আইপিএল বদলে দিলো ক্রিকেটের প্রতি শন টেইটের ভালোবাসা

বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ হতে চান শন টেইট
Vinkmag ad

১২ বছরের আন্তর্জাতি ক্যারিয়ার, ৩ ফরম্যাটেই প্রতিনিধিত্ব করেছেন অস্ট্রেলিয়াকে। তবে ক্রিকেট খেলাটার প্রতিই নাকি শন টেইটের ভালোবাসা ছিলো না শুরুতে। অথচ এখন এতোটাই মজেছেন যে কোচিংকে পেশা হিসেবেই নিয়ে নিয়েছেন। ২০১০ সালে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল খেলাকে টার্নিং পয়েন্ট বলছেন সাবেক এই অজি পেসার।

বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ হিসেবে কাজ করছেন টেইট। ‘ক্রিকেট৯৭‘ কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারের নানা বিষয়েই কথা বলেছেন। ছিলো বাংলাদেশের পেসারদের জন্য পরামর্শ, বাংলাদেশের বোলিং কোচ হওয়ার প্রস্তাব না পাওয়া, আফগানিস্তান ক্রিকেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা। নীচে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হলো-

ক্রিকেট৯৭: এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেটই ছিলো যে আপনি ক্রিকেট খেলাটার সেরকম অনুরাগী নন। কিন্তু ২০১৩-১৪ সালের দিকে আপনি নিজেই বলেছেন মানসিকতা বদলেছে, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা, আবেগের জায়গাটা বেড়েছে। এই যে এখন কোচিং পেশায় এলেন এটাও কি সে নতুন ভালোবাসার কারণেই?

শন টেইট: হ্যাঁ আমি ক্রিকেটের সেরকম অনুরাগী কেউ ছিলাম না। ২০০৮-০৯ সালের দিকে আমি ক্রিকেটে ভালোবাসা খুঁজে পাই কিন্তু আমার নিজের শরীর এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট চারপাশে যা ঘটছিলো তাতে আমি মোহভঙ্গে পড়ি, এমনকি কিছু জিনিস অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছিলো, আর মনযোগ ধরে রাখাটা পছন্দ করছিলাম না। তবে সম্ভবত আমি বলতে পারি ২০১০ সালের আইপিএল আমার টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। আমি সেখানে দারুণ মজা পাই। আবার আমি বুঝতে শিখলাম আমি ক্রিকেট খেলতে পারি এবং ক্রিকেট একটা ফানি গেম।

IPL news: Shaun Tait recall can keep Rajasthan top - Shane Watson
সংগৃহীত ছবি

তাই বলা যায় সম্ভবত এটিই (আইপিএল) আমাকে পরিবর্তন করতে এবং কোচিং পেশায় আসতে সাহায্য করেছে, যতটা না আমি খেলতে পছন্দ করতাম তার চেয়ে বেশি। খেলাটার প্রতি আমি এখন খুব আবেগী, এটা স্পষ্টতই খুব সহজ যখন আপনাকে মাঠে গিয়ে খেলতে হবে না। আপনি বসে বসে দেখতে পাবেন। আর তাই আমি টিভিতে এখন প্রচুর ক্রিকেট দেখি যেটায় আগে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না।

ক্রিকেট৯৭: সেরা সময়তো বটেই ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসেও আপনি নাকি শোয়েব আখতারের রেকর্ড (দ্রুততম গতির বল) ভাঙতে চেয়েছেন? কিন্তু সেটাতো হলো না (টেইট দ্বিতীয় দ্রুততম), এতে কষ্ট আছে?

