

আগেই সিরিজে নিশ্চিত, তবে সুযোগ ছিল আফগানিস্তানকে প্রথমবারের মতো হোয়াইট ওয়াশ করার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের ১০ পয়েন্ট অর্জন। আগেরদিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ জোর দিয়ে সে কথাই বলেছেন, এমনকি কাউকে বিশ্রাম দেওয়া হবে কীনা সে প্রশ্নেও কিছুটা নেতিবাচকতা খুঁজে পান। কিন্তু চট্টগ্রামে এমন ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
রহমানউল্লাহ গুরবাজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানো দিনে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান ১৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৪০.১ ওভারে। গুরবাজের অপরাজিত ১০৬ রানের পাশাপাশি রিয়াজ হাসানের ৩৫ ও রহমত শাহর ব্যাটে ৪৭।
অন্যদিকে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ লিটন দাসের ৮৬ রানের ইনিংসের পরও আটকে যায় ১৯২ রানে। ভালো শুরুটা ধরে রাখতে পারেনি মাঝে, শেষটা হয়েছে আরও বাজে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাকিব আল হাসানের ব্যাটে ৩০, বেশ ধীরগতির ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ছিলেন ২৯ রানে।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটিতে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও রিয়াজ হাসান এনে দেন উড়ন্ত সূচনা। যেভাবে সাবলীলভাবে খেলছিলেন তাতে দুজনের ৭৯ রানের জুটি লম্বা হতে পারতো আরও বড়।
সাকিব আল হাসানের বলে স্টাম্পড হয়ে রিয়াজ ফিরলে ভাঙে জুটি। ৪৯ বলে ৩৫ রান করা এই ওপেনার অবশ্য উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো মুশফিকুর রহিমের ভুলে প্রায় বেঁচেই যাচ্ছিলেন। যদিও শেষ মুহূর্তে মুশফিক কৌশলী হয়ে ফেরান এই ওপেনারকে।
রহমত শাহকে নিয়ে বাকি সময়টা অনায়েসেই কাটিয়ে দিচ্ছিলেন গুরবাজ। ৫৩ বলে ৪ চার ১ ছক্কায় ফিফটি ছুঁয়েছেন গুরবাজ।
ফিফটির পর অবশ্য জীবন পেয়েছেন, শরিফুল ইসলামের করা ২৫তম ওভারে শর্ট বলকে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন। কিন্তু সহজ ঐ ক্যাচ (তখন ৬১ রানে ব্যাট করছিলেন গুরবাজ) লুফে নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এরপর ৬৩ রানেও প্রায় ক্যাচ তুলে দিয়েছেন, শরিফুলের করা ২৭তম ওভারে আউটসাইড এজ হয়ে উইকেট রক্ষক মুশফিকের গ্লাভস স্পর্শ করে চার হয়। যদিও মুশফিকের জন্য বেশ কঠিন ক্যাচ ছিল সেটি, পেয়েছেন খানিক চোটও।
গুরবাজ সেঞ্চুরির দিকে হাঁটলেও দলকে জয় থেকে মাত্র ১৪ রান দূরে রেখে আউট হন রহমত। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্টাম্পড হওয়ার আগে ৬৭ বলে ৩ চারে তার ব্যাটে ৪৭ রান। ভাঙে গুরবাজের সাথে ঠিক ১০০ রানের জুটি। ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকেননি হাশমতউল্লাহ শাহিদী (২)।
তবে গুরবাজের সেঞ্চুরি ও দলের জয় নিশ্চিতে যা কোনো প্রভাবই ফেলেনি। মুস্তাফিজুর রহমানের করা ৩৯তম ওভারে পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে ১০৫ বলে ৬ চার ৪ ছক্কায় নিজের প্রথম ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেন গুরবাজ। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১১০ বলে ৭ চার ৪ ছক্কায় ১০৬ রানে।
এর আগে দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস আজ শুরুটা করেন কিছুটা ধীরে। সময় নিয়ে লিটন অবশ্য ফেরেন চেনা ছন্দে। তবে ফারুকীর করা ১১তম ওভারে ফুল লেংথে করা ভেতরে ঢুকানো ডেলিভারিতে বোল্ড তামিম। এই নিয়ে সিরিজে তিনবারই একই বোলারকে উইকেট দিয়েছেন তামিম, যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার।
২৫ বলে ১১ রান করা তামিমের বিদায়ে ভাঙে লিটনের সাথে ৪৩ রানের জুটি। ক্রিজে এসেই চার মেরে শুরু সাকিবের। পরের বলেই অবশ্য এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দিয়ে দেয় আম্পয়ার, সাথে সাথে রিভিউ নেন সাকিব। আউট সাইড লেগে পিচড হওয়াতে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়।
১৬তম ওভারে প্রথম আক্রমণে আসা রশিদ খানের প্রথম বলেই ফাইন লেগ দিয়ে সেটিকে চার মারেন লিটন। ২০তম ওভারে লিটন তুলে নেন ফিফটি। ঐ ওভারে লিটনের হাঁকানো কাভার ড্রাইভটা চোখ জুড়ানো। ততক্ষণে সাকিবের সাথে জুটিতেও যোগ হয়ে যায় ৫০ এর বেশি রান।
জুটি অবশ্য ৬১ রানের বেশি লম্বা হয়নি ওমরাজাইয়ের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি ডিফেন্স করতে গিয়ে সাকিব স্টাম্পে টেনে আনলে। ফিরেছেন ৩৬ বলে ৩ চারে ৩০ রান করে।
আগের ম্যাচে ৮৬ রানের ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিমকে ১৫ বলে ৭ রানের বেশি করতে দেননি রাশিদ। ইয়াসির আলি রাব্বিকে (৪ বলে ১) নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করতেও নেননি বেশি সময়। ১২৫ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথেও লিটনের জুটি বড় হয়নি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ফেরেন আগের ম্যাচের নায়ক লিটন। মোহাম্মদ নবির বলে গুলবাদিন নাইবকে ক্যাচ দিয়েছেন ১১৩ বলে ৭ চারে ৮৬ রান করে। নিজের করা পরের ওভারে আফিফকেও (৫) ফেরান নবি।
এরপর চলেছে আসা যাওয়ার মিছিল, ৭১ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এক পাশ আগলে রেখে যোগ্য সঙ্গ না পাওয়া মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ৫২ বলে ২৯ রানে। আফগানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট রাশিদ খানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশ ১৯২/১০ (৪৬.৫), তামিম ১১, লিটন ৮৬, সাকিব ৩০, মুশফিক ৭, রাব্বি ১, মাহমুদউল্লাহ ২৯*, আফিফ ৫, মিরাজ ৬, তাসকিন ০, শরিফুল ৭, মুস্তাফিজ ১; ফারুকি ৭.৫-০-৩৩-১, ওমরজাই ৬-০-২৯-১, রাশিদ ১০-০-৩৭-৩, নবি ১০-০-২৯-২
আফগানিস্তান ১৯৩/৩ (৪০.১), গুরবাজ ১০৬*, রিয়াজ ৩৫, রহমত ৪৭, শহিদী ২, জাদরান ১*; সাকিব ১০-০-৪৭-১, মিরাজ ৮.১-১-৩৭-২
ফলাফলঃ আফগানিস্তান ৭ উইকেটে ম্যাচে জয়ী, বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী।