

তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তী পেসার, পরবর্তীতে জনপ্রিয় কোচ। বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া দল ‘নাইটসের’ হয়ে কাজ করেছেন গতকালও। প্রথম প্রোটিয়া পেসার হিসেবে ৩০০ টেস্ট উইকেট শিকারি অ্যালান ডোনাল্ডকে পেতে তাই অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিদায়ী সম্বর্ধনা পাওয়া রাতেই নিশ্চিত করেছেন আজ (১৪ মার্চ) সকালে সময় দিচ্ছেন।
‘ক্রিকেট৯৭‘ কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সাদা বিদ্যুৎ খ্যাত এই সাবেক তারকা পেসার কথা বলেছেন প্রাণ খুলে। যেখানে নিজের সাদা বিদ্যুৎ ট্যাগের নৈপথ্য, রিভার্স সুইং নিয়ে দর্শন, একজন পেসারকে মূল্যায়ণ করার ধরণ সহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন। –
ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার ক্ষেত্রে ভাবনা কি ছিল?
ডোনাল্ড: আমার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব সহজ ছিল। বাংলাদেশ দলের বর্তমান প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর সাথে আমি কয়েক বছর কাজ করেছি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। আমি জানি সে কীভাবে কাজ করে, কীভাবে সে কোচিং করায়। আমরা দুজনে বেশ ভালো সহকর্মী। এটা আমার জন্য দারুণ এক সুযোগ যে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের সাথে যুক্ত হওয়া।
আমার এই ভূমিকায় সর্বশেষ কাজ ছিল ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে শ্রীলঙ্কায়। সেটা আমার নিজের জন্য বেশ ভালো একটা অভিজ্ঞতা ছিল। তবে হ্যাঁ এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার জন্য খুবই সহজ ছিল কারণ আরও একটি বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে। সত্যি দারুণ সুযোগ কিছু তরুণ প্রতিভার সাথে কাজ করার। আর বাংলাদেশ দলের সাথে কাজ করা একটা পার্থক্য তৈরি করে।

ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচিং প্যানেলে কাজ করেছেন। এটাই কি বড় ভূমিকা রেখেছে? রাসেলের সাথে আবার কাজ করাটা নিশ্চয়ই সহায়ক হবে…
ডোনাল্ড: হ্যাঁ রাসেল আমার সাথে ইতোমধ্যে কিছু জিনিস শেয়ার করেছে। তার মেয়াদ আড়াই বছর পার হয়ে গেছে। আমরা বেশ কিছু জিনিস নিয়ে কিছুটা আলাপ করেছি, যেখানে কিছু ব্যাপারে আলাপ হয়েছে ব্যাপকভাবে। যার সবটাই এতো দিন ফোনে হয়েছে। আজ রাতে আশা করি সামনাসামনি কথা হবে, আমি আজ সন্ধ্যায় দলের সাথে যোগ দিচ্ছি।
ক্রিকেট৯৭: আপনার সমৃদ্ধ কোচিং ক্যারিয়ার, তবে উপমহাদেশে অভিজ্ঞতা কম। বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে কাজটা চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে কীনা?
ডোনাল্ড: হ্যাঁ কোচ হিসেবে উপমহাদেশে আমার অভিজ্ঞতা খুব বেশি না। কিন্তু আমি মাইন্ডসেট বুঝতে পারি। বোলার হিসেবে খেলোয়াড়ি জীবনে আমি পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় খেলেছি। অবশ্য বাংলাদেশে আমি কখনো খেলিনি। কিন্তু আমি উপমহাদেশের কন্ডিশনে বল করার মতো মাইন্ডসেট সম্পর্কে ধারণা রাখি। টেস্ট ম্যাচ পেসারদের জন্য দারুণ এক চ্যালেঞ্জিং জায়গা। যেখানে আপনাকে আপনার মাঝে যা আছে তার সবটুকুর পরীক্ষা দিতে হয়, আপনার ভাবনা, সৃজনশীলতা দেখাতে হয়।
এই মুহুর্তে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সিরিজটা দেখছি, কতটা কঠিন ওখানকার কন্ডিশনে বল করা। উইকেট থেকে খানিক সাহায্য পেতে মাথা খাটাতে হয় প্রচুর। এমন কন্ডিশনে আপনার ফিটনেসেরও দারুণ পরীক্ষা হয়ে যায়। তার সাথে মানসিক ও দক্ষতার পরীক্ষা তো আছেই। বাংলাদেশ বাংলাদেশের মাটিতে স্পিনারই বেশি খেলায়। ঘরের মাঠে তারা খুব বেশি পেসার খেলায় না টেস্টে।
স্পিন আক্রমণ দিয়ে নিজেদের শক্তির জায়গা প্রদর্শন করতে চায়। কিন্তু আমি আশাবাদী দক্ষিণ আফ্রিকায় পেসাররাই বেশি ব্রেক থ্রু এনে দিবে। এ নিয়েই আগামী সপ্তাহগুলো আমাদের আলাপ হবে, পরিকল্পনা হবে। আমি মুখিয়ে আছি ছেলেদের সাথে আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার জন্য।

ক্রিকেট৯৭: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কতটা অনুসরণ করেছেন?
