

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ২ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি শুরু আজ (৩ মার্চ), তবে গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী দিন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দেখা মেলেনি আফগানিস্তানের। বিকেলের অনুশীলন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সরাসরি কিংবা ভার্চুয়ালি কোনভাবেই সিরিজ নিয়ে আফগানদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে দলটির মিডিয়া ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করা হলে আয়োজক দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করতে না পারার দায় বিসিবির উপরই চাপিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টিতে বিনা দ্বিধায় আফগানদের বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী দল বলতে হবে। ফলে আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনের দায়ের মতো মাঠের খেলায়ও বাংলাদেশকে চেপে ধরতে পারে রাশিদ খানরা। আজ বিকেল ৩ টায় মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নবম, আফগানিস্তানের অষ্টম। গত বছর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ না জিতলে টাইগারদের অবস্থা হতে পারতো আরও নাজুক।
দুই দলের মুখোমুখি ৬ লড়াইয়ে আধিপত্য আফগানদেরই। তাদের ৪ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ২ টি। অবশ্য ২০১৪ সালের প্রথম মুখোমুখি হয়েই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, মাঝে হেরেছে চার ম্যাচে। যেখানে ভারতের দেরাদুনে ৩ ম্যাচ সিরিজে হতে হয়েছে হোয়াইট ওয়াশও। যদিও ২০১৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের একটি ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেবার ফাইনালে উঠে দুই দলই, কিন্তু বৃষ্টিতে পন্ড হয়।
ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টি খেলার সামর্থ্য বিবেচনায় নিলেও আফগানিস্তান এগিয়ে থাকার কথা। রাশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবিরা বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ। কায়েস আহমেদ, ফজলহক ফারুকীরাও আছেন সে পথে। ব্যাটসম্যান রহমানউল্লাহ গুরবাজ, হজরতউল্লাহ জাজাইরা ইতোমধ্যে নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে বাংলাদেশ অধিনায়কের ভাবনাতেও এসেছে বদল। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট বলে বলে কোনো নির্দিষ্ট দলকেই এগিয়ে রাখতে চান না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
গতকাল তিনি বলেন, ‘আশা তো অবশ্যই জেতার। আমি সবসময় বলি, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট এমন একটা ফরম্যাট যেকোনো দিন যেকোনো দল জিততে পারে। আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আমরা কালকের ম্যাচটা ফোকাস করছি। আমাদের শুরুটা নিয়ে আমরা ফোকাস করছি।’
‘টি-টোয়েন্টি এমন একটা ফরম্যাট, আপনি এক নম্বর দলের বিপক্ষে খেলুন আর ১০-১২ নম্বর দলের সাথে খেলুন, একটি পার্টনারশিপ ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। ওয়ানডে ও টেস্টে কামব্যাক করার সময় পাওয়া যায়। টি-টোয়েন্টি যায় না। যা করার সাথে সাথেই করতে হবে।’
আফগান স্পিনারদের আটকাতে চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজের উইকেটে ঘাসের পরিমাণ বেশি রাখা হয়েছে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে ঢাকায় ফিরেও টি-টোয়েন্টির আগে একই ঘরানার উইকেটেরই আভাস মিলছে।
উইকেট নিয়ে রিয়াদ যোগ করেন, ‘আশা করি ভালো উইকেট, স্পোর্টিং উইকেট হবে। বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটাররাও সুবিধা পাবে। একটু সময় কাটানো গেলে ব্যাটাররা ভালো সময় কাটাতে পারবে।’
টি-টোয়েন্টি বলেই যে কেবল আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে তাতে বিশ্বাসী নন টাইগার দলপতি। তার মতে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে মানসিকতাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
‘অ্যাটাক মানে ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং করা। অনেক সময় হয়ত কন্ডিশন বিবেচনা করতে হবে বা পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আপনি যদি ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং না করেন তাহলে আপনি নিজেই শেলের মধ্যে থাকবেন।’
‘একবার শেলের মধ্যে ঢুকে গেলে বের হওয়া অনেক কঠিন। যেখানেই ব্যাটিং করুক, ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং করা, স্ট্রেন্থ অনুযায়ী ব্যাটিং করা গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হলেও দুঃসংবাদ গতকাল ব্যাটিং অনুশীলন করতে নেমে ডান হাতের বুড়ো আঙুলে মুশফিকুর রহিমের চোট পাওয়া। তাকে রাত পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখার খবর জানা যায়।
পরে স্কোয়াডে যোগ করা হয় উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে। আজকের ম্যাচে মুশফিকের না খেলার সম্ভাবনাই বেশি।
বোলিং আক্রমণে কম্বিনেশ কেমন হবে তা সম্পর্কে জানতে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে প্রশ্ন করা হলেও তা খোলাসা করেননি।
এদিকে বিপিএলে পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে স্কোয়াডে জায়গা করে নেওয়া ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারের আজ অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। সে ক্ষেত্রে তার সঙ্গী হিসেবে দেখা যেতে পারে পাকিস্তান সিরিজে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া লিটন দাসকে।
যদিও যেভাবে নাইম শেখকে এখনো অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্ট আগলে রাখছেন তাতে মুনিমের সাথে তাকে ওপেন করতে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাংলাদেশ একাদশে অভিষেক হতে পারে আরও একটি, ইতোমধ্যে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলে ফেলা ইয়াসির আলি রাব্বি সুযোগ পেতে পারেন।
সব ছাপিয়ে নিজের শেষ ৮ টি-টোয়েন্টিতে হারা বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচটি নানা দিক থেকেই চ্যালেঞ্জিং হবে। যেখানে শেষ ৮ ম্যাচে আফগানিস্তান জিতেছে ৫ ম্যাচে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ:
লিটন দাস (উইকেট রক্ষক), মুনিম শাহরিয়ার, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইয়াসির আলি, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদী, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নুরুল হাসান সোহান/নাসুম আহমেদ।