

৭ মাস পর ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। আগামীকাল (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা। বর্তমানে বিশ্বের সেরা স্পিন আক্রমণ আফগানদের, তবে টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল সেসব নিয়ে ভাবছেন না। এর আগে ওয়ানডেতে তাদের বিপক্ষে সফল বলেই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ কাপ্তান। অন্যদিকে আফগানিস্তান দলপতি প্রতিপক্ষ নয় নিজেদের দিকেই দিচ্ছেন পূর্ণ মনযোগ।
গত বছর জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট বলে মাঠে নামার আগে রোমাঞ্চিত টাইগাররা। যদিও এই বিরতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন না অধিনায়ক তামিম।
আগামীকাল সকাল ১১ টায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে ম্যাচটি। সিরিজের বাকি দুই ওয়ানডে যথাক্রমে ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি একই সময়ে একই ভেন্যুতে মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
ভালো শুরু পাবার ব্যাপারে আশাবাদী তামিম আজ (২২ ফেব্রুয়ারি) ম্যাচ পূর্ববর্তী দিনের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গত জুলাইয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলাম। ৬-৭ মাস পর এসেছি। তবে সবাই রোমাঞ্চিত। দ্বিধাহীনভাবে এটা আমাদের প্রিয় ফরম্যাট। এ বছর বেশ কয়েকটা ওয়ানডে আছে। গত বছর এভাবে ছিল না। কালকের জন্য মুখিয়ে আছি। আশা করছি ভালো শুরু পাব।’
‘চ্যালেঞ্জের কিছু না। কমবেশি সবাই-ই অভিজ্ঞ। ওদের সাথে ওয়ানডে দিয়ে শুরু করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত। ওয়ানডেতে অবশ্যই আমরা ভালো দল। ছন্দে ফেরাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই খেলার মধ্যে আছে, এটা ইতিবাচক। দল হিসেবে ভালো করতে হবে- এটাই।’
আফগানিস্তানের স্কোয়াডে থাকা তিন স্পিনার রাশিদ খান, মোহাম্মদ নবি ও মুজিবুর রহমান বর্তমানে বিশ্বের যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপের জন্য ভয়ংকর। তবে তামিম বলছেন অতীতে তাদের বিপক্ষে খেলেই সফল হয়েছেন তাই এসব নিয়ে বেশি ভাবতে চান না।
তার মতে, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো বোলারকে নিয়ে বেশি কথাবার্তা বলতে চাই না। যেটা বললাম- তাদের বোলিং অনেক ভালো, সম্ভবত সেরা স্পিন অ্যাটাক তাদেরই। কিন্তু এদের বিপক্ষেই আমরা অতীতে অনেক ভালো করেছি, বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে। আবার কেন করতে পারব না? প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে।’
চট্টগ্রামের উইকেট এমনিতে স্পোর্টিং হয়। তামিম এই সিরিজেও আশা করছেন তেমনটা, ‘চট্টগ্রামের উইকেট তো সাধারণত ভালোই হয়। বিপিএলেও ভালোই ছিল। স্পোর্টিং উইকেট আশা করছি, যেখানে পেসার, ব্যাটার সবার জন্য সহায়তা থাকবে। (ম্যাচ শুরুর সময়) এগারোটার সময় আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজও খেলেছি। শিশিরের একটা প্রভাব আছে। এটার কথা মাথায় রেখে এই জিনিসটা করা।’
বাংলাদেশ একাদশে অন্তত একটি অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা বেশ। সেক্ষেত্রে ব্যাটিং অর্ডারের ৫ নম্বরে দেখা যেতে পারে ইয়াসির আলি রাব্বি কিংবা মাহমুদুল হাসান জয়কে। এর বাইরে সাকিব আল হাসান সহ ২ স্পিনার ৩ পেসার নিয়ে ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানো একাদশ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ইনিংস ওপেন করার ক্ষেত্রে তামিমের সাথে লিটনকে দেখা যাবে, তিন নম্বরে সাকিব, চার নম্বরে মুশফিকুর রহিম, ৬ নম্বরে থাকছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের সাথে পেস বোলিং আক্রমণে যোগ দিতে পারেন শরিফুল ইসলাম কিংবা অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এবাদত হোসেন।
এর আগে দুই দল দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে একটি, এর বাইরে দেখা হয়েছে আইসিসি ও এসিসি ইভেন্টে। সব মিলিয়ে ৮ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় পাঁচটি। একমাত্র দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ঘরের মাঠে টাইগারদের হারতে হয়েছে এক ম্যাচে। সাথে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের এশিয়া কাপেও একটি করে হার সঙ্গী হয়েছে।
এদিকে আজ আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদী জানান তারা প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের নিয়ে ভাবতে চান। অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে চান ২০১৯ সালে চট্টগ্রামেই বাংলাদেশকে টেস্ট হারানো ম্যাচ থেকে।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমি আসলে নিজেদের শক্তি, আমাদের খেলোয়াড় নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি। অব বিভাগ আমলে নিয়ে আমরা বলতে পারি ভালো একটা দল আমাদের। আমি তাদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, আশা করি তারা তাদের সেরাটাই দিবে।’
‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমি সেখান থেকে শুরু করতে চাই (২০১৯ সালে টেস্ট জয়)। এখানে আমাদের দারুণ স্মৃতি আছে, সেসব থেকে ইতিবাচক বিষয়গুলো নিতে চাই। আমাদের চেষ্টা থাকবে আগামীকাল থেকে সেসব আবার শুরু করতে।’
গত বছর আফগানিস্তান খেলেছে মাত্র তিনটি ওয়ানডে। চলতি বছর অবশ্য ইতোমধ্যে খেলে ফেলেছে আরও তিনটি ওয়ানডে। তবে সব মিলিয়ে গত এক বছরের বেশি সময়ে মাত্র ছয়টি ওয়ানডে খেলা কিছুটা পিছিয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। যদিও ঐ ছয় ম্যাচেই জয় পাওয়া আফগানিস্তান অধিনায়ক সেটা মানতে নারাজ ।
হাশমতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছি আর চলতি বছর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলেছি। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলার পর আমরা ভালোই প্রস্তুত, আমরা সেখানে ভালো খেলেছিও। সুতরাং এটা (কম খেলা) আমাদের জন্য সমস্যার কারণ হবে না।’
আফগানিস্তানকে কিছুটা এগিয়ে দিতে অবশ্য ভূমিকা রাখবে স্টুয়ার্ট ল। বাংলাদেশের সাবেক এই কোচকে এই সিরিজের আগে অন্তবর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আফগানিস্তান। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ আশাবাদী বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ধারণা এগিয়ে দিবে আফগানিস্তানকে।
সিরিজের আগেই আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলেছেন বলে কন্ডিশন সম্পর্কে আরও ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে সফরকারীদের। এর বাইরে বাংলাদেশে এসে সিলেট ৬ দিনের ক্যাম্পও করেছে আফগানরা। সেখানেও নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার সেরা সুযোগ পায়।