

অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী শেন ওয়ার্নের আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে যখন শোকের মাতম তখনই বাংলাদেশ নারী দলের অপেক্ষা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের। আগামীকাল (৫ মার্চ) ভোর চারটায় দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে ইউনিভার্সিটি ওভাল মাঠে টস করতে নেমেই ইতিহাস গড়বেন টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রায় এক যুগ পর বিশ্বকাপ খেলছে বাঘিনীরা।
টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বকাপ খেলার স্বাদটা আগেই পেয়েছিল বাংলাদেশের নারীরা। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে আয়োজিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম খেলে টাইগ্রেসরা। ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মোট চারটি আসর ইতোমধ্যে খেলেও ফেলেছে।
কিন্তু বিশ্বকাপের পুরোদমের রোমাঞ্চ যে ওয়ানডে বিশ্বকাপেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দল যে স্বাদ প্রথম পেয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ২৩ বছর পর এসে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো নারীরা।
২০১১ সালের নভেম্বরে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের নারীরা প্রায় এক যুগ পার করলেও মাত্র ৪৩ টি ওয়ানডের বেশি খেলতে পারেনি। আগামীকাল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তারা পাচ্ছে চেনা প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
৪৩ ওয়ানডের ১৭ টিই দক্ষিণ আফ্রিকান নারীদের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে ফলাফল আমলে নিলে হতাশই হতে হবে, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৫ জয়ের বিপরীতে টাইগ্রেসদের জয় মাত্র ২ টি। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডেই জিতেছে কেবল ১৩ টি।
তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা প্রতিপক্ষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে ভালোই জানা টাইগ্রেসদের। অন্তত দলের কাপ্তান নিগার সুলতানা জ্যোতি সেটাই বলছেন। ফলে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর ভালো সুযোগও দেখেন জ্যোতি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এবং সবার জন্যই প্রথম ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্টে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব সেটা অনেকটা বোঝা যাবে এই ম্যাচে। আমরা জয়ের জন্যই নামব। আমাদের জন্য এটা সুযোগ, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমরা ভালোভাবে জানি। তাই জয় দিয়ে শুরু করার ভালো একটি সম্ভাবনা আমাদের মনে।’
‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমরা অনেক খেলেছি। তাদের শক্তি সম্পর্কে তাই আমাদের জানা আছে। ওদের পেসারদেরও আমরা খেলেছি। কিছু ধারণা তাই আছে। কিছু হোমওয়ার্ক অবশ্যই করেছি আমরা। পরিকল্পনাগুলো আমরা ম্যাচে বাস্তবায়ন করতে চাই।’
টুর্নামেন্টে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রতিটি দল গ্রুপ পর্বে খেলবে ৭ টি করে ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকা মিশন শেষে টাইগ্রেসদের পরের মিশন যথাক্রমে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড।
মূল পর্বে মুখোমুখি হওয়ার আগে টাইগ্রেসরা আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৯ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে হারতে হয়েছে ৭ রানে। হারা ম্যাচেও প্রাপ্তি দেখছেন টাইগ্রেস দলপতি।
জ্যোতির মতে, ‘আমার মনে হয়, গা গরমের ম্যাচে আমাদের প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। হয়তো ফল আমাদের পক্ষে আসেনি। তবে ইতিবাচক অনেক কিছুই আমরা পেয়েছি। প্রস্তুতি ম্যাচের সেই প্রাপ্তিগুলোকেই মূল টুর্নামেন্টে কাজে লাগাতে চাই আমরা।’
‘প্রস্তুতি ম্যাচ দুটি জিতলে হয়তো ঘাটতিগুলো আমাদের চোখে পড়ত না। সেদিক থেকে আমি খুশিই। জিতলে অনেক ভুল আড়াল হয়ে যায়। ঘাটতিগুলো ঢাকা পড়ে যায়। সেদিক থেকে আমাদের জন্য ভালো ব্যাপার ছিল যে, ঘাটতিগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের দলের জন্য অনেক ভালো হয়েছে এটা।’
সব ছাপিয়ে বাংলাদেশ কাপ্তানের লক্ষ্য নিজেদের ঐতিহাসিক ওয়ানডে বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চান। সে পথে শুরুটা ভালো করে এগোতে চান ম্যাচ ধরে ধরে। সতীর্থদের নিগার বিশ্বাস জুগিয়েছেন বলেও জানান, প্রতিপক্ষের নাম না দেখে খেলার পরিকল্পনা টিম বাংলাদেশের।
‘আমরা প্রতিটি ম্যাচ ধরে এগোতে চাই। আমাদের প্রথম বিশ্বকাপ এটি, স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আমরা সবাই জানি, শুরুটা ভালো করা জরুরি। তাহলে টুর্নামেন্টের বাকি সময়ের জন্য আরো সাহস ও আত্মবিশ্বাস পাব আমরা।’
‘মেয়েদেরকে আমি সেই বিশ্বাসই দেওয়ার চেষ্টা করছি যে, আমরা প্রতিপক্ষর নাম দেখব না। দক্ষিণ আফ্রিকা হোক বা যে কোনো দল, আমরা নিজেদের শক্তির জায়গা দেখাব, দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি সেই প্রমাণ দিব।’