

সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের ক্যারিয়ারের শুরুতে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করেছেন অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া সিডন্স আবারও ফিরছেন ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে। এতদিনে অনেক কিছুই বদলেছে টাইগার ক্রিকেটে, সাকিব-তামিমরা আছেন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসবেন সিডন্স। তার আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘ক্রিকেট৯৭‘ কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এবারের মিশনে নিজের লক্ষ্যের কথা। যদিও এখনো বিসিবি কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকা না দেওয়ায় পরিকল্পনা করতে পারছেন না।
এর বাইরে কথা বলেছেন গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে পরিবর্তন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট জয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ব্যাটারদের প্রস্তুত করতে নিজের দর্শন নিয়েও। পাঠকদের জন্য নিচে তা তুলে ধরা হলো-
ক্রিকেট৯৭: ১১ বছর পর আবারও বাংলাদেশে ফিরছেন, কেমন লাগছে?
সিডন্স: আমি সব সময় আশায় ছিলাম একদিন বাংলাদেশে ফিরতে পারি। আমি খুবই রোমাঞ্চিত সেখানে ফিরে কাজ করতে, খেলোয়াড়দের উন্নতিতে সাহায্য করতে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে।
ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগেই আপনার নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। ফলে এই সিরিজ দেখেই নিজের ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা সাজানো শুরু করেছেন নিশ্চয়ই?
সিডন্স: আমি এখনো নিশ্চিত না যে কোন ক্রিকেটারদের নিয়ে আমার কাজ করতে হবে। তবে আমি শুরু করতে মুখিয়ে আছি। আমি তাকিয়ে আছি বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিতে সাহায্য করতে, এটাই আমার মূল লক্ষ্য এখন।
ক্রিকেট৯৭: যতটুকু জানি আপনার কাজ শুধু জাতীয় দল কেন্দ্রিক হবেনা, হয়তো তৃনমূল, বয়সভিত্তিক কিংবা পাইপলাইন নিয়েও কাজ করতে হবে। সেসব জায়গায় কাজ করতে আপনি প্রস্তুত? উপভোগ করবেন?
সিডন্স: আমি এখনো নিশ্চিত না আমার ভূমিকা কি হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি ঢাকায় পৌঁছাতে অধীর আগ্রহে বসে আছি। আর যেকোনো পর্যায়ে কাজ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিতে নিজেকে অংশীদার করতে চাই।
ক্রিকেট৯৭: গত ১১ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক কিছুই বদলেছে। কি ধরণের উন্নতি আপনার নজরে এসেছে?
সিডন্স: আমি বাংলাদেশ দলের কিছু ম্যাচ দেখেছি এবং কিছু পারফরম্যান্স দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। আমি যখন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব ছেড়ে এসেছি এরপরের সময়টায় র্যাঙ্কিংয়ে খুব বেশি উন্নতি হয়নি। আমি আশা করি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয় খেলোয়াড়দের এখন প্রকৃত বিশ্বাসটা দিবে। আর এ থেকেই তারা শিখবে কীভাবে বিদেশের মাটিতে লড়তে হয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারাবাহিক হতে হয়।
ক্রিকেট৯৭: আগেরবার কাজ করেছেন প্রধান কোচ হিসেবে, এবার আসছেন ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে। প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার নাম উচ্চারিত হয় সাকিব, তামিম, মুশফিকদের মতো ব্যাটারদের ব্যাটিং উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন বলে। এবার যেহেতু শুধু ব্যাটিং নিয়েই কাজ, নিশ্চয়ই আরও বেশি উপভোগ করবেন?
সিডন্স: ক্রিকেটে ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং হলো আমার প্যাশন। ব্যাটারদের আন্তর্জাতিক লেভেলে খেলতে কি প্রয়োজন সে ব্যাপারে সাহায্য করতে আমি খুব পছন্দ করি। ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে সেরা বোলারদের বিপক্ষে খেলতে স্কিলের দিক থেকে অনেক পোক্ত হতে হয় এবং এটা শিখতে সময়ও লাগে। আমি খেলোয়াড়দের এসব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানাতে এবং দক্ষ করে গড়ে তুলতে সঠিক নির্দেশনা দিতে চাই।
ক্রিকেট৯৭: আগে বাংলাদেশে কাজ করার কারণে এখানকার ক্রিকেট সংস্কৃতি সম্পর্কে আপনার ভালোই ধারণা আছে। সংস্কৃতি পরিবর্তন খুব একটা সহজ কাজ নয়। এর বাইরে গিয়েও বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতিতে আপনার যদি বিশেষ কোনো পরামর্শ যদি থাকে…।
সিডন্স: আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো ধারাবাহিক হওয়া এবং যখন খেলাটা কঠিন হয়ে যায় সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করা। টেস্ট দল সম্প্রতি সেটা করে দেখিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশকে এটা প্রতিদিন করতে হবে যদি বিশ্বের বড় দলগুলোকে ধারাবাহিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই। সব সময় সেরাদের বিপক্ষে জিততে হলে সিস্টেম ও নিজেদের স্কিলের উপর আমাদের অগাদ বিশ্বাস থাকতে হবে।

ক্রিকেট৯৭: সাকিব, তামিমদের ক্যারিয়ার শুরুর সময়টায় আপনি বাংলাদেশের প্রধান কোচ ছিলেন। এখন যখন ভিন্ন ভূমিকায় আবার আসছেন তখন তাদের ক্যারিয়ার শেষদিকে। এই লম্বা বিরতির সময়টায় তাদের সাথে যোগাযোগ ছিল কোনোভাবে?
