দুই দশকের অপেক্ষা শেষে প্রোটিয়া মুল্লুকে টাইগারদের ইতিহাস

তাসকিনের বোলিং তোপে ১৫৪ তেই শেষ দক্ষিণ আফ্রিকা
Vinkmag ad

২০০২ সাল থেকে সময়টা দুই দশকের বেশি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই জয় পাচ্ছিলো না বাংলাদেশ। প্রোটিয়া মুল্লুকে জয় পাওয়াই যেখানে কঠিন সেখানে এবার বাংলাদেশ কীনা সিরিজই জিতে নিল। ৯ উইকেটের জয়ে ভারত ও পাকিস্তানের পর এশিয়ার তৃতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশ গড়লো এমন কীর্তি।

ব্যাটে-বলে স্বাগতিকদের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করেই সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে তাসকিন আহমেদের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে ১৫৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮ বছর পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট শিকার তাসকিনের।

জবাবে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ব্যাটে সহজ জয়ই তুলে নেয় সফরকারীরা। তামিমের অপরাজিত ৮৭ রানের সাথে লিটনেরর ব্যাটে ৪৮। এই জয়ে ওয়ার্ল্ডকাপ সুপার লিগে ১২০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে শীর্ষেই। যেখানে দ্বিতোয় অবস্থানে থাকা ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ৯৫।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ইনিংসের চতুর্থ বলেই কোনো রান না করে ফিরতে পারতেন বাংলাদেশ ওপেনার লিটন দাস। কাগিসো রাবাদার বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ ছাড়েন কেশব মহারাজ।

তবে জীবন পেয়ে আর পেছনে তাকাননি, অধিনায়ক তামিম ইকবালকে নিয়ে লক্ষ্যের দিকে ছুটে গেছেন কোনো সমস্যা ছাড়াই। যে পথে তামিমই নেতৃতে দিয়েছেন সামনে থেকে। লুঙ্গি এনগিডির করা ৮ম ওভারে তার ব্যাটে টানা দুই চার।

রাবাদার করা ১০ম ওভারে হাঁকান ৪ চার, যেখানে শেষ ৩ বলে হাঁকিয়েছেন টানা। ঐ ওভারে দলীয় সংগ্রহ পার হয় ৫০। নিজের ৫২তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নিতেও অবশ্য দেরী করেননি তামিম। ১৫তম ওভারে ঠিক ৫২ বলেই ছুঁয়েছেন। ঐ ওভারে লিটন হাঁকান ২ চার।

দুজনের ব্যাটে ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই দলীয় সংগ্রহ পেরোয় ১০০। তামিমের পর লিটনও ছুটছিলেন ফিফটির দিকে, কিন্তু মাত্র ২ রান দূরে থেকে আউট হন মহারাজের স্পিনে। ৫৭ বলে ৮ চারে লিটন সাজান ৪৮ রানের ইনিংসটি। ২১তম ওভারে দলীয় ১২৭ রানে লিটন ফিরলেও সাকিবকে নিয়ে বাকি কাজ অনায়েসেই সারেন তামিম।

২৭তম ওভারের তৃতীয় বলে কাগিসো রাবাদাকে স্কয়ার কাট করে চার মেরে জয়সূচক রান এনে দেন সাকিব। তবে প্রতিপক্ষের রান কম হওয়াতে তামিম ভক্তরা হয়তো আক্ষেপই করতে পারেন, ৮২ বলে ১৪ চারে ৮৭ রানে তামিমকে থাকতে হয়েছে অপরাজিত। ২০ বলে ১৮ রানে অপরাজিত সাকিব।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে দক্ষণ আফ্রিকান দুই ওপেনার দিয়েছেন ভয়ংকর হওয়ার আভাস। ৬.৫ ওভার স্থায়ী জুটিতে ৪৬ রান তোলে ডি কক ও ইয়ানেমান মালান। মিরাজের স্পিনে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন আগের ম্যাচে ঝড় তোলা ডি কক (৮ বলে ১২)।

এরপর ৩ নম্বরে নামা কাইল ভেরেনও ফিরেছেন দ্রুত (১৬ বলে ৯)। তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে। নিজের পরের ওভার করতে এসে ৩ রানের ব্যবধানে এক পাশ আগলে রাখা ওপেনার মালানকেও ফেরান তাসকিন।

তার বেশ লাফিয়ে ওঠা বলকে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মালান। তার আগে নামের পাশে ৫৬ বলে ৩৯ রান। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে ২ রানের বেশি করতে দেননি সাকিব।

প্রথম ম্যাচে ভয়ংকর রূপ নেওয়া র‍্যাসি ভেন ডার ডুসেনকে শরিফুল ফেরান ৪ রানেই। প্রোটিয়ারা পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৮৩ রানে। সেখান থেকে আর পথে ফিরতে পারেনি স্বাগতিকরা। তাসকিনে এলোমেলো প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইন আপ।

২০ রান করা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে ফিরিয়ে তৃতীয় ও ২৯তম ওভারে ডেভিড মিলার (৩১ বলে ১৬) এবং কাগিসো রাবাদাকে (৪) ফিরিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট শিকার তাসকিনের।

এর আগে ২০১৪ সালে নিজের অভিষেক ম্যাচে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানে তুলে নেন ৫ উইকেট। ২০১৯ সালের পর এটাই বাংলাদেশী কোনো পেসারের ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট শিকার।

শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫০ পেরোনো সংগ্রহ পায় কেশব মহারাজের ৩৯ বলে ২৮ রানে। ব্যক্তিগত ২৬ রানে অবশ্য জীবন পেয়েছেন শরিফুলের বলে ইয়াসির আলির হাতে ক্যাচ দিয়ে।

স্বাগতিকদের ১৫৪ রানে অলআউট করার পথে ৩৫ রানে ৫ উইকেট শিকার তাসকিনের। ২৪ রানে দুইটি সাকিবের, একটি করে নেন মিরাজ ও শরিফুলের।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫৪/১০ (৩৭), ম্লান ৩৯, ডি কক ১২, ভেরেনে ৯, বাভুমা ২, ডুসেন ৪, মিলার ১৬, প্রিটোরিয়াস ২০, মহারাজ ২৮, রাবাদা ৪, এনগিডি ০, শামসি ৩*; শরিফুল ৭-০-৩৭-১, মিরাজ ৫-০-২৭-১, তাসকিন ৯-০-৩৫-৫, সাকিব ৯-০-২৪-২

বাংলাদেশ ১৫৬/১ (২৬.৩), তামিম ৮৭*, লিটন ৪৮, সাকিব ১৮*; মহারাজ ৭-০-৩৬-১

ফলাফলঃ বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ম্যাচ জয়ী, ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী

ম্যাচ ও সিরিজ সেরাঃ তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)। 

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

দেড় বছর ধরে বিশ্বাস করে আসা মন্ত্রেই সফল তাসকিন

Read Next

ক্যারেক্টার প্রমাণ করে সিরিজ জিততে চাওয়া সাকিবকে তামিমের ধন্যবাদ

Total
2
Share