

অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থেকেই ডারবান টেস্ট খেলতে নেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে তাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটারই টাইগার বোলারদের পরীক্ষা নিলেন প্রথম দিন। দিনের শুরুতে অধিনায়ক ডিন এলগার ও শেষে টেম্বা বাভুমার ব্যাটে পথের দেখা পায় স্বাগতিকরা। মাঝের সেশনে ঘুরে দাঁড়ানো বোলিং করে দিনটা সমানে সমানে রাখলো বাংলাদেশও।
সাইটস্ক্রিন ঠিক করতে গিয়ে এক ঘন্টার বেশি সময় পর শুরু হয় ম্যাচ। কিংসমিড স্টেডিয়ামে টস জিতে স্বাগতিকদের আগে ব্যাটিং পাঠায় বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। ৪ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে প্রোটিয়ারা।
অধিনায়ক এলগার ৬৭ রানে আউট হলেও বাভুমা অপরাজিত আছেন ৫৩ রানে। এলগারকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া সারেল এরউইয়ের ব্যাটে ৪১ রান। অন্যদিকে বাভুমার সাথে জুটিতে অবিচ্ছেদ্যথাকা কাইল ভেরেনে অপরাজিত আছেন ২৭ রানে।
প্রথম সেশনের পুরোটাই আধিপত্য বিস্তার করেছে স্বাগতিকরা। উইকেট থেকে কোনো ফায়দাই লুটতে পারেনি টাইগার পেসাররা। আর তাতেই তাসকিন, এবাদত, খালেদদের কাটাতে হয় অসহায় সময়।
লাঞ্চের আগে অবশ্য একটা সুযোগ তৈরি হয় সেটি মিরাজের বলে। এলগার-এরউইয়ের জমে যাওয়া যাওয়া জুটি ভাঙতে পারতো লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারটিতে। কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বল কাট করতে চান এরউই, ব্যাটে লেগে উইকেট রক্ষক লিটন দাসের গ্লাভস হয়ে মাটিতে পড়ে।
তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিপদ ছাড়াই লাঞ্চে যায় প্রোটিয়ারা। এলগারের ব্যাটে দারুণ সব শট, এরউই দেখিয়েছেন টিকের থাকার মানসিকতা। ৭৬ বলে ৬০ রানে এলগার ও সমান বলে ৩২ রানে অপরাজিত থেকে লাঞ্চে গিয়েছে স্বাগতিকরা। ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৯৫ রান।
প্রথম সেশনে অতিরিক্ত আলগা বল, সথিক লেংথ বুঝতে না পারা টাইগার বোলাররা অবশ্য কামব্যাক করেছে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই। এলগারের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন করে সাড়া না পেয়ে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। তবে এবাদতের করা বলটি লেগ স্টাম্পের বাইরে যায়, নষ্ট হয় রিভিউ।
তবে দুজনের জুটি শতরান পার করার পরই বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন খালেদ আহমেদ। শরিফুল ইসলাম ফিট থাকলে এ ম্যাচে তার খেলাই হত না। নিজের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারেই পেলেন উইকেট, ভয়ংকর হতে চলা প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এলগারকে থামালেন।
হুট করে লাফিয়ে ওঠা বলে গতির সাথে মাইয়ে নিতে পারেননি এলগার, গ্লাভস ছুঁয়ে বল যায় উইকেটের পেছনে লিটনের কাছে। ১০১ বলে ১১ চারে নামের পাশে ৬৭ রান, এরউইয়ার সাথে জুটি ১১৩ রানের জুটি ভাঙে।
৪ রানের ব্যবধানে ফেরেন এরউইও। মিরাজের বেশ বাইরের আলগা বলকে কিছুটা অলসভঙ্গিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে। ১০২ বলে ৪১ রানেই থামতে হয় তাকে।
৩ নম্বরে নামা কিগান পিটারসেন ব্যক্তিগত ১৮ রানে বেঁচে যান। তাসকিনের বলে ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন, কিন্তু আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ, রিপ্লেতে পরিষ্কার ব্যাট ছুঁয়েছে বল।
তবে এমন সুযোগও কাজে লাগানো যায়নি, মিরাজের দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট হয়ে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না । তাসকিনের বলে পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দেন বাভুমা। খানিক দূর থেকে এসে বল কুড়িয়ে নিয়ে চোখের পলকে মাথা খাটিয়ে জোরালো থ্রো মিরাজের। সঠিক নিশানা স্টাম্প ভেঙেছে পিটারসেন (১৯) প্রান্ত বদল করার আগেই।
চা বিরতির আগের সেশনে এই ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৯৫ রান তোলা প্রটিয়ারা দ্বিতীয় সেশনে তুলতে পারে ৭০ রান। ৩ উইকেটে ১৬৫ রান নিয়ে চা বিরতিতে যাওয়া স্বাগতিকদের হয়ে ২২ রানে বাভুমা ও ১১ রানে অভিষিক্ত রায়ান রিকেললটন অপরাজিত ছিলেন।
তৃতীয় সেশন রিভিউ নষ্ট করে শুরু করে বাংলাদেশ। এ দফায়ও বোলার এবাদত, চা বিরতির পর প্রথম ওভারেই রিকেলটনের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেয়নি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও সফল হয়নি বাংলাদেশ।
তবে দিনজুড়ে আহামরি বোলিং না করা এবাদতের শিকার হয়েই ফিরতে হয়েছেন রিকেলটনকে। বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দেন মুমিনুলকে (৪১ বলে ২১ রান)। ৪ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ১৮০ রানে।
সেখান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পথে ফেরায় বাভুমা ও কাইল ভেরেনের অবিচ্ছেদ্য ৫৩ রানের জুটি। তাসকিনের করা ৭৩তম ওভারে পয়েন্ঠে ঠেলে ১০৪ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন বাভুমা।
আলোক স্বল্পতা ও দেরীতে খেলা শুরু হওয়াতে এদিন বল গড়িয়েছে ৭৬.৫ ওভার। বাভুমা ১১৯ বলে ৬ চারে ৫৩ ও ভেরেনে ৬৪ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করে।
বাংলাদেশের হয়ে খালেদ, এবাদত ও মিরাজের শিকার একটি করে উইকেট। সবচেয়ে বেশি ২৬ ওভার বল করা মিরাজ দলের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার, ৪ মেডেনসহ খরচ করেছেন মাত্র ৫৭ রান, ওভারপ্রতি ২.২০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (১ম দিন শেষে):
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৩৩/৪ (৭৬.৫), এলগার ৬৭, এরউই ৪১, পিটারসেন ১৯, বাভুমা ৫৩*, রিকেলটন ২১, ভেরেনে ২৭*; এবাদত ১৭-৬-৫৮-১, খালেদ ১২.৫-০-৪৯-১, মিরাজ ২৬-৪-৫৭-১।