয়, কাউ কর্ণারে দারুণ এক ক্যাচ নেন হাসান মাহমুদ। তার ব্যাটে ৮৯ বলে ৩ চারে এসেছে ৬০ রান।
ততক্ষণে অবশ্য বলের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রয়োজনীয় রানের সমীকরণ। শেষ ১০ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৬৪ রান। দলকে জয়ের দিকে টেনে নেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুজনেই রান তুলেছেন দ্রুত গতিতে, আর তাতে ২২ বল হাতে রেখেই আসে আবাহনীর জয়।
মোসাদ্দেক ৩৬ বলেই তুলে নেন ফিফটি, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৭ বলে সমান ৪ টি করে চার, ছক্কায় ৫২ রানে। অন্যদিকে ৮৫ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে তার সঙ্গী আফিফ অপরাজিত ছিলেন ৩৮ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৪৮ রানে।
এর আগে মোহামেডান দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও আব্দুল মজিদের ৫.৫ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৩৭ রান। পেসার তানজিম হাসান সাকিবের বলে মজিদ (১৪) ফিরলে ভাঙে জুটি। বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বেশিক্ষণ টিকেননি আরেক ওপেনার রনিও (৩৪)।
দুজনের বিদায়ের পর হাফিজ ও রুবেল মিয়া। জুটিতে দুজনে মিলে যোগ করেন ১১৫ রান। ফিফটি হাঁকানোর পথে রুবেলের চেয়ে ধীরগতির ব্যাটিং হাফিজের। ৮৮ বলে হাফিজ ও ৬৩ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন রুবেল।
জুটি ভাঙে হাফিজ ১০১ বলে ৬ চার ২ ছক্কায় ৭০ রান করে হাফিজ তানভীর ইসলামের বলে বোল্ড হলে। ২ রানের ব্যবধানে ফিরে যান রুবেলও, ৬৫ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৫১ রানে তাকে থামান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
দুজনের বিদায়ের পর মোহামেডানকে ২৫০ পেরোনো সংগ্রহ এনে দেন মাহমদুউল্লাহ রিয়াদ। রান আউট হওয়ার আগে ৩৭ বলে ৩ চারে তার ব্যাটে ৪২ রান। তাদের ২৫৫ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পথে আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তানজিম হাসান সাকিবের। ২ টি উইকেট নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।