সাকিব-সুজনের প্রশংসার প্রমাণ দিতে চান মুনিম

মুনিম শাহরিয়ারের মাঝে বাংলাদেশের হয়ে খেলার সব গুণ দেখছেন সাকিব
Vinkmag ad

টি-টোয়েন্টিতে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটারের খোঁজে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ। বেশ কয়েকজন আশার ঝলকানি দেখিয়েও হারিয়ে গেছেন। নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মুনিম শাহরিয়ার। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএলে) প্রথম আলো কাড়েন, সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে ছড়িয়েছেন দ্যুতি।

‘ক্রিকেট৯৭’ কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মুনিম জানিয়েছেন বিপিএলে অর্জিত অভিজ্ঞতা, ডোয়াইন ব্রাভো, জ্যাক লিনটটদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা, বড় শট খেলার পেছনের নৈপথ্য, ফরম্যাট অনুয়ায়ী খেলার সামর্থ্য সহ নানা বিষয়। নিচে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হল-

ক্রিকেট৯৭: আবাহনীর হয়ে সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত একটা টুর্নামেন্ট পার করেছেন। এরপরেও  বিপিএলে দল না পাওয়ায় কিছুটা অবাক হয়েছিলেন? কিংবা আপনার নিজের অনুভূতিটা কি ছিলো?

মুনিম: যেহেতু মানুষ একটু তো খারাপ লাগছেই। দুইদিন মন খারাপ ছিল। কিন্তু এটা হতেই পারে। পরে দল পেয়ে অবশ্য বেশ খুশিই হয়েছি। অনেক ভালো লেগেছে।

ক্রিকেট৯৭: দল পেলেন না। টুর্নামেন্টও শুরু হয়ে যাচ্ছিলো প্রায়। ঐ সময়টায় নিজের প্রস্তুতির জন্য কি পরিকল্পনা করেছিলেন?

মুনিম: সত্যি কথা বলতে ড্রাফটের পর আমি একটু আভাস পেয়েছিলাম যে আমি দল পেতে পারি। ওভাবেই আসলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যদিও দল পাওয়া না পাওয়ার সাথে আমার প্রস্তুতির কোনো সম্পর্ক নেই। দল না পেলেও সেটা যথারীতি চলতো। আমি আমার মতো করেই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার চিন্তা ছিল দল পেলে ভালো না পেলেতো আসলে কিছু করার নাই।

ক্রিকেট৯৭: দল পাওয়ার পর তো আরেক বিপত্তি, হলেন করোনা পজিটিভ। নেগেটিভ হয়েও একাদশে সুযোগ মিলছিলো না। ঐ সময় টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে কি ধরণের কথা হয়েছে?

মুনিম: কথা বার্তা বলতে সুযোগ তো টিম ম্যানেজমেন্টই দেয়। আমি শুধু আমার অনুশীলনটা চালিয়ে গেছি। এতো বেশি চিন্তা করতেছিলাম না কোনো কিছু নিয়ে। আমার ভাবনা ছিল যখনই সুযোগ পাবো চেষ্টা করবো কাজে লাগানোর।

ক্রিকেট৯৭: এই যে আপনাকে নিয়ে সাকিব আল হাসান, খালেদ মাহমুদ সুজনরা ইতিবাচক সব মন্তব্য করছে তা কেমন লাগছে? এতে কি ভালো করার চ্যালেঞ্জটা বাড়ছে আরও?

মুনিম: যতটুকু না ভালো লাগার তার চেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। ভালো লাগাতো আসলে সন্তুষ্টি না, কথাগুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে। উনাদের মতো কিংবদন্তীরা আমাকে নিয়ে কথা বলছে। অবশ্যই ভালো লাগার কথা। কিন্তু উনারা যেভাবে প্রশংসা করেছে আমি সে জায়গাগুলোতে নিজেকে আরও পোক্ত করতে চাই। যেনো উনাদের বলা কথাগুলো সঠিক প্রমাণ করতে পারি।

ক্রিকেট৯৭: লিস্ট ‘এ’, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও আপনি খারাপ করছেন না। যদিও খেলেছেনই অল্প কয়টা ম্যাচ। কিন্তু ফরম্যাটটা যখন টি-টোয়েন্টি তখনই ভিন্ন এক মুনিম শাহরিয়ারকে দেখা যায়। আপনি নিজে কি অনুধাবন করেন টি-টোয়েন্টি আপনার ঘরানার ফরম্যাট?

