

অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের মৃত্যুতে শোকের মাতম বিশ্ব ক্রিকেট জুড়ে। তবে একজন লেগ স্পিনার হিসেবে আফগান তারকা রাশিদ খানের জন্য আরও বেশি বেদনাদায়ক। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ইনিংস বিরতিতে ব্রডকাস্টারের সাথে আলাপে বহিঃপ্রকাশ করেছেন আবেগের।
শেন ওয়ার্ন লেগ স্পিনকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। এই শিল্পে অন্যতম গুনী শিল্পী গতরাতে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। মাত্র ৫২ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে বিদায় বলেছেন পৃথিবীকে।
ওয়ার্নদের হাত ধরে বিস্তৃতি লাভ করা লেগ স্পিন শিল্পের বর্তমান অন্যতম ধারক রাশিদ খান। ২০১৯ সালে রাশিদের প্রথম কাজ করার সুযোগ হয় কিংবদন্তী ওয়ার্নের সাথে। তার মৃত্যুতে রাশিদ গতকাল সারারাতই সেসব স্মৃতি হাতড়ে বেড়িয়েছেন।
আজ (৫ মার্চ) বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি শুরু হয় বিকেল ৩ টায়। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ ৯ উইকেটে তোলে ১১৫ রান। ইনিংস বিরতিতে রাশিদ কথা বলেন ধারাভাষ্যকার পারভেজ মাহরুফের সাথে। যার পুরোটা জুড়েই ছিল শেন ওয়ার্নকে নিয়ে।
রাশিদ বলেন,
‘অবশ্যই এটা আমার জন্য অন্যরকম সম্মানের ব্যাপার যে এমসিজিতে আমরা একসাথে বল করেছি। আমরা কথা বলেছি আমার লেগ স্পিন নিয়ে, আমি খুব বেশি আগ্রহী ছিলাম টেস্ট ক্রিকেটে বল করা নিয়ে তার সাথে কাজ করতে। সে নিজেও আমার সাথে একমত ছিল, পছন্দ করতো। আর বলতো আমি টেস্ট ফরম্যাটে ভালো করতে তোমাকে সাহয্য করতে পারলে নিজেই খুশি হব। আর সেই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম। এবারের বিগ ব্যাশে সে সুযোগটা এলো।’
‘সে আমাকে ডেকে নেয় এবং আমাদের মাঝে আলোচনা হয়। আমি বলবো এসব অবিশ্বাস্য। যেসব স্মৃতি, তার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি, যেসব কথা উনি আমাকে বলেছে, আমি এসব অনেক মিস করবো। যখনই তার মৃত্যুর খবর শুনেছি এসব স্মৃতি আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো, কি দুর্দান্ত ছিল এমসিজির সেসব মুহূর্ত। সে এমন একজন ছিল যে পুরোপুরি নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে চাইতো। এটা অবিশ্বাস্য, এমন দিন নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব ক্রিকেটে সবার জন্যই দুঃখের দিন।’
মৃত্যু চিরন্তন সত্য, তবে কিছু মৃত্যু নিশ্চিতভাবেই নাড়িয়ে দেয়। শেন ওয়ার্নের মৃত্যুও হয়তো রাশিদদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন অন্য অনেকের চেয়ে বেশি দাগ কেটে। আবগের দিক থেকে এমন একটি খবর কতটা কঠিন ছিল সে প্রশ্ন করা হয় আফগান তারকাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাশিদ কয়েক দফা ফোন চেক করেছেন, আগের রাতে ওয়ার্নের পরলোকগমনের বিষয়টি যে এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
রাশিদ বলেন,
‘এটা সুপার টাফ ছিল, আমি ঠিক বুঝতেছিলাম না কীভাবে নিজের খেলাটা খেলবো। সারারাত জুড়ে সে আমার মাথায় ছিল। এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠলাম এবং কয়েকবার আমার ফোন চেক করলাম আসলে গতরাতে কি ঘটেছিল! বিশ্বাস করার মতো নয় এমন কিছু।’
‘মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন তবে এটাই জীবন। আপনি জানবেন না কখন আপনার পালা আসবে, এটাকে মেনে নিতে হবে। কোচ হিসেবে তার অনেক কিছু দেওয়ার বাকি ছিল, তার মতো ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছু পাওয়ার ছিল, বিশেষ করে আমার জন্য।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বক্সিং ডে টেস্টের চতুর্থ দিন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) রাশিদ খান ও শেন ওয়ার্নের একসাথে বোলিং অনুশীলন সেশনে দেখা যায়। নিজের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের নানা অভিজ্ঞতা রাশিদের সাথে ভাগাভাগি করেন ওয়ার্ন। মূলত তখন বিগ ব্যাশ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন রাশিদ। এরপর আরও কয়েকবার দুজনের দেখা হয়, আলাপ হয়, বোলিং নিয়ে কাজ করা হয়।