শন টেইট: নাহ, শোয়েবের রেকর্ড ভাঙতে না পারাটা আমাকে কষ্ট দেয় না। আমি আসলে নিয়মিত রেকর্ড করার চেষ্টা কখনো করিনি, আমি যা করেছি তা হলো চেষ্টা আর যতটা দ্রুত সম্ভব বল করে যাওয়া। সুতরাং আপনি বলতে পারেন আমি এমন কেউ ছিলাম না যে রেকর্ডের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটেছি। এটা কেবল ক্রিকেটে ভালো সময় পার করার ব্যাপার ছিলো।

আমি বলতে চাচ্ছি আমি যদি আমার ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকাই আমার মনে পড়ে দুর্দান্ত সব ট্যুর, নতুন নতুন বন্ধু বানানো এমনকি সময়ের সাথে সাথে আমি কথা বলতেও পছন্দ করি বিশ্বজুড়ে যেসব মাঠে আমি খেলেছি সেসব নিয়ে। আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে গেলে এসবই আমাকে আনন্দ দেয়। কিন্তু কোনো সংখ্যা কিংবা এরকম রেকর্ড জাতীয় কিছু না। তো বলতেই পারি শোয়েবের রেকর্ড ভাঙতে পারিনি বলে আমার কোনো কষ্ট নেই।

27tait quick
Image Courtesy- Cricket.com.au

ক্রিকেট৯৭: চোট আপনার ক্যারিয়ারের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। এখনকার পেসারদের জন্য চোট থেকে রেহাই পেতে আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

শন টেইট: চোট আমার ক্যারিয়ারের অনেক বড় একটা অংশ। সামগ্রিকভাবে পেসারদের জন্যও বলা যায়। আমি বলতে চাচ্ছি এটা থেকে রেহাই পাওয়ার বৈজ্ঞানিক কোনো উপায় নেই। আমি মনে করি আপনার নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে নিজের চোট কমানোর জন্য কি কি করা উচিৎ এবং সাধারণ একটা জিম প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনি ক্ষতি কমাতে পারেন।

তবে জিমে যেতে আপনাকে অবশ্যই সেটা উপভোগ করতে হবে। বিরক্তি নিয়ে জিমে যেতে চাওয়া ঠিক না, আপনাকে অনুভব করতে হবে আপনি এটি উপভোগ করতে চান। তাই আমি মনে করি পেসারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই হলো এরকম একটা প্রোগ্রাম বের করা যা তারা সত্যি উপভোগ করে।

ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশের কন্ডিশন পেসারদের জন্য কখনোই আদর্শ নয়। কিন্তু তারা কীভাবে নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে পারে কিংবা নিজেদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে?

শন টেইট: ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ পেস বোলারদের জন্য আদর্শ জায়গা না। কিন্তু মনোভাবে পরিবর্তন করতে হবে। ভালো মানের কিছু পেসার ইতোমধ্যে উঠে আসছে। যারা এমন উইকেটেও সফল, তবে মনোভাবের এই পরিবর্তনটা চালিয়ে যেতে হবে। এখনো যুদ্ধে দ্রুত দৌড়ানো সম্ভব, আর মনোভাব পরিবর্তনের মাধ্যমে সেটা হবে। তাই আমি বলতে চাচ্ছি বাংলাদেশে পেস বোলারদের ক্ষেত্রে সব শেষ কিংবা ভবিষ্যত অন্ধকার এমনটা বলা যাবে না নিশ্চিতভাবে। শুধু প্রয়োজন পেসারদের ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলা।

ক্রিকেট৯৭: বিপিএল অনুশীলনের সময় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ছাড়াও অন্য পেসাররাও দেখেছি আপনার কাছে আসছে। তারা আসলে কি জানতে চায় বা বলে?

শন টেইট: পেস বোলাররা আমাকে দেখে আসছে এরকমটা বলার উপায় নেই। তাসকিন আহমেদের সাথে আমার আগে থেকে পরিচয়। তার সাথে আমার মাঝে মাঝেই চ্যাট হয়। তার বোলিং নিয়ে আমরা আলোচনা করি। তো এখানে এসে দেখা হলেও তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার কিংবা এই টুর্নামেন্ট নিয়ে খুব একটা কথা বলা হয়নি। অন্য কারও সাথে সেভাবে কথা হয়নি। তবে যদি কেউ আমার কাছে কোনো আইডিয়া বা পরামর্শ চাইতে আসে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সেখান থেকে অবশ্যই তাদের সাহায্য করবো।

ক্রিকেট৯৭: বিপিএলে এসেই বাংলাদেশের বোলিং কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিসিবিও বলেছে সংক্ষিপ্ত তালিকায় আপনার নাম আছে। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবির কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন?