ডোনাল্ড: হ্যাঁ আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট অনুসরণ করেছি। কিন্তু আপনি জানেন প্রতিটি ম্যাচে টিভির সামনে বসার মতো পরিস্থিতি থাকে না। যেখানে প্রতিটি দলই বিশ্বজুড়ে খেলে বেড়াচ্ছে। অনেক খেলা দেখতে হয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে যে টেস্ট ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছে সেটা আমি দেখেছি। আর আমি সত্যি মুগ্ধ হয়েছি যেভাবে তারা খেলেছে এবং জিতেছে।
মাউন্ট মঙ্গানুইতে প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্টের এক নম্বর দলকে যারা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন, তাদের বিপক্ষে একম পরিচ্ছন্ন জয়! অথচ আপনি ভালোই জানেন এই পেসাররা খুব বেশি অভিজ্ঞ ছিল না। সুতরাং আমি মনে করি এই পেসাররা আসলেই প্রতিভাবান। তারা নিজেদের কাজটা চমৎকারভাবে করেছে নিউজিল্যান্ডে।
আমার মতে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে যে রান তুলেছে তাই নিউজিল্যান্ডকে চাপে ফেলে দিয়েছে। আর এটা দেখাটাও প্রশান্তির যেভাবে বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকভাবে শেষ করেছে। সুতরাং বিশ্বের যেকোনো দলকে বাংলাদেশ হারাতে পারে এমন কিছু যদি কারও সন্দেহ হয়ে থাকে তবে এই জয় ছিল সেটার প্রমাণ।
ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশ এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কোনো সাফল্য পায়নি। নিকট ভবিষ্যতে সেটা পাওয়ার ব্যাপারে আপনি কতটা ইতিবাচক?
ডোনাল্ড: দক্ষিণ আফ্রিকাতেও একই অবস্থা। কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় একই চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ভালো করতে হলে শুরুতে স্কোরবোর্ডে বড় সংগ্রহ গড়তে হবে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটারদের থিতু হতে দেওয়া যাবে না। যেহেতু তাদের নিজেদের মাঠ, কন্ডিশন, কাজটা খুব কঠিনই হবে।
টেস্ট ম্যাচ দুটির ভেন্যু আবার দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম আইকনিক কিংসমেড ও সেন্ট জর্জ পার্ক। এটা কঠিন পরিশ্রমের কাজ হতে যাচ্ছে। এটা হতে পারে অনেকটা পিষে ফেলার মতো ব্যাপার তবে নিশ্চিতভাবে মজার ব্যাপারও। দেখা যাক দক্ষিণ আফ্রিকা কি তৈরি করে (উইকেট )। ব্যাটিংয়ের জন্য কুখ্যাত এই দুই পিচে কাজটা কঠিন হবে।

ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশী পেসারদের সম্পর্কে আপনারা ধারণা কেমন? কয়েকজনকে নিয়ে নিশ্চয়ই এতদিনে কিছু কাজ গুছিয়েও নিয়েছেন…?
