

আগের ম্যাচে দাপুটে জয়, ফলে প্রথম বারের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সুযোগ থাকলেও সেটি লুফে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের চেয়ে আফগানরা যে শক্তিশালী সেটি ব্যাটে-বলে কোণঠাসা করা এক জয়ে আরেক দফা প্রমাণ করলো মোহাম্মদ নবির দল। ৮ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজ শেষ করলো ১-১ সমতায়।
দুই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী রড মার্স ও শেন ওয়ার্নের মৃত্যুর শোক গায়ে মেখে মাঠে নামে দুই দল। ম্যাচ শুরুর আগে নিরবতা পালন ছাড়াও দুই দলের ক্রিকেটাররা মাঠে নামেন কালো আর্ম ব্যান্ড পরে।
আজকের ম্যাচে অবশ্য উপলক্ষ্য ছিল আরও একটি। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে মুশফিকুর রহিম খেলতে নেমেছেন শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। তবে এমন দিনে জয়ে রাঙাতে পারেনি বাংলাদেশ।
আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ মুশফিকের ৩০ ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২১ রানে ৯ উইকেটে ১১৫ রানের পুঁজি পায়। যা হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের অপরাজিত ৬৫ রানের ইনিংসের সাথে উসমান গনির ৪৭ রানের ইনিংসে ১৪ বল আগেই তাড়া করে আফগানরা।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই ফিরতে পারতেন হজরতউল্লাহ জাজাই। বেশ কিছুক্ষণ হাওয়ায় ভাসা বল লুফে নিতে ব্যর্থ বোলার নাসুম আহমেদ নিজেই। তবে পরের ওভারেই আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফেরান শেখ মেহেদী। ৩ রান করে কাভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়ে হতাশা প্রকাশ করেন মাঠেই, ছুঁড়ে ফেলেন ব্যাট।
তবে গুরবাজের বিদায়ের পর ছোট লক্ষ্য আমলে নিয়ে বেশ সাবলীল্ভাবেই এগিয়ে যায় জীবন পাওয়া জাজাই ও ৩ নম্বরে নামা উসমান গনি।
প্রায় প্রতি ওভারেই দুজনে হাঁকিয়েছেন বাউন্ডারি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে নাসুমকে একটি করে চার, ছক্কা গনির। সাকিব আল হাসানের করা নবম ওভারে জাজাইয়ের ব্যাটে ২ ছক্কা। ঐ ওভারেই দুজনের জুটি পেরোয় ফিফটি।
ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ যখন পুরোপুরি আফগানদের দিকে তখনই ক্যাচের মিসের মহড়া টাইগারদের। শেখ মেহেদীর করা ইনিংসের ১২তম ওভারে ডিপ মিড উইকেটে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে ব্যাট করা গনির সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন আফিফ হোসেন। ৪১ রানে তার আরেক দফা ক্যাচ মিস করেন স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো নাইম শেখ, এবারও বোলার শেখ মেহেদী।
১৫তম ওভারে সাকিবকে পেয়ে আবারও জোড়া ছক্কা জাজাইয়ের ব্যাটে, দলের শতরানের সাথে ব্যক্তিগত ফিফটি পূর্ণ হয় এই বাঁহাতির। গনির সাথে জুটিও সেঞ্চুরি ছোঁয়ার অপেক্ষায় ছিল, তবে রিয়াদের বলে গনি আউট হলে ভাঙে ৯৯ রানের জুটি। তার আগে গনির নামের পাশে ৪৮ বলে ৪৭ রান।
তবে ডারউইস রাসুলিকে (৮ বলে ৯) নিয়ে শেষের আনুষ্ঠানিকতা সারতে সময় নেননি জাজাই। শরিফুল ইসলামকে ছক্কা মেরে ৮ উইকেট ও ১৪ বল আগে জয় নিশ্চিত করা ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ৪৬ বলে ৩ চার ৬ ছক্কায় ৬৫ রানে।
আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি টিকেছে ১.৪ ওভার। ১০ বলে একমাত বাউন্ডারিতে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া মুনিম শাহরিয়ার।
আগের ম্যাচে দারুণ এক ইনিংস খেলা লিটন (১০ বলে ১৩) দাস এদিন হয়েছেন ব্যর্থ। আরও একবার ধীর গতির ব্যাটিং উপহার দিয়ে রান আউটে কাটা পড়া নাইম শেখ সমান ১৩ রান করেন ১৯ বল খেলে। ১৫ বলে ৯ রানের টি-টোয়েন্টি বিরুদ্ধ ইনিংস সাকিবের ব্যাটেও। ৪৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
চোটের কারণে প্রথম ম্যাচ মিস করা মুশফিকুর রহিম খেলতে নেমেছেন দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তার আগে এই কীর্তি ছিল কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের।
দলের বিপর্যয়ে হালও ধরার চেষ্টা করেন এই দুজনে, পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসে ৪৩ রান। অধিনায়ক রিয়াদের ছিল রান তোলার তাড়া, রাশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে তার ব্যাটে ১৪ বলে ৩ চারে ২১ রান।
শততম ম্যাচ রাঙানোর দারুণ উপলক্ষ্য পেয়েও ব্যর্থ হন মুশফিক। ২৫ বলে ৪ চারে তার ব্যাটে সর্বোচ্চ ৩০ রান। ফজলহক ফারুকীর বলে মোহাম্মদ নবিকে ক্যাচ দিলে ৬ উইকেটে ৯৯ রানে পরিণত হয় টাইগাররা। ততক্ষণে লড়াই করার মতো পুঁজি পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।
শেখ মেহেদী হাসান (০), আফিফ হোসেনরাও (৭) দলের প্রয়োজনে খেলতে পারেননি কার্যকর কোনো ইনিংস। তাতেই শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১১৫ রানেই থামতে হয় বাংলাদেশকে। ৪ ওভারে আ৮ রান খরচায় ফারুকীর শিকার সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।