

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুর সময়টা একটু কঠিনই হয় যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য। আর বিদেশের মাটিতে বিরুদ্ধ কন্ডিশন হলেতো কথাই নেই। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মাহমুদুদল হাসান জয় যেন ঠিক বিপরীতে, চলতি ডারবান টেস্ট সহ খেলছেন মাত্র তৃতীয় টেস্ট। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে অভিষেক রাঙাতে পারেননি, মিরপুরে দুই ইনিংসে রান ০ ও ৬।
তবে নিজের জাত চেনাতে বিদেশের মাটিতেই কীনা দেখালেন ঝলক। নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুই হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান। জয়ের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে ডারবান টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতি থেকে উঠে এসে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে কোনো বাংলাদেশী ব্যাটারের ছিল না সেঞ্চুরি। জয় সে আক্ষেপই ঘোচালেন সাথে দলকে দিলেন স্বস্তি। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬৭ রানের জবাব দিতে নেমে তার ১৩৭ রানের নান্দনিক এক ইনিংসে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ২৯৮।
৬৯ রানে এগিয়ে থাকা প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ৬ রানে। হাতে ১০ উইকেট নিয়ে ৭৫ রানে এগিয়ে থাকলো ডিন এলগারের দল।
৪ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। ৪৪ রানে জয় ও কোনো রান না করে অপরাজিত ছিলেন তাসকিন।
তবে দিনের শুরুতেই আগেরদিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাসকিনকে (১) হারায় বাংলাদেশ। এরপর লিটন দাসকে নিয়ে লাঞ্চের আগের সময় আর কোনো বিপদ ছাড়াই কাটিয়ে দেন জয়।
১৭০ বলে ৪ চারে ফিফটি তুলে নেন জয়। কিন্তু অন্য প্রান্তে কিছুটা ভাগ্যবান ছিলেন লিটন। লাঞ্চের আগে দুই দফা পেয়েছেন জীবন।
ব্যক্তিগত ১৬ রানে লিজাড উইলিয়ামসের বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ ছাড়েন ডিন এলগার। হারমারের স্পিনে লেগ স্লিপে যখন মুল্ডার ক্যাচ ধরতে পারেননি তখন ব্যাট করছিলেন ৩৯ রানে।
অন্যদিকে ফিফটির পরও সাবলীল ব্যাটিং করেন জয়। আগেরদিন বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে হতাশা উপহার দেওয়া স্পিনার হারমারকে যখনই সুযোগ পেয়েছেন দারূন সব শটে চার, ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
৫ উইকেটে ১৮৩ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ, জয় ২৩০ বলে ৮০ ও লিটন ৯০ বলে ৪১ রানে অপরাজিত ছিল।
উইলিয়ামসের করা লাঞ্চের পর প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফেরেন লিটন, নামের পাশে যোগ করতে পারেননি আর কোনো রান। তার বিদায়ে ভাঙে জয়ের সাথে ৮২ রানের জুটি।
লিটন ফিরে গেলেও ইয়াসির আলি রাব্বিকে নিয়ে জয় যোগ করেন ৩৩ রান। যেখানে ভুল বুঝাবুঝিতে রাব্বি (২২) হয়েছেন রান আউট।
এরপর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ৮ম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৫১ রান। চা বিরতির আগেই ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতকের দেখা পান জয়।
কেশব মহারাজের করা ৯৭তম ওভারে কাট করেন ডাবল নিয়ে ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়ার আনন্দে মাতেন। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে ২৬৯ বল ও ৬ ঘন্টার বেশি সময় ক্রিজে কাটিয়ে ধৈর্যের পরীক্ষায় উতরেছেনে ভালোভাবে। জয়ের ব্যাটেই এলো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের টেস্ট সেঞ্চুরি।
৭ উইকেটে ২৫৭ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। জয় ২৯৫ বলে ১০৬ ও মিরাজ ৬৫ বলে ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।
View this post on Instagram
চা বিরতির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকেননি মিরাজ, উইয়ান মুল্ডারের বলে হারমারকে ক্যাচ দেন ৮১ বলে ২৯ রান করে। লেজের দুই ব্যাটার খালেদ আহমেদ ( ০) ও এবাদত হোসেনকে (০*) নিয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি জয়।
শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন ৩২৬ বল খেলে ৭ ঘন্টার বেশি সময় ক্রিজে কাটিয়ে ১৫ চার ২ ছক্কায় ১৩৭ রান করে।
View this post on Instagram
দ্বিতীয় দিন ৪ উইকেট নেওয়া সিমন হারমার তৃতীয় দিন পাননি কোনো উইকেট। পেসার লিজাড উইলিয়ামসের শিকার ৫৪ রানে ৩ উইকেট।
৬৯ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে পেরেছে মাত্র ৪ ওভার। আলোক স্বল্পতার পর বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৬ রান, ডিন এলগার ৩ ও সারেল এরউইয় ৩ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (৩য় দিন শেষে):
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংসে ৩৬৭/১০ (১২১), এলগার ৬৭, এরউই ৪১, পিটারসেন ১৯, বাভুমা ৯৩, রিকেলটন ২১, ভেরেনে ২৮, মুলডার ০, মহারাজ ১৯, হারমার ৩৮*, উইলিয়ামস ১২, অলিভিয়ার ১২; এবাদত ২৯-১০-৮৬-২, খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ২৯৮/১০ (১১৫.৫), জয় ১৩৭, সাদমান ৯, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ০, মুশফিক ৭, তাসকিন ১, লিটন ৪১, রাব্বি ২২, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, এবাদত ০*; অলিভিয়ার ১৫-৫-৩৬-১, উইলিয়ামস ১৮.৫-৩-৫৪-৩, হারমার ৪০-১২-১০৩-৪, মুলডার ৪-১-২৩-১
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংসে ৬/০ (৪), এরউই ৩*, এলগার ৩*
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংসে ৭৫ রানে এগিয়ে।