ডোনাল্ড: হ্যাঁ আমি দেখেছি কয়েকজনকে। তাসকিন আহমেদ সবার (বাংলাদেশের) মধ্যে দ্রুততম পেসার। এবাদত হোসেন, যে কীনা আবার ক্রিকেটকে বেছে নেওয়ার আগে চার বছর আগেও ভলিবল খেলেছে। খুবই ইন্টারেস্টিং। এরপর শরিফুল ইসলামকে চিনি আমি, যে কীনা বেশ সম্ভাবনাময় একজন লম্বা বাঁহাতি পেসার। গতির সাথে তার অ্যাটিটিউড…।
সে মাত্র ২২ বছর বয়সী একজন তরুণ, যে দুই বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ খেলে গেছে। এর বাইরে আমি যদি ভুল ধারণা না করি ব্যাকাপ হিসেবে দলের সাথে খালেদ আহমেদ আছে। তো এদের সাথে কাজ করার জন্য আমি বেশ মুখিয়ে আছি। এই বোলিং আক্রমণ নিয়েই কিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে চাই।
২০১৫-১৬ সালে আমি যখন আইপিএল আরসিবির (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর) সাথে কাজ করি তখন মুস্তাফিজকে দেখেছিলাম প্রথম। ওই সময়টা আমি যদি বলি সে দুর্দান্ত করেছে হায়দ্রাবাদের হয়ে। আপনি যদি আনপ্রেডিকটেবলের কথা বলেন, তবে মুস্তাফিজ হল এমন একজন যার বিপক্ষে আপনি ধীর স্থির হতে পারবেন না।

আমি দেখেছি সাম্প্রতিক সময়ে সে কিছুটা খরুচে, কিন্তু এমনটা হতেই পারে। সর্বোপরি যদি বলা হয় তার স্কিল লেভেল ফ্যান্টাস্টিক। আমি তার সাথে কাজ করতে অধীর আগ্রহে বসে আছি।
ক্রিকেট৯৭: একজন পেস বোলার কিংবা একটা পেস বোলিং ইউনিটকে আপনার মূল্যায়ণ করার ধরণ টা কেমন?
ডোনাল্ড: অন্যান্য জবের মতোই আমাকে প্রথমে বিষয়টার কাছাকাছি যেতে হয়, এরপর দেখতে হয় আসলে কি ঘটছে। আপনাকে বিষয়বস্তুর কাছাকাছি যেতে হবে, পর্যবেক্ষণ করতে হবে আর সবসময় ধীর স্থির হয়ে দেখতে হবে কি ঘটছে। কীভাবে লোকজন তার কাজটা করছে, কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছে। ট্রেনিংয়ের জন্য নিজেদের কীভাবে তৈরি করছে, এসব নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন এরপর গভীরে যাওয়া। আমি এমন কেউ না যে দেখলাম দুই পায়ে দৌড়ে কেউ একজন কীভাবে বল করছে।
এখানে অন্য কিছুর উপায় নেই, তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, তাদের কাজ কর্ম হতে হবে একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের মতোই। এ জন্য আমি কিছুটা সময় নিই, এরপর কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি ধীরে ধীরে। আর এভাবেই আমি একটা পেস বোলিং ইউনিট নিয়ে কাজ শুরু করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠিক এভাবেই যে হয় তা না, তখন অন্যভাবে ভাবি এবং বলি ওকে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই আর আমাদের এভাবেই সেটা অর্জন করতে হবে।
ক্রিকেট৯৭: আপনার সাথে বিসিবির চুক্তি আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। এই সময়ে বাংলাদেশের পেসারদের নির্দিষ্ট কোন দিকটি উন্নতি করাতে মনযোগ দিবেন?