মুনিম: আমার নিজের অনুধাবন হচ্ছে আমি ফরম্যাট অনুযায়ী খেলা পরিবর্তন করতে পারি। জাতীয় লিগে এমন না যে খুব ভালো গেছে কিংবা খুব বাজে গেছে। পাঁচ ইনিংসে আমার দুইটা ফিফটি আছে, অভিষেক ম্যাচে ফিফটি করেছি। আমি জিনিসটা পারি, এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। ওয়ানডে আমার অন্যতম প্রিয় একটা ফরম্যাট। টি-টোয়েন্টিতো আমি উপভোগ করি খুব। তিন ফরম্যাটেই আসলে…যখন যে ফরম্যাট সে অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি। এমন না যে টি-টোয়েন্টি বেশি টেস্ট, ওয়ানডে কম। টি-টোয়েন্টি আসার আগেতো আমি ওয়ানডেই খেলেছি।

ক্রিকেট৯৭:  ক্রিস গেইলের মতো দুনিয়ার অন্যতম বিস্ফোরক একজনকে পাশে রেখে নিজে তান্ডব চালালেন, তার সাথে আসলে কি ধরণের কথা হয়েছিল?

মুনিম: বিষয়টা তো এমন না যে গেইলই মারবে আমি সমর্থন দিয়ে যাবো। ক্রিকেট এমনই, কখনো এমন নির্দিষ্ট সময় যায়, ওলট পালট হয়, অদল বদল হয়। কখনো ও মেরে খেলবে আপনি সমর্থন দিবেন, কখনো আপনি মেরে খেলবেন নন স্ট্রাইকার আপনাকে সমর্থন দিবে। তবে আমি নিজে সেভাবে ভাবিনি যে গেইলকে এক পাশে রেখে আমি মারতেছি, অন্যরকম ব্যাপার স্যাপার, কিংবা আমি বড় কিছু হয়ে গেছি। তবে একটু ভালো লাগা কাজ করেহে, উপভোগ করেছি। উনার খেলা দেখতাম, উনি বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান।

ক্রিকেট৯৭: আক্রমণাত্মক ব্যাটিং তো অনেকেই করে কিন্তু বলের লেংথ দ্রুত পড়তে পারা এবং সে নির্দেশনা মতো ব্যাট চালানো এটা কি সহজাত? নাকি কোনো নির্দিষ্ট কাজের সুফল?

মুনিম: না, পুরোটাই সহজাত না, পর্যাপ্ত অনুশীলন ছাড়া আপনি এরকম পারবেন না। লেংথ পড়তে পারি কীনা এ বিষয়ে আমি আসলে বলতে চাইনা। কিন্তু বিপিএলের আগে আমি অনেক অনুশীলন করেছি। রাজশাহীতে বাংলা ট্র্যাকে সঞ্চয় স্যারের সাথে কাজ করেছি, এরপর ময়নসিংহেও ভালো অনুশীলন করেছি। আর বিপিএলে গিয়েও ম্যাচের আগে আমি মোটামুটি সময় পেয়েছি। ঐ সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।

ক্রিকেট৯৭: একই পিচে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারও ধুঁকছে অথচ আপনি কীনা ধুম ধাড়াক্কা মেরে দিচ্ছেন। আসলে এটা কি মানসিকতার ব্যাপার নাকি ব্যাটিং ধরণের কারণেই আপনার জন্য সহজ কাজটা?

মুনিম: প্রথমে আপনাকে শতভাগ শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে। আর ঐ অনুযায়ী সামর্থ্য তৈরি করতে হবে। সাথে মানসিকভাবেও আপনাকে অনেক শক্ত হতে হবে। আপনার নার্ভ সিস্টেম ঠিকমত কাজ না করলে আপনি পারবেন না। তো সবকিছুরই কম্বিনেশন আরকি ব্যাপারটা।

ক্রিকেট৯৭: আপনার দলে গেইল ছাড়াও, ব্রাভো, মুজিব, লিনটটের মতো বিদেশীরা আছে। তাদের সাথে ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে কোনো কথা হয়েছে? যেমন লিনটটের কাছ থেকে কাউন্টি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা শোনা কিংবা গেইল, ব্রাভোদের কাছ থেকে টি-টোয়েন্টি আইপিএল সহ অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া?

