

মাউন্ট মঙ্গানুইতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর ক্রাইস্টচার্চে নানা কারণেই চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করবে তার আভাস আগেই পাওয়া যাচ্ছিলো। তবে ঘাসে মোড়ানো সবুজ উইকেটের প্রত্যাশা যে নিমিষেই হাওয়া হবে কে জানতো। হ্যাগলি ওভালে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়াকে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক টস জিতে বরং বিপাকেই আছেন। সারাদিনের সাফল্য বলতে ৩ সেশনে মাত্র ১ উইকেট, বাকি গল্পের নায়ক টম ল্যাথাম।
পার্শ্ব চরিত্র হয়ে টাইগার বোলারদের দুঃস্বপ্নের মতো একটা দিন উপহার দিয়েছেন উইল ইয়াং, ডেভন কনওয়ে। প্রথম দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৩৪৯ রান। ওপেনার ইয়াং ৫৪ রানে আউট হলেও অধিনায়ক ল্যাথাম ও কনওয়ে অপরাজিত আছেন যথাক্রমে ১৮৬ ও ৯৯ রানে।
১ উইকেটে ২০২ রান তুলে চা বিরতিতে যায় কিউইরা। ১১৮ রানে ল্যাথাম ও ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন কনওয়ে।
চা বিরতির পরও কোনো প্রকার অস্বস্তি ছাড়া রান তুলতে থাকে কিউরা। ১৯৯ বলে দেড়শো পেরোন ল্যাথাম। ফলে ক্যারিয়ারের ১২ সেঞ্চুরির ৬ টিকে রূপ দিয়েছেন ১৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংসে। ততক্ষণে কনওয়ের সাথে জুটিতে যোগ হয়ে যায় ১০০ এর বেশি রান।
কিছুটা ধীরে লয়ে শুরু করা কনওয়েও সময়ের সাথে সাথে রান তুলেছেন সাবলীলভাবে, সুইপ, রিভার্স সুইপ করেছেন অনায়েসে, ৮৩ বলে পৌঁছেছেন ফিফটিতে। ফিফটির পর কনওয়ে হেঁটেছেন সেঞ্চুরির দিকে, ল্যাথাম ডাবলের পথে।
তবে দুজনেই দিন শেষ করেছেন অপেক্ষা নিয়ে। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে কনওয়ে, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরে ল্যাথাম। ১৪৮ বলে ১০ চার ১ ছক্কায় ৯৯ কনওয়ের, ২৭৮ বলে ২৮ চারে ১৮৬ ল্যাথামের ব্যাটে।
হ্যাগলি ওভালের উইকেট ঘাসে মোড়ানো থাকবে অনুমেয়ই। আর সে সুবিধা কাজে লাগাতে টস জিতে মুমিনুল হক নিয়েছেন ফিল্ডিং। একাদশে আসে দুই পরিবর্তন, দুইটিই ইনজুরির কারণে।
মাহমুদুল হাসান জয়ের আঙ্গুলের ইনজুরিতে টেস্ট অভিষেক হয় মোহাম্মদ নাইম শেখের। ম্যাচের আগে ইনজুরিতে পড়া মুশফিকুর রহিমের বদলে সেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন নুরুল হাসান সোহান।
অন্যদিকে কিউই একাদশে কেবল একটি পরিবর্তন। স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র’র জায়গায় খেলছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ড্যারিল মিচেল।
উইকেটে ভালো ঘাস ছিলো, শুরু থেকেই পাওয়া যাচ্ছিলো ছোট ছোট সুইং। তবে তাসকি-শরিফুল জুটি বেঁধে করা প্রথম ৮ ওভারে খুব একটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারেনি কিউই দুই ওপেনার ল্যাথাম-ইয়াংকে।
ইনিংসের ৯ম ওভারে আক্রমণে আসা এবাদত ভালোই ভোগান টম ল্যাথামকে। ওই ওভারে দুইবার কিউই দলপতির বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন করে আম্পায়ারের সাড়াও পেয়ে যান। কিন্ত দুইবারই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যায় ল্যাথাম, উইকেট হিটিং হয়নি একবারও।
ওয়ানডে মেজাজে খেলা ল্যাথাম নিজের ফিফটি তুলে নেন ৬৫ বলে। লাঞ্চের আগে কিউইদের স্কোরবোর্ডে ৯২ রান। ল্যাথাম অপরাজিত ৬৬ রানে ও ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন ইয়াং।
লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই এবাদত ফেরাতে পারতেন ইয়াংকে। ২৬ রানে ইয়াংয়ের সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন দ্বিতীয় স্লিপে থাকা লিটন দাস।
সময়ের সাথে টাইগার বোলারদের হতাশা বাড়াতে থাকেন ল্যাথাম-ইয়াং। দুজনে গড়েছেন হ্যাগলি ওভালে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ছিলো ১২১ (জিত রাভাল ও টম ল্যাথাম)।
৩৫ তম ওভারের প্রথম স্পিন আক্রমণে আনে টাইগার দলপতি। তবে করতে পারেননি কোনো রকম সুবিধা। মেহেদী হাসান মিরাজের করা ওই ওভারে চার মেরে ফিফটি ছুঁয়েছেন ইয়াং।
ফিফটির পর দ্রুত ফেরেন ইয়াং, বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন শরিফুল ইসলাম। তাতে ভাঙে ল্যাথামের সাহে ১৪৮ রানের জুটি, তার ব্যাটে ৫৪ রান।
ব্যক্তিগত ৯৪ রানে ফিরতে পারতেন ল্যাথামও, শরিফুলের শর্ট বলে ঠিকঠাক সংযোগ হয়নি। বল বেশ কিছুক্ষণ বাতাসে থাকলেও তালুবন্দী করার মতো কেউ ছিলোনা উইকেটের আশেপাশে।
৪৫ তম ওভারে ৩ অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার ছুঁয়েছেন ল্যাথাম। ১৩৩ বলে হাঁকানো সেঞ্চুরিটি কিউই অধিনায়কের ক্যারিয়ারের দ্বাদশ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয়।
চা বিরতির আগে দলীয় সংগ্রহ ১ উইকেটে ২০২ রান। ১১৮ রানে ল্যাথাম, ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন কনওয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (১ম দিন শেষে):
নিউজিল্যান্ড ৩৪৯/১ (৯০), ল্যাথাম ১৮৬*, ইয়াং ৫৪, কনওয়ে ৯৯*; শরিফুল ১৮-৬-৫০-১।