ডোনাল্ড: আমি আমার আগের প্রশ্নের উত্তরে ফিরে যাবো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের আচরণ করতে হবে। আমি মানসিকতা বদল নিয়ে প্রচুর কাজ করি। আমরা সবসময় স্কিল ও স্কিল লেভেল নিয়ে কথা বলি। আগামী কয়েকমাসে প্রচুর টি-টোয়েন্টি খেলা আছে, সাথে লাল বলের খেলাও কম নয়। আমি আশা করি এ জায়গাগুলোতে একটা প্রভাব রাখতে পারবো।
মানসিকতার দিক থেকে সাহায্য করতে পারলে তরুণ পেসারদের আমি চাপের মাঝে কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটা শেখাতে পারবো। আমি ক্রিকেটের এই দিকটা বেশ পছন্দ করি, মানসিক ব্যাপার নিয়ে কাজ করাটা আমার ভালোবাসার একটা বিষয়বস্তু।
কীভাবে বোলাররা ভাবে, তাদের ভিন্ন ভিন্ন কৌশল আছে। আমি মনে করি তরুণদের আমি এসব ক্ষেত্রে উৎসাহী করতে পারবো। এটা এমন নয় যে আপনি চাকা আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন, এটা আমার দেখার জন্য যে আমি তরুণদের ধারণা পরিবর্তন করতে পারি কীনা। আমি যদি এক-দুইজনের ক্ষেত্রেও তাদের নিজেদের ব্যাপারে উপলব্ধি বদলাতে পারি তবে দলে অবশ্যই প্রয়োগ করানোর মতো বিকল্প বাড়বে।
বিশেষ করে টি-টোয়েন্টির এই রমরমা সময়ে। এরপর এই মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন সংস্করণ টেস্ট ফরম্যাটেও যা কাজে লাগানো যাবে। তবে প্রভাব রাখার জন্য খুব বেশি সময় অবশ্য নেই। কিন্তু ঐ যে বললাম যে কয় মাস সময় তাতে যদি আমি এক-দুইজন ক্রিকেটারের নিজস্ব উপলব্ধির বদলাতে পারি সেটাই প্রাপ্তি হবে।
ক্রিকেট৯৭: রিভার্স সুইং একটা শিল্প। আর আপনি তাদের একজন যারা এই শিল্পকে নিখুঁতভাবে করার মাধ্যমে দর্শক বিনোদন জুগিয়েছেন। বাংলাদেশী পেসারদের পুরোনো বলে ঘাটতি আছে। আপনি কি এই সময়টায় এটা নিয়ে কাজ করবেন?
ডোনাল্ড: হ্যাঁ আপনি রিভার্স সুইং নিয়ে যেটা বললেন…এটা এমন একটা জিনিস যা আমরা (পেসাররা) সবসময় করতে চাই। আমার খেলোয়াড়ি জীবনে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছি তখন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় খেলা ছিল বেশ কঠিন কাজ। একদিকে গরম, অন্যদিকে ফ্ল্যাট উইকেট, কোনো বাউন্স থাকেনা। তো আপনাকে রিভার্স সুইংয়ের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। আমার ক্ষেত্রে এই ধারণাটা এসেছে টেনিস বলে খেলার প্রেক্ষিতে।
আমরা পুরোনো বলে প্রচুর অনুশীলন করতাম। আমাদের বলা হত যেন উইকেটের অ্যাঙ্গেল, ওভার দ্য উইকেট কিংবা রাউন্ড দ্য উইকেটের সঠিক ব্যবহারটা করতে পারি। উইকেটের সর্বোচ্চ ফায়দা লুটে বল হোক ইনসুইং কিংবা আউট সুইং করানোই ছিল অনুশীলনে বড় কাজ। আমরা সবাই জানি কনুইয়ের ব্যবহারে ফ্ল্যাট উইকেটে এমন কিছু করা সত্যি কঠিন কাজ। তো বলতেই হয় রিভার্স সুইং ম্যাসিভ স্কিলের মধ্যে পড়ে। নিজেদের সময়ে ওয়াকার ইউনুস, ইমরান খান, শোয়েব আখতাররা এটা দুর্দান্ত করেছে।
তারা ছিল সত্যি অবিশ্বাস্য। কিন্তু তাদের গতিও ছিল ভালো পর্যায়ের। সুতরাং এটাকে কার্যকর করতে ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে বল করতে পারার সামর্থ্যও আপনার থাকতে হবে। তবেই স্মার্টনেসের সাথে এটা করা সম্ভব। আপনাকে অ্যাঙ্গেল খুঁজে বের করতে হবে বলটা কোথায় ফেলবেন আর কোথায় শেষ করবেন। যদি সবকিছুর সংমিশ্রন দারুণ হয়ে তবে এটা বেশ মজার জিনিস। আমি সত্যি রিভার্স সুইংটা উপভোগ করতাম। আমি বিশ্বাস করি এটা এমন একটা জিনিস যা আপনি অর্জন করতে পারবেন যদি সবকিছু ঠিকঠাক হয়।

ক্রিকেট৯৭: খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই আপনার নামের পাশে সাদা বিদ্যুৎ ট্যাগ লেগেছে। এটা কতটা উপভোগ করেন?
