মিরাজ-আফিফের রেকর্ডগড়া জুটিতে বাংলাদেশের জয়

মিরাজ-আফিফের রেকর্ডগড়া জুটিতে বাংলাদেশের জয়
Vinkmag ad

বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়গুলোর একটি জুনিয়র ক্রিকেটারদের দায়িত্ব নিতে না পারা। তবে আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি) রেকর্ড গড়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ে আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ যেনো সেসবেরই জবাব দিলেন। ২১৬ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলীয় ৫০ রানেই সিনিয়র চার ক্রিকেটারের বিদায়, সব মিলিয়ে উইকেট নেই ৬ টি। সেখান থেকেই অবিচ্ছেদ্য জুটিতে দলকে ৪ উইকেটের দারুণ এক জয় উপহার দিলেন এই দুই তরুণ।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে আফগানিস্তান। যেখানে নাজিবউল্লাহ জাদরানের ৬৭ রানে ভর করে ২১৫ রানের সংগ্রহ পেয়েছে সফরকারীরা। যদিও শেষদিকে খেই না হারালে সংগ্রহটা হতে পারতো আরও বড়।

জহুর আহমেদের উইকেট বিবেচনায় এই লক্ষ্য মামুলিই বলা যায়। তবে শুরুতেই টপ, মিডল অর্ডারের ধ্বস নামিয়ে সে পথটা বেশ কঠিন করে দেন আফগান বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকী।

সেটাই আবার সহজ করে আনেন আফিফ-মিরাজ, ১৭৪ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি ৭ম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তো বটেই, সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দুজনেই ছিলেন সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে, আফিফ ৯৩ ও মিরাজ ৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন। দল পেলো ৭ বল ও ৪ উইকেট হাতে রাখা জয়।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ফারুকীর তোপে লন্ডভন্ড বাংলাদেশ টপ অর্ডার। ১ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৮) ও লিটন দাসের (১) বিদায়ের পর দলকে পথ দেখাতে ব্যর্থ মুশফিকুর রহিমও। ফারুকীর বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মুশফিকও, একই ওভারে অভিষিক্ত ইয়াসির আলি রাব্বিকেও দুঃস্বপ্ন উপহার দেন এই বাঁহাতি।

ভেতরে ঢোকানো দারুণ এক ডেলিভারিতে ইয়াসির আলিকে বোল্ড করে ৩ ওভারে এক মেডেনসহ নিলেন ৪ উইকেট! ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৫ রানের লক্ষ্যকেই বাংলাদেশের জন্য করে তুললেন পাহাড়সম।

ফারুকীর তোপ সামলে উঠার আগেই দৃশ্যপটে আবির্ভাব স্পিনারদের। নিজের চতুর্থ ওভারেই বিপিএল সতীর্থ সাকিব আল হাসানকে (১০) ফেরান মুজিব উর রহমান। নিজের প্রথম ওভার করতে এসে রাশিদ খান তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে (৮)। ৫০ রানেই নেই ৬ উইকেট।

সেখান থেকেই আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের চমক দেখানো এক দুর্দান্ত জুটি। ইয়েমেন আহমেদজাইয়ের করা ১৭তম ওভারে আফিফ-মিরাজের ব্যাটে দুই চার, এক ছক্কা। দুজনেই এরপর নিজের জোনে পাওয়া বলে হাঁকিয়েছেন বাউন্ডারি।

আলোক স্বল্পতায় প্রায় ১৫ মিনিটের মতো বন্ধ ছিল খেলা। আলো ফিরতেই রাশিদ খানকে কাট করে সিঙ্গেল নিয়ে ৬৪ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন আফিফ। এরপর ১৪২ বলে দুজনের জুটিও ছুঁয়ে ফেলে শতরান। ৩৬তম ওভারে আহমেদজাইকে পুল শটে দুই চার হাঁকিয়ে মিরাজ ৭৯ বলে তুলে নেন ফিফটি।

দলকে চরম বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে জুটির রেকর্ডও গড়ে ফেলেন মিরাজ-আফিফ। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১২৭ রানের জুটিটি ছিল ৭ম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আজ সেটিকে দ্বিতীয় অবস্থানে নামিয়ে দিলেন মিরাজ-আফিফ।

শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ২৯ রান। আফগানদের সেরা বোলার ফারুকীর করা ৪৬তম ওভারেই আসে ১৩ রান। রাশিদ খানের পরের ওভারে আসেনি ১ রানের বেশি, মূলত রান করার চেয়ে ঐ ওভারটা দেখে খেলাতেই মনযোগ দেয় আফিফ-মিরাজ।

তবে ফারুকীর করা ৪৮তম ওভারে ১১ রান নিয়ে কাজ এগিয়ে রাখে আফিফ-মিরাজ। ৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে পুল করে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন আফিফ।

মিরাজ ৯৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটি সাজান ১১৫ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায়। যেখানে ১২০ বলে ৯ চারে হার না মানা ৮১ রানের ইনিংস মিরাজের।

এর আগে ব্যাট করা আফগানিস্তান রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের উদ্বোধনী জুটি টিকেনি ২.৩ ওভারের বেশি। মুস্তাফিজের বলে ৭ রান করে তামিমকে ক্যাচ দেন গুরবাজ। ব্যক্তিগত ৩ রানে ফিরতে পারতেন ইব্রাহিমও। তাসকিন আহমেদের বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।

জীবন পাওয়া জাদরান (২৩ বলে ১৯) অবশ্য ইনিংস লম্বা করতে পারেননি, শরিফুলের বলে ক্যাচ দেন স্লিপে। ভাঙে রহমত শাহের সাথে ৪৫ রানের জুটি। এরপর অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদী ও রহমত শাহর ধীর গতির জুটিতে যোগ হয় ২৩ রান।

জুটি ভাঙেন তাসকিন, তার ব্যাক অব লেংথের লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে ব্যাক ফুটে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রহমত (৬৯ বলে ৩৪)।

৩ উইকেটে ৭৯ রানে পরিণত হয় আফগানিস্তান।অধিনায়ক হাশমতউল্লাহও যেতে পারেননি বেশি দূর, ৪৩ বলে ২৮ রান করে পরিণত হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের একমাত্র শিকারে।

আফগানদের রান তোলার গতি ধীর করাতে বড় ভূমিকা মিরাজের। কোনো উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে ৩ মেডেনসহ খর করেন মাত্র ২৮ রান। তবে নাজিবউল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবির ব্যাটে লড়াকু সংগ্রহের পথ দেখে আফগানরা। দুজনে মিলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন, এ দফায়ও জুটি ভাঙেন তাসকিন।

নবি (২৪ বলে ২০) ফিরলেও জাদরান ৭০ বলে তুলে নেন ফিফটি। তবে অন্য পাশে যোগ্য সঙ্গী পাননি এই বাঁহাতি। ইনিংসের ৪৫তম ওভারে সাকিব ফেরান গুলবেদিন নাইব (১৭) ও রাশিদ খানকে (০)। পরের ওভারেই মুস্তাফিজুর রহমান ফেরান মুজিব উর রহমানকে (০)।

আফগানিস্তান শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়ে ২১৫ রানের সংগ্রহ পায় জাদরানের ব্যাটে চড়েই। শেষ ২১ রানে হারায় ৫ উইকেট। ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে তার জাদরানের ব্যাটে ৮৪ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৬৭ রান।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট মুস্তাফিজের, ২ টি করে উইকেট নেন তাসকিন, সাকিব, ও শরিফুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

আফগানিস্তান ২১৫/১০ (৪৯.১), গুরবাজ ৭, ইব্রাহিম ১৯, রহমত ৩৪, হাশমতউল্লাহ ২৮, নাজিবউল্লাহ ৬৭, নবি ২০, গুলবেদিন ১৭, রাশিদ ০, মুজিব ০, ইয়ামিন ৫, ফারুকি ০*; মুস্তাফিজ ৯.১-০-৩৫-৩, তাসকিন ১০-০-৫৫-২, সাকিব ৯-১-৫০-২, শরিফুল ১০-১-৩৮-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-১

বাংলাদেশ ২১৯/৬ (৪৮.৫), তামিম ৮, লিটন ১, সাকিব ১০, মুশফিক ৩, রাব্বি ০, মাহমুদউল্লাহ ৮, আফিফ ৯৩*, মিরাজ ৮১*; ফারুকি ১০-১-৫৪-৪, মুজিব ১০-০-৩২-১, রাশিদ ১০-১-৩০-১

ফলাফলঃ বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচিং স্টাফে অজিত আগারকার

Read Next

মিরাজের কণ্ঠে শুনুন ঐতিহাসিক জয়ের গল্প গুলো

Total
0
Share