

লিটন দাসের সামর্থ্য আর প্রতিভার কমতি ছিল না কখনোই। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম কয়েক বছর সেসবের ঝলক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখাতেই পারছিলেন না কোনভাবে। তবে সাদা পোশাকে রঙিন হচ্ছে পরিসংখ্যান, গত বছর রান করেছেন প্রায় ৫০ গড়ে। কিন্তু এবার নতুন রূপে দেখা মিলছে লিটনের, ৩ ফরম্যাটেই রান করছেন সমানতালে। লিটন বলছেন চিন্তাধারায় বদল করেছেন বলেই সফল হচ্ছেন।
২০২১ সালে ৭ টেস্টে এক সেঞ্চুরি, পাঁচ ফিফটিতে ৪৯.৫০ গড়ে রান করেছেন ৫৯৪। ১১ ওয়ানডেতে এক সেঞ্চুরিতে লিটনের ব্যাটে ২৩.২৭ গড়ে ২৫৬ রান, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০২ রানের ইনিংসটির বাইরে ৩০ পেরোনো ইনিংস কেবল একটি।
১৭ টি-টোয়েন্টিতে ১৩ গড়ে রান মাত্র ২০৮, স্ট্রাইক রেট আরও নাজুক (৯৫.৪১)। বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ১৬.৬২ গড়ে রান করেছেন ১৩৩। ৪৪ রানের একটি ইনিংস থাকলেও স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০ এর নীচে (৯৪.৩২)।
টি-টোয়েন্টিতে যা আদর্শের চেয়েও কম। ফল হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাকে বাদ দিতে সময় নেয়নি নির্বাচকরা।
তবে চলতি বছর বিপিএলে পারফর্ম করেছেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জিতেছেন সিরিজ সেরার পুরষ্কার। ৩ ম্যাচে ৭৪.৩৩ গড়ে রান ২২৩। প্রথম ওয়ানডেতে ১ রান করলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে রান যথাক্রমে ১৩৬ ও ৮৬।
সিরিজ সেরার পুরষ্কার জেতা লিটন বলেছেন নিজের উইকেটের মূল্য বুঝতে শিখেছেন। প্রায় ৫-৬ বছর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কাটিয়ে অভিজ্ঞতার দিক থেকে সিনিয়র ভাবছেন এবং সেটির প্রতিদান দিতে চান।
টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়ার এক সিরিজের মাথায় ডাক পেলেন। গতকাল (৩ মার্চ) প্রত্যাবর্তন ম্যাচে খেললেন ৪৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস। তার ব্যাটে চড়ে দল পেলো ৮ উইকেটে ১৫৫ রানের পুঁজি। নাসুম আহমেদের স্পিন ঘূর্ণিতে কাবু হয়ে আফগানরা গুটিয়ে গেছে ৯৪ রানে।
৬১ রানে জেতা ম্যাচে লিটনকে খেলতে হয়েছে ৩ নম্বরে। ওপেনিং থেকে ভূমিকা বদলে ৩ নম্বরে খেলা নিয়ে অস্বস্তি নেই উইকেট রক্ষক এই ব্যাটসম্যানের। বিশ্বকাপের অতীত ব্যর্থতা ভুলে নতুন শুরুর গল্পও শোনালেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রথমে বলতে চাই, অস্বস্তি ছিল না। আমার যে ভূমিকা, তাতে কোনোদিন সফল হবেন, কোনোদিন হবেন না। বিশ্বকাপে যেমন ব্যর্থ হয়েছি। ওইটা অতীত। এ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছি, ভালো খেলার চেষ্টা করেছি।’
‘ডিফারেন্ট বল গেম। টি-টোয়েন্টিতে রাশ থাকে বেশি, ওয়ানডেতে এনাফ সময়, টেস্টে অনেক সময়। ফরম্যাটটা আলাদা। আপনি ভালো টাচে থাকলে খেলাটা সহজ হয়ে যায় অনেকটা যে কোনো ফরম্যাটেই।’
নিজেকে কীভাবে ৩ ফরম্যাটের জন্য প্রস্তুত করছেন লিটন তা জানাতে গিয়ে মাথার খেলাকে সামনে আনলেন, ‘প্রিপারেশন জিনিসটা তো—সবাই বলে ক্রিকেটটা মাথার খেলা। তো এক্সাক্টলি আপনি যদি মাথা দিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে আপনার হাতে অনেক সময় আছে। কারণ, যদিও বা টি-টোয়েন্টি রাশের খেলা, ভালো ইনিংস খেলার জন্য যথেষ্ট সময় আছে।’
‘যেহেতু আমি টপ অর্ডারে খেলি। ওয়ানডেতে তো যথেষ্ট সময় আছে। তো আমার কাছে মনে হয়, চিন্তাধারা। চিন্তাধারা যদি করতে পারে, এ ফরম্যাটে এভাবে খেলব, ওই ফরম্যাটে এভাবে, তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।’
‘আমার জন্য না, সবার জন্যই। চিন্তাধারা চেঞ্জ করলে ১২০ বল অনেক সময়। এখন বুঝা শুরু করছি আস্তে আস্তে, আগে হয়তো ওভাবে বুঝতাম না। এটা হিউম্যান বিং ন্যাচার, আপনি যতো খেলবেন ততোই শিখবেন। আমার মনে হয় এ জায়গায় আমি বুঝার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে যাতে টিমকে হেল্প করার।’