ডোনাল্ড: একদিন সকালে অস্ট্রেলিয়ান একটি পত্রিকায় এটি প্রকাশ পায় এবং সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। এটা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবতাম না অবশ্য। অবশ্যই আমি স্বীকার করি এটা আমাকে কোনোভাবে বিরক্তও করতো না। এটা এমন একটা ট্যাগ ছিল যা ছড়িয়ে পড়ে, মূলত নাকের উপর জিঙ্ক ক্রিম ব্যবহার করা যেখান থেকে সাদা বিদ্যুতের জন্ম হয়েছে। এভাবেই এটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে। আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে এটা কখনোই আমার বিরক্তির কারণ হয়নি।
আপনি জানেন এটা এমন একটা ট্যাগ যা লোকে আমাকে ভাগ্যক্রমে দিয়েছে। আমি নিজে কিন্তু নিজেকে এই ট্যাগ দিইনি। এটা এমন কিছু যা স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আমি খুব বেশি মনযোগ দিইনি। এটাই সত্যি ব্যাপার, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে।
ক্রিকেট৯৭: আপনার লম্বা সময়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। পরবর্তীতে লম্বা সময়ে কোচিং ক্যারিয়ার। দুইটাই আবার ক্রিকেটের ভিন্ন ভিন্ন দুই সময়ে। নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের পর কোচিং ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পথ চলায় দুই সময়ের আলাদা কোনো পার্থক্য খুঁজে পান?

ডোনাল্ড: হ্যাঁ আমার লম্বা সময়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। পেছনে ফিরে তাকালে আমার কোনো আক্ষেপ নাই। তবে বিশ্বকাপ জিততে পারলে অবশ্যই ভালো লাগতো। কিন্তু হয়তো সেটার যোগ্য দাবিদার ছিলাম না আমরা। কিন্তু কোচিং পেশা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। যেখানে আপনাকে বুঝতে হবে মানুষের সাথে আচরণটা কেমন হবে। যখন খেলোয়াড় হিসেবে বলবেন তখন ব্যাপারটা গ্যারান্টেড যে আপনি আপনার নিজেকে জানেন।
আমি একজন দুর্দান্ত কোচ পেয়েছিলাম, বব উলমার। যার সাথে আমি দীর্ঘদিন কাজ করেছি। ম্যান ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। কোচ হিসেবে সৃজনশীল হওয়া…আমি সত্যি উপভোগ করেছি তাকে কোচ ও মেন্টর হিসেবে পাওয়াটা। তার কাছ থেকে শেখা অনেক কিছুই আমার কোচিং ক্যারিয়ারে ও ব্যক্তিগত জীবনে ধারণ করেছি। গত দুই বছর আমি নাইটসের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করেছি, গতরাতে সেটার সমাপ্তি হয়েছে। তবে পুরো সময়টা আমি দারুণ উপভোগ করেছি।
এখন আমার ভুমিকা বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ। আমি এটা আনন্দ নিয়ে করি। কোচিংয়ের পার্থক্য নিয়ে যেটা বললাম এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেখানে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে লোকজনের মানসিক ও স্কিলের দিক থেকে কি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্দিষ্ট করে লোকজনের কাছাকাছি যেতে হবে এবং বেশ ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। আমি সত্যি এই অংশটা উপভোগ করি যে আসলে একজন ক্রিকেটারের কি প্রয়োজন, তার ভাবনার জগতে কি ঘুরছে সেটা খুঁজে বের করাটা।
সে দিক থেকে চিন্তা করলে আমি বেশ আনন্দিত যে অনেকগুলো ড্রেসিং রুমেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আর এভাবেই আমি ভিন্ন ভিন্ন মানুষ, সংস্কৃতির সামনে থেকে দেখার, বোঝার সুযোগ পেয়েছি। ভারতে কাজ করলে এই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি জানা যায়। আইপিএলে কাজ করার সুবাদে আমি এ দিকটায় সম্মানিত বোধ করি। কাজ করেছি বহু তারকা ও ভিন্ন সংস্কৃতির ক্রিকেটারের সাথে। কোচ হিসেবে কথা বলার চেয়ে এসব লোকদের সাথে মিশে যা শিখবেন তা সবচেয়ে বড় পন্থা।