

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে প্রথম দিন থেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ। প্রথমদিন টম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ের ব্যাটে পিষ্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন বল হাতে টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের তোপে দিশেহারা। দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশন কোনোভাবে নিজেদের করতে পারলেও ল্যাথামের ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো ইনিংসে রানের পাহাড়ে চাপা পড়েছে সফরকারীরা।
ল্যাথামের ২৫২ কনওয়ের ১০৯ রানের পর টম ব্লান্ডেলের অপরাজিত ৫৭ রানে চড়ে ৬ উইকেটে ৫২১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে চা বিরতির আগে ১১ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পেয়েই লণ্ডভণ্ড টাইগার টপ অর্ডার। টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের জোড়া শিকারে ২৭ রান তুলতেই নেই ৪ উইকেট।
শুরুটা হয়েছিল সাদমানকে দিয়ে। বোল্টের অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে সাদমান ক্যাচ দেন তৃতীয় স্লিপে। ৭ রানে শেষ তার ইনিংস। এরপর অভিষিক্ত নাইম শেখের পালা। সাউদির মুখোমুখি প্রথম বলটিই খেললেন বাজে ফুটওয়ার্কে। লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বল চালাতে চাইলেন।
ওই যাত্রায় বেঁচে গেলেও পঞ্চম বলে পারেননি। শরীরের ওপর তাক করা বাউন্স লাফিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটে টেনে আনেন। দুই ওপেনার নেই তিন ওভারেই।
৬ষ্ঠ ও ৭ম ওভারে আবারো উইকেট। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল ফিরলেন পরপর দুই ওভারে। বোল্টের সুইং ডেলিভারীতে ব্যাট ছুঁইয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন ৪ রান করা শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল (০) সাউদির ভেতরে ঢোকানো বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন।
সমান ৮ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন লিটন দাস ও ইয়াসির আলি রাব্বি। বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে আরও ৪৯৪ রানে।
এর আগে ১ উইকেটে ৩৪৯ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিলো নিউজিল্যান্ড। ৯৯ রানে কনওয়ে ও ১৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন ল্যাথাম। আগেরদিন ২০১ রানের জুটিতে অবিচ্ছেদ্য ছিলেন দুজনে।
আজ দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনেই ৪ উইকেট হারায় কিউইরা।
দিনের প্রথম বলেই চার মেরে সেঞ্চুরি তুলে নেন কনওয়ে। তবে রান আউটে কাটা পড়ে সেঞ্চুরিকে টেনে নিতে পারেননি বেশি দূর। ক্যারিয়ারের ৯ম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় সেঞ্চুরি। থেমেছেন ১৬৬ বলে ১২ চার ১ ছক্কায় ১০৯ রানে। তাতে ভাঙে ল্যাথাম-কনওয়ের ২১৫ রানের জুটি।
দিনের ১১তম ওভারেই ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান ল্যাথাম, যা তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা রস টেইলরের সাথে ল্যাথামের জুটি ৪৮ রানের। টেইলরকে (৩৯ বলে ২৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ইনিংসজুড়ে সবচেয়ে খরুচে এবাদত।
দ্রুত ফিরতে পারতেন ল্যাথামও, তাসকিনের শরীর তাক করা শর্ট অব লেংথ বল ব্যাটের কানায় লেগে ফিরতি ক্যাচ হয়। কিন্তু দৌড়ে গিয়েও তা লুফে নিতে পারেননি তাসকিন। নতুন ব্যাটার হেনরি নিকোলসকে খালি হাতে ফেরান এবাদত। কট বিহাইন্ডের আবেদনে শুরুতে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল বাংলাদেশ।
৯ রানের ব্যবধানে ড্যারিল মিচেলকে ফেরান শরিফুল, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৩ রান করে। ফলে ১২ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ৫ উইকেটে ৪২৩ রানে পরিণত হয় কিউইরা। মিচেলের আউটের পরই লাঞ্চ বিরতিতে যায় দুই দল। ২১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ল্যাথাম।
লাঞ্চের পর দ্রুত রান তোলাতে মনযোগ দেয় কিউইরা। ৪২ বলেই জুটিতে ৫০ রান যোগ করে ফেলে টম ল্যাথাম ও টম ব্লান্ডেল। জুটির ফিফটির পর আরও বেশি তেড়েফুড়ে খেলেন দুজনে। মুমিনুল হকের করা ইনিংসের ১২৬তম ওভারেতো ল্যাথাম টানা ৩ বলে হাঁকান চার-ছক্কা।
তাতে ৩৭২ বলে ছুঁয়ে ফেলেন ব্যকগিতগ ২৫০ রানও। যদিও পরের বলে আবারও স্লগ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ইয়াসির আলি রাব্বিকে। ৩৭৩ বলে ৩৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ২৫২ রানের ইনিংসটি। ভাঙে ব্লান্ডেলের সাথে ৭৬ রানের জুটি।
ল্যাথাম ফিরলেও ঝড়ো গতিতে রান তোলা থেকে বিরত হননি ব্লান্ডেল। ৫৬ বলে তুলে নেন ফিফটি, তার ফিফটির পর অবশ্য ইনিংস ঘোষণা করতে বেশিক্ষণ সময় নেয়নি কিউই দলপতি। ৬ উইকেটে ৫২১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। ৬০ বলে ৫৭ রানে ব্লান্ডেল ও ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন কাইল জেমিসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (২য় দিন, চা বিরতি পর্যন্ত):
নিউজিল্যান্ড ৫২১/৬ (১২৮.৫ ওভারে ইনিংস ঘোষণা), ল্যাথাম ২৫২, ইয়াং ৫৪, কনওয়ে ১০৯, টেইলর ২৮, নিকোলস ০, মিচেল ৩, ব্লান্ডেল ৫৭*, জেমিসন ৪*; শরিফুল ২৮-৯-৭৯-২, এবাদত ৩০-৩-১৪৩-২, মুমিনুল ৩-০-৩৪-১
বাংলাদেশ ২৭/৪ (১১), সাদমান ৭, নাইম ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ০, লিটন ৮*, ইয়াসির ৮*; সাউদি ৬-৩-১৬-২, বোল্ট ৫-২-১১-২
বাংলাদেশ ৪৯৪ রানে পিছিয়ে।