মুনিম: হ্যাঁ অনেক কথা হয়েছে। লিনটট আবার অনেক বন্ধুসুলভ। ও অনেক কিছু শেয়ার করতো, অনেকভাবে অনুপ্রাণিত করতো। মুজিবের সাথেও আমার যথেষ্ট পরিমাণে কথা হয়েছে। আমরাতো একই সময়ে যুব দলে খেলেছি। ওদের কাছ থেকে ইতিবাচক কিছু পেয়েছি। আমি যখন ৪০-৫০ রান করে আউট হয়ে যাই তখন ব্রাভো আমাকে বলছে তোমার মধ্যে প্রতিভা আছে, তোমার উচিৎ এগুলো আরও বড় করা। খুব ভালো ভালো টিপস দিয়েছে সবাই।

ক্রিকেট৯৭: খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন আপনার মধ্যে প্রতিভার ঘাটতি নেই তবে উন্নতির জায়গা আছে অবশ্যই। যা ঠিকঠাক শুধরে নিলে বাংলাদেশকে অনেক দিন সেবা দিতে পারবেন? এখনো পর্যন্ত নিজের দুর্বলতা কি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে?

মুনিম: বিশ্বের যেকোনো সেরা ব্যাটার বলেন বা অ্যাথলেট বলেন সবারই কিছু দুর্বলতা থাকে। কেউ দুর্বলতা ছাড়া না, ওটা নিয়ে একদম শেষ বয়স পর্যন্ত কাজ করে। আমারতো অবশ্যই ঘাটতি আছ কিছু জায়গায়, আমি অবশ্যই এগুলো খুঁজে বের করছি কিছু, আরও বের করার চেষ্টা করতেছি। যতদিন যাবে তত ভুল ত্রুটি আরও বের হবে, ওগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়াই।

ক্রিকেট৯৭: পরিস্থিতি বলছে যেকোনো সময় জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যটা কি থাকবে?

মুনিম: লক্ষ্য বলতে অবশ্যই এটা একটা গর্ব। বাংলাদেশের যত খেলোয়াড় আছে সবারই স্বপ্ন থাকে লাল সবুজ জার্সিটা গায়ে তোলা। আমারও স্বপ্ন ছোটবেলা থেকে। স্বপ্ন ঠিক আছে, স্বপ্নটাকে ধরে রাখতে হলে পারফর্ম করতে হবে সোজা কথা। আমি চেষ্টা করবো, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে। আল্লাহ রিজিকে যা রাখবে সেটাই হবে আমি সেটাই বিশ্বাস করি।

ক্রিকেট৯৭: ক্রিকেট, আপনার বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যত এসব নিয়ে পরিবারের ভাবনা যদি একটু শেয়ার করতেন।

মুনিম: পরিবারের সমর্থন অনেক ছিল। মাঝখানে যখন কিছু হচ্ছিল না তখন আমার আব্বা আম্মা অনেক সমর্থন দিয়ে গেছে। আমাকে মানসিকভাবে ঠিক রাখার অনেক চেষ্টা করেছে। উনারা আমার জন্য বিশেষ কিছু, আমি যখনই খারাপ অনুভব করি ব্যক্তিগতভাবে উনাদের কাছ থেকে স্বান্তনা পাই। যার ফলে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। এ ছাড়া আমার চাচা আছেন, কাজিনরা আছে সবাই অনুপ্রাণিত করে। অনেকদিন পর আসছি বাড়ি, উনারা টিভিতে দেখেছে খেলা। তারা সবকিছু নিয়ে খুশি আপাতত আলহামদুলিল্লাহ।

নাজমুল হাসান তারেক

Read Previous

ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড ঘোষণা

Read Next

রান না হবার দায় ক্রিকেটারদের দিলেন মাহবুব আনাম

Total
0
Share