সিডন্স: তাদের সাথে আমার খুব একটা যোগাযোগ হয়নি, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের সাথেই যুক্ত আছি। যেমন ইমরোজ (জুনায়েদ সিদ্দিকী), মেহরাব (মেহরাব হোসেন জুনিয়র), শাহরিয়ার নাফিস। আমি মুখিয়ে আছি তখনকার আমার পুরোনো বন্ধুদের সাথে আবারও দেখা করতে। আমার নিয়োগের পরই তাদের অনেকে আমাকে কোনো না কোনোভাবে স্বাগত জানিয়েছে।
ক্রিকেট৯৭: আপনি তাদের যেখানে রেখে গেছেন সেখান থেকে প্রত্যাশিত জায়গায় তারা যেতে পেরেছে?
সিডন্স: আমি যখন ছেড়ে আসি তখন দলের অবস্থান যা ছিলো তাতে আমি সত্যি খুব খুশি ছিলাম। আমরা বেশ কিছু বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরি করেছি যারা নিয়মিত বিশ্ব মঞ্চে পারফর্ম করছে। আমাদের এখন পুনরায় এটাই করতে হবে এবং সেখানে জাতীয় দলের আশেপাশে প্রচুর প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, প্রয়োজন শুধু সেটিকে সঠিক প্রক্রিয়ায় সামনে আনা।
ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশ জাতীয় দলে বর্তমানে অ্যাশওয়েল প্রিন্স ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন। এদিকে আপনাকে ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। সবমিলিয়ে দুজনের কাজের সমন্বয় করতে হতে পারে, ব্যাপারটিকে কতটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন?
সিডন্স: আমি পুরোপুরি নিশ্চিত না যে কীভাবে আমরা দুইজন একত্রিত হয়ে কাজ করবো। তবে এতটুকু নিশ্চিত যে বিসিবির একটা পরিকল্পনাতো অবশ্যই আছে আর আমি সেই পরিকল্পনাতেই কাজ করবো। আমি এর আগে সফলভাবে অনেক কোচের সাথে কাজ করেছি, আমি আশা করি এখানেও আলাদা কিছু হবে না।
ক্রিকেট৯৭: বাংলাদেশে ফরম্যাট ভিত্তিক ব্যাটারের বেশ অভাব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দক্ষ ব্যাটার খুবই জরুরী। এসব জায়গায় নিশ্চয়ই নজর দিবেন?
সিডন্স: ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে ভালো করতে ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা ও মানসিকতা প্রয়োজন। যদিও কিছু খেলোয়াড় আছেন যারা ৩ ফরম্যাটেই সমান তালে খেলতে পারে, এমন সংখ্যাটা খুবই বিরল। এখন এটাই বের করতে হবে আলাদা আলাদা ফরম্যাটের জন্য সেরা কারা।
ক্রিকেট৯৭: গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কতটা অনুসরণ করেছেন? এই সময়ের মানদন্ডে আপনার দর্শন কি?
সিডন্স: আমি কিছু ম্যাচ ও সিরিজ দেখেছি তবে খুব ভালোভাবে না। তবে এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা টেস্ট ম্যাচটা বেশ ভালোভাবে দেখেছি আর তারা যেভাবে জিতেছে সত্যি অসাধারণ। বোলিং ইউনিট আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে দুইবার অল আউট করা দুর্দান্ত ব্যাপার। আমি আগেও যেটা বলেছি আমার চিন্তা এখন দলটিকে পারফরম্যান্সের দিক থেকে ধারাবাহিক করা যাতে একটি ভালো দল হিসেবে নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং বেশি বেশি জিতবে।