

মাত্র একদিনের ব্যবধানেই বদলে গেলো পুরো দৃশ্যপট। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয় তুলে ইতিহাস গড়ে উড়তে থাকা বাংলাদেশকে আজ (২০ মার্চ) জোহানেসবার্গে মাটিতে নামালো দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে টাইগার ব্যাটাররা যেন ব্যাটিং করতেই ভুলে গেছে। ৭ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজে সমতা ফেরালো টেম্বা বাভুমার দল।
রাবাদা-এনগিডিদের তোপে দিশেহারা বাংলাদেশকে বড় লজ্জা থেকে বাঁচান আফিফ হোসেন। তার ফিফটিতে (৭২) ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পায় ৯ উইকেটে ১৯৪ রানের সম্মানজনক পুঁজি। ভূমিকা ছিল মিরাজে (৩৮) ও মাহমুদউল্লাহরও (২৫)। রাবাদা একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট।
জবাবে কুইন্টন ডি ককের ঝড়ে টালমাটাল বাংলাদেশী বোলিং আক্রমণ। আগের ম্যাচে বল হাতে আগুন ঝরানো পেসাররা এ দিন খুঁজে পায়নি পথ। ডি ককের (৬২) পর ফিফটি হাঁকান কাইল ভেরেনেও (৫৮*)। তাতেই ৭৬ বল আগে জয়ের দেখা পেয়ে যায় প্রোটিয়ারা।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটাররা ঠিক বাংলাদেশের উল্টো রূপ দেখিয়েছেন। ১৯৫ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় নেমেও রীতিমত ঝড় বইয়ে দেন অসুস্থতায় প্রথম ম্যাচ না খেলা ডি কক। ইয়ানেমান মালানের সাথে ১২.৩ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৮৬ রান।
৪৪ বলে দলীয় ও ২৬ বলে ব্যক্তিগত ফিফটির দেখা পান ডি কক। বাংলাদেশী বোলারদের নাকানি চুবানি খাইয়ে পাওয়ার প্লের ১০ ওভারেই কোনো উইকেট না হারিয়ে প্রোটিয়াদের স্কোরবোর্ডে ৭২ রান।
জুটি ভাঙে মিরাজকে স্কুপ খেলতে গিয়ে মালান (৪০ বলে ২৬) বোল্ড হলে। মালানের পর ডি কক ঝড় থামান সাকিব। আফিফের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে তার নামের পাশে ৪১ বলে ৯ চার ২ ছক্কায় ৬২ রান।
৯৪ রানে ২ উইকেট হারালেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে স্বাগতিকদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। অধিনায়ক বাভুমা ও কাইল ভেরেনের ৮২ রানের জুটি ভাঙে বাভুমা ৩৭ রান করে আফিফের শিকার হলে।
দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ভেরেন অপরাজিত ছিলেন ৭৭ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৫৮ রানে। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ৪ ওভারে ৪১ ও শরিফুল ৪ ওভারে খরচ করেন ২৯ রান।
বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই টপ, মিডল অর্ডার মুখ থুবড়ে পড়ে। রাবাদা, এনগিডিদের বাউন্সার সামলে ক্রিজে টিকে থাকার সুযোগই পায়নি তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা।
এনগিডির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে অপ্রত্যাশিত বাউন্সে কুপোকাত তামিম। ৩৩তম জন্মদিনে ১ রানেই থাকতে হয় সন্তুষ্ট। ব্যাট হাতে আগের ম্যাচের নায়ক সাকিব (০) পারেননি সেটিও। রাবাদার বাউন্সারে এলোমেলো হয়ে ক্যাচ দেন ভেরেনের হাতে।
রাবাদার বাউন্সারের ছোবলে ভালো কিছুর আভাস দিয়ে ব্যর্থ ফর্মে থাকা লিটন দাসও ( ২১ বলে ১৫ রান)। তার তৃতীয় শিকার ইয়াসির আলি (২)। এরপর ওয়েন পারনেল মুশফিককে (১১) ফেরালে ৩৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা।
সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে প্রোটিয়া বোলারদের সামলে ৬০ রানের জুটি গড়েন আফিফ। কিন্তু বাঁহাতি চায়নাম্যান তাবরাইজ শামসির বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ দেন রিয়াদ (৪৪ বলে ২৫ রান)।
৯৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশকে আরেক দফা পথ দেখালো আফিফ-মিরাজের ৮৬ রানের জুটি। কেশব মহারাজের করা ৩৭তম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে ৭৯ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন আফিফ।
৪১তম ওভারে ব্যক্তিগত ২১ রানে ইয়েনেমান মালানের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান মিরাজ। একই ওভারে টেম্বা বাভুমাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫৯ রানে জীবন পান আফিফও।
তবে জীবন পেয়ে তা বেশি দূর নিতে পারেননি আফিফ-মিরাজ। জুটি ভাঙতে হাজির রাবাদা, শর্ট বলে পরাস্ত করে তুলে নেন আফিফকে। এই বাঁহাতি থামেন ১০৭ বলে ৯ চারে ৭২ রানে। এক বলের ব্যবধানে মিরাজেরও একই পরিণতি, তার ব্যাটে ৪৯ বলে ৩৮ রান।
দুজনের বিদায়ের পর বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হয়নি ১৩ রানের বেশি। বল হাতে প্রোটিয়াদের হয়ে সেরা বোলার রাবাদা, ৩৯ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশ ১৯৪/৯ (৫০), তামিম ১, লিটন ১৫, সাকিব ০, মুশফিক ১১, রাব্বি ২, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, তাসকিন ৯*, শরিফুল ২, মুস্তাফিজ ২*; এনগিডি ১০-২-৩৪-১, রাবাদা ১০-০-৩৯-৫, পারনেল ২.৫-০-৬-১, শামসি ১০-১-২৬-১, ডুসেন ১-০-৩-১
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৫/৩ (৩৭.২), মালান ২৬, ডি কক ৬২, ভেরেনে ৫৮*, বাভুমা ৩৭, ডুসেন ৮*; মিরাজ ১০-০-৫৬-১, সাকিব ১০-২-৩৩-১, আফিফ ৫-০-১৫-১
ফলাফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরাঃ কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)।