শন টেইট: না আমি এখনো বিসিবির কাছ থেকে বোলিং কোচ হওয়ার কোনো প্রস্তাব পাইনি। আমি নিশ্চিতভাবেই এমন কিছুর জন্য আগ্রহী। বিশ্ব ক্রিকেট বিবেচনায় এটি অনেক বড় কাজই। বাংলাদেশের বোলিং কোচ হওয়া অনেক বড় চ্যালেজের ব্যাপারও। তবে আমি আগ্রহী, আমার দিকে আমি প্রস্তুত। আর আশা করছি কোনো সুযোগ আসলে আসতেও পারে।

ক্রিকেট৯৭: আফগানিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন। বিশেষ করে ওটা এমন একটা জায়গা যেখানে লোকজন নির্দিষ্ট কারণে এড়িয়ে যেতে চায়। অথচ আপনি সেখানে ভালো একটা সময় পার করে এলেন। কীভাবে অনুপ্রাণিত হলেন?

শন টেইট: ওখানে কাজ করার অনুপ্রেরণা…আসলে সুযোগ এসেছে তরুণ একগুচ্ছ ছেলেকে নিয়ে কাজ করার আমিও লুফে নিয়েছি। আর এটা খুব ভালো অভিজ্ঞতা আমার জন্য। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের চুক্তি ছিলো, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে। আর পুরোটাই ছিলো দুর্দান্ত। বেশ অসাধারণ কয়েক সপ্তাহ কাটিয়েছি। ওখানকার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আমিও অনেক কিছু শিখেছি।

তাদের বেশ কিছু স্কিলফুল তরুণ ক্রিকেটার উঠে আসছে। আমি কিছু খুব স্কিলফুল তরুণকে পেয়েছি। ফজল হক ফারুকীর কথা বলতে পারি, আমি মনেকরি সবাই তাকে আরও বড় জায়গায় দেখতে পাবে। ইতোমধ্যে তাকে নিয়ে সবাই কথা বলা শুরু করেছেও। সে একজন বাঁহাতি পেসার, সে খুবই চমৎকার একজন। ডেথে দারুণ বল করে, সাথে গতিও আছে। নিকট ভবিষ্যতে সে আফগানদের পরবর্তী তারকা হতে পারে।

ক্রিকেট৯৭: আফগানিস্তানে ল্যান্স ক্লুজনারের (ক্লুজনার তখন আফগানদের প্রধান কোচ) সাথে একসাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে (পেস বোলিং কোচ হিসেবে)। এবারের বিপিএলে সে খুলনা টাইগার্সের কোচ, তার সাথে দেখা, কথাবার্তা হয়েছে?

শন টেইট: হ্যাঁ ল্যান্স ক্লুজনারের সাথে আমার কথা বার্তা হয়েছে। আমাদের কয়েকবার দেখা হয়েছে জিমে। আসলে তাকে জিমে দেখাটাই আশ্চর্যজনক, আমরা দুজনে একসাথে জিম করছি ব্যাপারটাই অন্যরকম, দারুণ। সে অসাধারণ একজন ব্যক্তি, সে আমার ভালো বন্ধুও। এখন তার সাথে উপভোগ করি সবকিছু। সে সত্যি চমৎকার একজন। আর সবসময়ের মতো আমাকে কিছু বেসিক উপদেশতো দিয়েছেনই। আমি আসলে তার সাথে কথা বলাটাই উপভোগ করি।

নাজমুল হাসান তারেক

Read Previous

সিলেটের অধিনায়ক বদলও হয়েছে সবার অগোচরে

Read Next

সৌম্যের ধীরে লয়ে শুরু, পরে চড়াও হওয়া তত্বে উপকৃত হচ্ছে দল

Total
44
Share