

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিনই পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। তবে ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে পারবে কিনা দেখার ছিলো সেটি। আজ (১১ জানুয়ারি) তৃতীয় দিন আড়াই সেশনেই সে উত্তর নিয়ে হাজির বাংলাদেশ দলের ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে ১২৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল হকের দল অলআউট ২৭৮ রানে। ৩ দিনের কম সময়েই ইনিংস ও ১১৭ রানের ব্যবধানে হেরেছে ম্যাচ। স্রোতের বিপরীতে প্রাপ্তি বলতে লিটন দাসের সেঞ্চুরি।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতে আসায় সিরিজ শেষ হল ১-১ সমতায়। এবারই প্রথম নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো সিরিজ না হেরে দেশে ফিরবে টাইগাররা।
প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের করা ৫২১ (ইনিংস ঘোষণা)) রানের জবাবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ সেশনে গুটিয়ে যায় ১২৬ রানে। ৩৯৫ রানে পিছিয়ে থেকে পড়ে ফলো অনে। আজ তৃতীয় দিন নামে ইনিংস ব্যবধান এড়ানোর লক্ষ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে।
১২৮ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে যে ২৭৮ রান তুলতে পেরেছে তার কৃতিত্ব লিটন দাস ও নুরুল হাসান সোহানের। দুজনে ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১০১ রান। জুটির পর নিজেও সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন, গত বছর টেস্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং উপহার দেওয়া এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও দারুণ ধারাবাহিক।
A second Test century for Liton Das👏
Went from 50 to 100 in 37 balls with 8 fours in that time 😯 #SparkSport #NZvBAN pic.twitter.com/WOX85V1WZE
— Spark Sport (@sparknzsport) January 11, 2022
চা বিরতির আগে লিটন-সোহান দুজনে অবিচ্ছেদ্য ছিলেন ২৪ রানের জুটিতে। যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিলো অনায়েসেই পার করে দিবেন দিনের শেষ সেশনও। কিন্তু ড্যারিল মিচেলের বলে ৩৬ রান করা সোহান আউট হলে ভাঙে শতরানের জুটি। এরপর বাংলাদেশ ইনিংসের বাকি সময়টায় প্রাপ্তি বলতে লিটনের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
খাদের কিনারায় দল, লিটন বাস্তবতা মেনে যাননি রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ের দিকে। ৬৯ বলে ফিফটি তোলা লিটন সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ১০৬ বলে। কাইল জেমিসনের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে অবশ্য ইনিংস লম্বা করতে পারেননি, ১১৪ বলে ১৪ চার ১ ছক্কায় থেমেছেন ১০২ রানে।
তার বিদায়ের পর ২৫ বলের বেশি টিকেনি বাংলাদেশ ইনিংস। যেখানে শেষ ব্যাটার এবাদত হোসেনকে ফিরিয়ে বিদায়ী টেস্টের স্মৃতির খোরাক আরও সমৃদ্ধ করেন রস টেইলর। ২৭৮ রানে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেওয়ার পথে কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট কাইল জেমিসনের। নেইল ওয়াগনার নিয়েছেন ৩ উইকেট।
What a way to finish the Test! @RossLTaylor takes his THIRD Test wicket to finish the Test inside 3 days at Hagley Oval. We finish the series 1-1 with @BCBtigers. #NZvBAN pic.twitter.com/2GaL0Ayapr
— BLACKCAPS (@BLACKCAPS) January 11, 2022
এর আগে দিনের প্রথম সেশনে দারুণ কিছুর আভাসই দিয়েছিলো বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে সাদমান ইসলাম ও নাইম শেখ ১৩.৫ ওভার কাটিয়েও ফেলে। যা দেখে মনে হচ্ছিলো ম্যাচ বাঁচাতে না পারলেও ইনিংস হার এড়ানোর কাজটা বোধহয় করতে পারে বাংলাদেশ।
কাইল জেমিসনের করা লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড সাদমান (৪৮ বলে ২১)। উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন টম ব্লান্ডেল। ৩ নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত (৩৬ বলে ২৯) কিউই পেসার ওয়াগনারের দেওয়া শর্ট বলে হয়ে পড়েন আক্রমণাত্মক, কিছু বাউন্ডারি ফেলেও আউট হয়েছেন শর্ট বলেই। ২ উইকেটে ৭৪ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। ধৈর্য্য পরীক্ষা দেওয়া নাইম ৮১ বলে ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন, তার সঙ্গী মুমিনুল হক।
লাঞ্চের পর মুমিনুল-নাইম ব্যাট করছিলেন সাবলীলভাবে। ৩৫তম ওভারে দলীয় সংগ্রহ পেরোয় ১০০। তবে লম্বা সময় অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলার লোভ সামলানো টিম সাউদির করা ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে আর পারলেন না। স্লিপে টম ল্যাথামের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফেরেন ৯৮ বলে ২৪ রান করে।
অধিনায়ক মুমিনুল হক দেড় ঘন্টার মতো উইকেটে কাটান। টেইলরকে ক্যাচ দিয়ে ওয়াগনারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হবার আগে করেন ৬৩ বলে ৩৭ রান। ১ম ইনিংসে টাইগারদের হয়ে লড়েছিলেন ইয়াসির আলি রাব্বি। ১২৬ এর মধ্যে ৫৫ রানই এসেছিল তার ব্যাটে। তবে আজ সুবিধা করতে পারেননি চট্টগ্রামের এই ব্যাটার( ৯ বলে ২)। এরপর লিটন-সোহানের ব্যাটে ৫ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
নিউজিল্যান্ড ৫২১/৬ (১২৮.৫ ওভারে ইনিংস ঘোষণা), ল্যাথাম ২৫২, ইয়াং ৫৪, কনওয়ে ১০৯, টেইলর ২৮, নিকোলস ০, মিচেল ৩, ব্লান্ডেল ৫৭*, জেমিসন ৪*; শরিফুল ২৮-৯-৭৯-২, এবাদত ৩০-৩-১৪৩-২, মুমিনুল ৩-০-৩৪-১
বাংলাদেশ ১২৬/১০ ও ফলো অনে পড়ে ২৭৮/১০ (৭৯.৩), সাদমান ২১, নাইম ২৪, শান্ত ২৯, মুমিনুল ৩৭, লিটন ১০২, রাব্বি ২, সোহান ৩৬, মিরাজ ৩, তাসকিন ৯*, শরিফুল ০, এবাদত ৪; সাউদি ১৭-৬-৫৪-১, জেমিসন ১৮-৪-৮২-৪, ওয়াগনার ২২-৭-৭৭-৩, মিচেল ৬-১-১৮-১, টেইলর ০.৩-০-০-১
ফলাফলঃ নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ১১৭ রানে জয়ী, সিরিজ ১-১ এ সমতা
ম্যাচসেরাঃ টম ল্যাথাম (নিউজিল্যান্ড)
সিরিজসেরাঃ ডেভন কনওয়ে (নিউজিল্যান্ড)।